দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃতু্য হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার কারণে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে ভয়ংকর রূপে ফিরছে এডিস মশা। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা না থাকায় মশা নিধন কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গুর 'পিক সিজন' হতে পারে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেনের মতে, বৃষ্টির ধরন বদলে যাওয়া, গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুর একই সেরোটাইপ (ধরন), তাপমাত্রা বেশি থাকায়, এডিস মশা প্রজননের উপযোগী না হওয়া এই তিন কারণে এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর সংক্রমণ গত বছরের তুলনায় কম। তবে সংক্রমণের তুলনায় মৃতু্য হার বেশি। তাই বলে আত্মতৃপ্তির কারণ নেই। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের এখন এডিস মশা নিধনে সক্রিয় হওয়া জরুরি। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও ভাবতে হবে। হাসপাতালকেন্দ্রিক চিন্তা না করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত বর্ষাপরবর্তী সময়, অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবর ডেঙ্গুর 'পিক সিজন' হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, এডিস মশার ঘনত্ব অনুযায়ী এই সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদ ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে গত এক দশকে (২০১৪-২৩) সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর 'পিক সিজন' হয় পাঁচবার। অক্টোবরে তিনবার, আগস্ট ও নভেম্বরে একবার করে পিক সিজন হতে দেখা গেছে। অথচ এক সময় ধারণা করা হতো, বর্ষাকাল মানেই ডেঙ্গুর মৌসুম। কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলে যাওয়ার সময় এসেছে। কারণ এখন শুধু বর্ষা নয়, শীত-গ্রীষ্মেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।
গত মাসে এডিস মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ ব্যাপারে উদাসীনতার কোনো অবকাশ নেই।
মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। সঠিক উদ্যোগের অভাবে দিন দিন এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে।
এডিস মশা যেহেতু প্রধান বাহক সেহেতু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য এডিস মশা জন্ম ও বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। বাসা বাড়িতে যাতে দীর্ঘদিন পানি জমে না থাকে, বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনের নজরদারি বাড়াতে হবে।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডেঙ্গু রোগের প্রভাব কমবে না। যেহেতু এডিস মশা সংক্রমিত মশা। এতে এক রোগী থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই সংশ্লিষ্টদের সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গুসংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।