শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বন্যা পরিস্থিতি

উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বন্যা পরিস্থিতি

নোয়াখালীসহ দেশের ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া, বেশিরভাগ রাস্তাঘাট, ফসলের ক্ষেত, গবাদি পশুর খামার ও শিল্পকারখানা থেকে পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়ায় প্রায় সব ধরনের কৃষিজ, ব্যবসায়িক ও ক্ষুদ্র-মাঝারিসহ উৎপাদনশীল কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার বিষয়টি যেমন আলোচনায় এসেছিল, তেমনি সার্বিক অর্থনীতি স্থবিরতার বিষয়টিও জানা যায়। অন্যদিকে, পানিবাহিত রোগসহ নানাবিধ সংকটও এড়ানোর সুযোগ নেই।

এমতাবস্থায় জানা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৪০ লাখ ডলার সহায়তা বরাদ্দ করেছে জাতিসংঘ। উলেস্নখ্য, বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্রের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে পাঠ করা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতিটি পাঠ করেন। এক্ষেত্রে বলা দরকার, ডুজারিক বলেছেন, জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী জয়েস এমসুয়া সংস্থার নিজস্ব কেন্দ্রীয় জরুরি সহায়তা তহবিল (সিইআরএফ) নামক মানবিক সহায়তা তহবিল থেকে বাংলাদেশের জন্য এ বরাদ্দ দিয়েছেন। এটাও জানা গেছে, গত মাসের শেষ থেকে বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে সহায়তার জন্য এ অর্থ খরচ করা হবে। আমরা মনে করি, এই অর্থ সহায়তার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক- যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

বলা দরকার, ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরে ডুজারিক বলেছেন, বন্যায় ৩ হাজার ৪০০টির বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নেওয়ার কথা জানা গেছে। বন্যার কারণে সাত হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১৭ লাখ স্কুল শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, বন্যার কারণে পশু ও মৎস্যসম্পদ খাতে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার ক্ষতি হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। এ বন্যাকে চলতি বছরে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন-সংশ্লিষ্ট চতুর্থ বড় দুর্যোগ বলে উলেস্নখ করেছেন ডুজারিক। যেখানে তিনি বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে বন্যা এবং এবারের এ আকস্মিক বন্যার ঘটনায় গত মে মাসের শেষ থেকে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।

আমরা বলতে চাই, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, বন্যাপরবর্তী সময়ে যে শঙ্কাগুলো উঠে আসছে তা আমলে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। পানিবাহিত রোগ, বিশুদ্ধপানি, পর্যাপ্ত ত্রাণ এই বিষয়গুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পরও কৃষি ও ব্যবসাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করতে অনেকটা লম্বা সময় লাগবে। কেননা, বন্যার্ত এলাকার ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট মেরামত করার আগে পরিবহণ চলাচল অসম্ভব। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাঁচামাল, ফসলের বীজ-সার, ব্যবসায়িক মালামাল আনা-নেওয়া কঠিন হবে। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খামার ও শিল্পকারখানা বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা সংস্কারের আগে চালু করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ফসলের খেত চাষযোগ্য করে তুলতেও অনেকটা সময় লাগবে। সব মিলিয়ে বন্যাকবলিত এলাকার অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি সচল করে তুলতে আরও এক দেড় মাস সময় লাগবে বলে আলোচনা উঠে আসছে।

সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৪০ লাখ ডলার সহায়তা বরাদ্দ করেছে জাতিসংঘ এটি আশাব্যঞ্জক- যার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বন্যার্তরা উপকৃত হবে। একইসঙ্গে বলতে চাই, বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ মানবিক তৎপরতা চালাতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে তা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে