রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা আধুনিক ও জীবনমুখী?

শিক্ষা ক্ষেত্রে যে সংকট ও দৈন্য বিদ্যমান তাকে হঠাৎ করে নিরসনের বড় একটা সুযোগ নেই। তবে সংকট নিরসন হবে না, এটা মানা যায় না। যে কোনো সরকারের জন্যই এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানের এ পরিবর্তনের সরকার শিক্ষার গুণগত মান বা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন ও সংস্কারে প্রয়াসী হলে শিক্ষার অনেকটাই উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা আধুনিক ও জীবনমুখী?

ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যথানের ফলাফল হিসেবে দীর্ঘদিনের ফেসিস্ট সরকারের অবসানের পর গত ৫ আগস্ট প্রফেসর ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বে এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চেতনায় ২০২৪ এবং হৃদয়ে বাংলাদেশ তারুণ্যের এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতার আনন্দ উৎসব মুখরিত পরিবেশে দেশ পুনর্গঠনের অঙ্গীকারে এ ছাত্র-জনতার এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়। রাতারাতি অনেক কিছু হয়তো সম্ভব হবে না। কেননা, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই জমে আছে আর্বজনার স্তূপ। তাই এই পুঞ্জীভূত আর্বজনার স্তূপ দূরীকরণ হবে এক মহিরুহের কাজ। আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এ সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করাই হচ্ছে বীরের ধর্ম। ১৯৭১ সাল থেকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো সংস্কার হয়নি। আমরা যে তিমির থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, সে তিমিরেই ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। বর্তমান সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা এবং শিক্ষা সচিব অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞতার ধার ও ভারে সমৃদ্ধ। তাদের যুক্তি, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞায় শিক্ষার কালিমা দূরীভূত হবে। সুপার স্মার্ট সোসাইটি ও শিক্ষা ব্যবস্থার বিনির্মাণ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক, শিক্ষার সর্বজনীনতা এবং কর্ম ও আধুনিকতায় বৈষম্যমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠানিকতা প্রদান করা হবে- এই প্রত্যাশায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণার্থে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা ও সুপারিশসহ নিম্নের মতামত নিবন্ধটি তুলে ধরলাম :

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষাই মানুষকে তার মনুষ্যত্ব অর্জনে সাহায্য করে। শিক্ষা মানুষকে জ্ঞান দিয়ে সম্প্রীতি বাড়ায়, কুসংস্কার দূর করে সমাজকে আলোকিত করে। অধুনা শিক্ষাকে দুটো শ্রেণিতে ভাগ করা হচ্ছে- সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষা। বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষার অগ্রযাত্রার ফলেই পৃথিবী দ্রম্নত উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে। তাই কর্মমুখী শিক্ষা উন্নতি ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। জাতীয় মৌলিক যেসব বিষয়ে কোনো পরিবর্তন হয়নি, তার মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যতম। জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টির ব্যাপারে রাষ্ট্রযন্ত্র যারা পরিচালনা করেন, যারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার কলকাঠি নাড়েন, তাদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। অথচ কে না জানে যে, মানুষ গড়ার হাতিয়ার হলো শিক্ষা ব্যবস্থা। অতি পুরাতন একটি বাক্য আমাদের মহারথীরা প্রায়ই বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। সত্যিকারার্থে শিক্ষা শুধু মানুষ গড়ার হাতিয়ার নয়, জাতি গঠন বা নির্মাণের অপরিহার্য হাতিয়ারও বটে। একটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া একটি জাতি নির্মাণ কখনো সম্ভব নয়। শিক্ষাসংকট দূর করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য দুয়েকবার চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। তবে কখনো আন্তরিকতার অভাবে বা কোথাও বা গোলামি যুগের মানসিকতার কারণে সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। শুধু যে সফল হয়নি তাই নয়, বরং অবস্থা আগের চাইতে আরও জটিল এবং বিপজ্জনক করা হয়েছে।

