বর্তমানে একটি দেশের শক্তিমত্তা পরীক্ষা করতে গেলে অর্থনৈতিক শক্তির দিকটা সবার আগে দেখা হয়, কেননা সামরিক দিক পরিচালনা করতেও অর্থ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। যে দেশ যত বেশি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, সে দেশ তত বেশি বিশ্বে প্রভাব রাখছে। এই অর্থনীতির মধ্যে এক বিষফোঁড়া হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি অর্থনীতিকে সচল রাখতে বাধা দেয়। দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সম্পদের পাহাড় গড়ে, অথচ এই সম্পদের মধ্যে দেশের নিম্ন শ্রেণির মানুষেরও অংশ থাকে। এভাবেই গরিবদের অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় কতিপয় বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দুর্নীতির নেতিবাচক ফলাফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা; ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, অর্থ-সম্পদ গুটিকয়েক মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া, ভোক্তার ভোগ ব্যয়ে অর্থ খরচের গতিহীনতা, সরকারের কর আহরণে ব্যত্যয় ঘটা এবং দুর্নীতির অর্থ পাচার। ফলে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যায়। মোদ্দাকথা, দুর্নীতি উন্নয়নকে গ্রাস করে। এই দুর্নীতি রাষ্ট্র ও সমাজে কীভাবে এবং কেন আসে সেদিকটাও দেখা দরকার। দুর্নীতির প্রধানতম কারণ হলো নীতিহীন লোভ। মানুষ জন্মগতভাবে অনেকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায় এর মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো লোভ। লোভ আরও বিস্তৃতি লাভ করে যখন লোভ হয়ে পড়ে নীতিহীন। আইনের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন থেকে দূরে থাকাও দুর্নীতির কারণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি কেউ যদি এসএসসি পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়ত তাহলে সে পরীক্ষার হল থেকে আর বাড়ি না এসে আত্মগোপনে চলে যেত। অথচ বর্তমানে দেখা যায় শিক্ষক কিংবা অভিভাবকরাই সন্তানের জন্য নকল সরবরাহ করে। এর মানে হলো লোভকে ভয় দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি বরং দুর্নীতি সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছে, অর্থাৎ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইন অথবা ধর্ম দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। একই ভাবে আমরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য অনিয়মের উদাহরণ দেখতে পাই। অনিয়মের কারণেও দুর্নীতি বেড়ে যায়। অনিয়মের আরেক নাম হলো দুর্নীতি। সরকার এবং দেশ ও সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কর্তব্য হওয়া উচিত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোয় যোগ্য ব্যক্তি পদায়ন করে এগুলোয় সততা ও নিরপেক্ষতার লালন করা। সুশাসন ও আইনের শাসনই হলো দুর্নীতি দমনের চাবিকাঠি। এর পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে, দেশ ও জাতির কল্যাণের কথা চিন্তা করে দুর্নীতিমুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই পারে দুর্নীতির কালো হাত ভেঙে দিতে, দেশের উন্নয়নের পথে বাধা প্রদানকারী এই দুর্নীতিকে সমূলে উপড়ে ফেলতে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
মোহাম্মদ আব্দুর রহমান
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়