বেড়েই চলেছে চালের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না চালের দাম। বন্যায় ত্রাণের অজুহাতে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আটাশসহ বেশিরভাগ চাল।
এ ছাড়া বিশ্ববাজারে চালের দাম দেশের বাজারের চেয়ে বেশি। ফলে, আমদানির সম্ভাবনাও কম। ধারণা করা হচ্ছে, অক্টোবর মাস পর্যন্ত চালের বাজারে অস্থিরতা থাকতে পারে। তবে নভেম্বরে আমন কাটা শুরু হলে চালের দাম কমতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ থেকে বাংলাদেশের দানাদার খাদ্যবিষয়ক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। সম্প্রতি বাংলাদেশ গ্রেইন অ্যান্ড ফিড আপডেট, আগস্ট ২০২৪ শীর্ষক, বাংলাদেশের দানাদার খাদ্যবিষয়ক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বন্যায় ধানের ব্যাপক ক্ষতির কারণে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চালের উৎপাদন ৩ শতাংশ কমতে পারে। এই অর্থবছরে চালের উৎপাদন ৩ কোটি ৬৮ লাখ টন হতে পারে। ধান হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ হেক্টর জমিতে- যা গত বছরের চেয়ে সাড়ে ৩ শতাংশ কম। দেশে বছরে মোট চালের চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ টনের বেশি। সরকারি হিসাবে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৪ লাখ ৮১ হাজার টন চাল মজুত রয়েছে। এই মজুত গত বছরের তুলনায় বেশ কম হলেও সরকারি সূত্রের মতে, আগামী তিন মাসের জন্য এই মজুত যথেষ্ট।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি গুদাম ও ব্যবসায়ীদের কাছে কী পরিমাণ চাল মজুত আছে, তার কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। তবে ইউএসডিএর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বাজারে চালের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সব মিলিয়ে দুই মাস অস্থিরতা বজায় থাকবে দেশের চালের বাজারে। তারপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশ সাধারণ মানুষ। বেশি দামে চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে খাওয়া দিনমজুররা। অথচ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাজারে চালের দাম কমার কথা ছিল। কারণ, পণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে চাঁদাবাজিকে দায়ী করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী এখন তো চাঁদাবাজি থাকার কথা নয়। তা হলে ঠুনকো অজুহাতে চালের দাম বেড়েছে কেন?
নিকট ভবিষ্যতে আদৌ কমবে কিনা তা নিয়ে তারা সন্দিহান। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি ঠিক রাখতে না পারায় অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। তাদের আয়ের অধিকাংশ খরচ করতে হচ্ছে চাল কিনতে। বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫৫ টাকা, আটাশ চাল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৭২ থেকে ৮০ টাকা মানভেদে। নাজির শাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। বাংলা বাসমতি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি। সুপার শপে ১১০ টাকা কেজি।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, ভাত-প্রধান বাঙালি যদি তাদের চাহিদামতো চাল কিনতে না পারে তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম বৃদ্ধি কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ মোটা চালনির্ভর। মনে রাখতে হবে চালের দাম বেড়ে গেলে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। সুতরাং, যে করেই হোক চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।