আমাদের শিক্ষা উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি বিআইডিএসের এক জরিপে দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশ বেকার থাকছে। কোনো কাজ পাচ্ছে না। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি তৈরি করতে পারছে না। এ অবস্থায় মানবসম্পদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন আশা করা যায় না। সে ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন কৌশল বদলাতে হবে। যে উন্নয়ন ধনীকে আরও ধনী করে এবং গরিবের অবস্থান আরও দুর্বল করে, সেই উন্নয়ন প্রত্যাশিত নয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের গৃহীত সব সরকারি কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দরিদ্র মানুষের হক নিয়ে কেউ নয় ছয় করে পার না পায়। একই সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে প্রত্যেক শিক্ষিত মানুষ কাজ পায়।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা আধুনিক ও জীবনমুখী? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা সর্বজনীন? শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বজনীনতা ছাড়া আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈষম্যমুক্ত জাতি গঠন সম্ভব হবে না। আমাদের শিক্ষা কতটা জীবন ও কর্মমুখী? জীবন ও কর্মমুখী শিক্ষা ছাড়া আধুনিকতায় উত্তরণ সম্ভব হবে না। অধিকন্তু জীবন ও কর্মমুখী শিক্ষা হবে বিপস্নবোত্তর সোসাইটি-৫ গঠনের উত্তম হাতিয়ার। সোসাইটি-৫ সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। কর্মমুখী ও সৃজনশীল শিক্ষার ঘাটতিতে সমাজে ক্রমেই শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। বেকারত্বের এ চাপে দেশে ক্রমেই দারিদ্র্য প্রকট হয়ে উঠছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দিয়ে প্রতিকারার্থে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং অসহায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্ব ও দুরবস্থা মোচনে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপে জাতিকে অভিশাপমুক্ত করবে- এটাই সবার আশা। আমরা এখন সোসাইটি-৪ এ আছি। এটা হচ্ছে ইনফরমেশন সোসাইটি। উন্নত স্বাবলম্বী জাতি রাষ্ট্র গঠনের জন্য সোসাইটি-৫ এর প্রয়োজন হবে। যাকে আমরা বলি সুপার স্মার্ট সোসাইটি। কারণ এই সোসাইটি-৫ মানুষ, প্রযুক্তি এবং প্রকৃতি- এ তিনটি বিষয়ের মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি নতুন সমাজ তৈরি করবে। এ সমাজটা কেমন হবে তার ওপর ভিত্তি করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে সাজাতে হবে। আসুন, একটি সুন্দর শিক্ষা নীতিমালা প্রস্তুত করে এবং দক্ষ মানবসম্পদের বিকাশ ঘটিয়ে আমাদের জাতীয় মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করি।

শিক্ষার মূলভিত্তিই হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। আর প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে দেশের সব মানুষকে নূ্যনতম শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রথম সোপান। প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র সমাপনী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস এবং এ-পস্নাস প্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়লেও মান বাড়ছে না। সার্বিক বিচারে শিক্ষা সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। অভিভাবকদের ব্যাপক অসচেতনতা রয়েছে। অনেকের ধারণা, পড়ালেখা করে গরিব মানুষের সন্তানদের চাকরি পাওয়া কঠিন। তা ছাড়া শিক্ষার গুরুত্ব বা সুদূরপ্রসারী ফল নিয়ে চিন্তা করার মতো কল্পনাশক্তিও তাদের নেই। একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য যে জনবল প্রয়োজন সেই তুলনায় সংখ্যাটা অপ্রতুল। শিক্ষকদের পৃথক বেতন কাঠামো করে তাদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করতে হবে। প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাসে অন্তত একদিন একজন সফল ব্যক্তিত্বকে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য স্বপ্ন দেখাতে হবে এবং জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। উপরন্তু মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকারি প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে তারা ভালো অবস্থানে নেই। আর্থিক অভাব-অনটন ও দুশ্চিন্তায় তাদের সময় কাটাতে হয়। এই পরিস্থিতিতে তারা তাদের পেশাগত মানোন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে পারছেন না। এই স্তরের শিক্ষকরা নানাবিধ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। এমনকি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি ও সুবিধাদির ক্ষেত্রেও বড় রকমের বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সব স্তরের শিক্ষকদের আলাদা ও মর্যাদাসম্পন্ন বেতন কাঠামোর আওতায় আনা আবশ্যক। এছাড়া উপযুক্ত দক্ষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে দক্ষ শিক্ষকের অভাব প্রকট। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ শিক্ষার মান উন্নয়নকে চরমভাবে ব্যাহত করে। শিক্ষক সমাজকে দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে জড়িয়ে না পড়লেই ভালো। তাদের দলীয় প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রি-প্রাথমিক ধারায় আমাদের শিশুদের বড় কিছু উপকার হয় বলে আমি মেনে নিতে পারি না। প্রি-প্রাথমিক শিক্ষা পূর্বের মতো পারিবারিক পর্যায়ে সীমিত থাকতে পারে এবং পূর্বেকার নিয়ম অনুযায়ী আলাদা আলাদা সিলেবাস অনুসরণপূর্বক পরীক্ষাসমূহ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে বার্ষিক পরীক্ষাটিও আগের মতো পুরো বইভিত্তিক না হয়ে আলাদা সিলেবাস অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির ফলাফল নির্ধারিত হবে সব পরীক্ষার কিউমিলেটিভ ফলাফলের ওপরে। অধিকন্তু সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শ্রেণিভিত্তিক ফলাফলের বিবেচনায় এবং ব্যক্তিগত আগ্রহের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের যথাক্রমে বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও উচ্চশিক্ষার জন্য নির্বাচন ও বাছাই ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। বৃত্তিমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা গড়পরতা হবে না, তা হবে সুনির্দিষ্টভাবে ট্রেডভিত্তিক। যেমন- যিনি কৃষি কাজের উপযুক্ত তাকে শিল্পকলকারখানার শ্রমিক বানানো যাবে না। আবার যিনি কামারের কাজ করবেন তাকে দিয়ে কুমারের কাজ করান যাবে না। আবার যিনি সেলাই বা দর্জির কাজ করবেন তাকে দিয়ে বাঁশ ও বেতের কাজ করান যাবে না। অন্যদিকে, একজন গাড়ি চালকও পেইন্টার বা শিল্পকর্ম করবেন না। সর্বোপরি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা ব্যবস্থায় সহ-পাঠ কার্যক্রমকে আবশ্যিক করে তুলতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে আমরা লক্ষ্য করে থাকি যে, তাদের মূল কারিকুলামের সঙ্গে সহ-পাঠক্রম যেমন- বিতর্কিত, উপস্থিত বক্তৃতা, ক্রীড়া, সেমিনার কর্মশালাভিত্তিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে। এসব সহ-পাঠক্রমকে শিক্ষার অপরিহার্য বিষয় হিসেবে গণ্য করে সার্বিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। সার্বিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের ক্যারিয়ার গঠনে মনোযোগী করে তুলতে হবে। আমরা আশা করি, পরিবর্তনমুখী এ সরকার পরিবর্তনের এ চ্যালেঞ্জটুকু গ্রহণ করে বৈষম্যমূলক শিক্ষা সংকট নিরসনে যথাযথ ও কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের একটি ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেটা হচ্ছে স্কুল-কলেজের সব কমিটিকে ভেঙে দেওয়া হয়, যা ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানানো হয়। এছাড়া মন্ত্রণালয় ও মাউশিতে বিগত দিনে অনিয়ম ও দুর্নীতির যে রাহু বা দুষ্টুচক্র বিস্তার লাভ করে বদলি, পদোন্নতি ও পদায়নে যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল তার অবসান হবে বলেও আমি মনে করি।

শিক্ষা ক্ষেত্রে যে সংকট ও দৈন্য বিদ্যমান তাকে হঠাৎ করে নিরসনের বড় একটা সুযোগ নেই। তবে সংকট নিরসন হবে না, এটা মানা যায় না। যে কোনো সরকারের জন্যই এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানের এ পরিবর্তনের সরকার শিক্ষার গুণগত মান বা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন ও সংস্কারে প্রয়াসী হলে শিক্ষার অনেকটাই উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

তবে শিক্ষার সর্বজনীনতা, গ্রহণযোগ্যতা বা বৈশ্বিক গুণগত মান অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে। তবে বৈষম্য নিরসনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মৌলিক পরিবর্তন ও সংস্কারের অনিবার্যতাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে আপাতত একটি সংগতিপূর্ণ ও সামঞ্জস্যময় মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে পূর্বতন শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে ফিরে যাওয়াটা খুবই যুক্তিক বলে প্রতীয়মান হয়। আর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ধীর গতিতে গবেষণা কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর সংস্কার আবশ্যক। অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর বৃদ্ধি ও পরিবর্তন অপরিহার্য। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় এর ব্যতিরেকে গুণগত শিক্ষার মান উন্নীত করা একেবারে অসম্ভব। বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে আমাদের দেশে আছে অর্থনৈতিক সংকট ও কর্মসংস্থানের অভাব। তাই আর বিলম্ব না করে আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও বিশ্বের জাতিসমূহের উন্নয়ন ও প্রগতির ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিক্ষাকে জীবনমুখী করে তোলার সময় এসেছে। জাতীয় প্রতিভার অপচয় আর অর্থনৈতিক প্রশ্ন বিবেচনায় এনে আমাদের ব্যাপারে সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। এই অপরিহার্য কেবল কারিগরি শিক্ষার জন্যই। বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। সাধারণ সনদপত্র নয় বৃত্তিমূলক শিক্ষা লাভ করে জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাহলে জাতি অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবে। বাঁচবে দেশ। সার্থক হবে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা। আমরা একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে