দেশের উন্নয়নে স্বজনপ্রীতির ইতি টানুন
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইমন হাওলাদার
আমরা যদি একটু ভালো করে অবলোকন করি। তবেই আমরা দেখতে পাব যে, আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে বা হচ্ছে প্রতিটি কার্যকলাপের মধ্যে বিদ্যমান আছে স্বজনপ্রীতি নামক ভয়ংকর ব্যাধি। যা আমাদের সমাজের, রাষ্ট্রের উন্নয়নকে ব্যাহত করছে। স্বজনপ্রীতির কারণে গুণীজন তাদের যোগ্য স্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অযোগ্য লোকের ছড়াছড়ি পুরো সরকারি মহলজুড়ে। যার যেখানে থাকার কথা, সে থাকছে অন্য স্থানে। যার ফলে প্রতিটি সেক্টরের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। অযোগ্য পদধারী জানেই না কোন কাজটি তার অফিস ও অফিসে কর্মরত লোকদের জন্য কল্যাণকর। তার প্রতিটি কাজ হয়ে থাকে স্বার্থান্বেষী। সে অনেক বেশি অহংকারি হয়ে উঠে। কারণ সে কখনোই ততটুকু কষ্ট করেনি, যা তার পাশের বন্ধুমহল করেছে। সে তখন তাদের বলতে থাকে শুধু গাধার মতো পড়ালেখা করলেই হয় না, টেকনিক জানা লাগে। তার এই সফলতা অনেকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। মনোবল ভেঙে যায় সারাদিন রাতপড়ুয়া ছাত্রটির। সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায়। যা কখনোই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলকর নয়। যে ছেলেটি সারাদিন সমাজের অপকর্মে বুঁধ হয়ে থাকত, ক্লাসের পেছনে বসে ক্লাসে সমস্যা তৈরি করত, মেয়েদের ইভটিজিং করত, সব ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করত, কোনো রকমে টেনেটুনে অসৎ উপায় অবলম্বন করে একটি সার্টিফিকেট অর্জন করে, আজ সে মামা, খালুর জোরে সরকারি মহলের বড় কর্মকর্তা। সমাজের গুণীজন তারা। তাদের দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ চিন্তা করা, আমি মনে করি বেমানান। আর সারাদিন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকা ও ক্লাসের প্রথম সারির ছেলেটি আজ টিউশনি করে পরিবার চালায়। তার যে মামা, খালু নেই। রাষ্ট্রের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের অবিলম্বে এই ব্যাধি দূর করতে হবে। স্বজনপ্রীতির কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রে যোগ্য লোক বঞ্চিত হচ্ছে। গরিব, অসহায় ব্যক্তি সাহায্য পাচ্ছে না। যে ব্যক্তি বা পরিবার পাচ্ছে, সেই বার বার পাচ্ছে। দূর্বল, অসহায় মরছে না খেয়ে। এত এত সরকারি সাহায্য তবু দরিদ্র পায় না। এগুলো নির্মূল করতে হবে। দেশের উন্নয়নে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সোচ্চার ভূমিকা পালন করা দরকার। ইউনিয়ন পর্যায়ে নিজ চোখে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার মহল কীভাবে স্বজনপ্রীতি করে থাকেন। তাদের কাছের ব্যক্তি বা মনের মতো ব্যক্তি হতে পারলে আপনি পারবেন রিলিফের সিলিপ ও রিলিফ নিজ হাতে বন্টন করতে। তাদের দেখলে মনে হয় গরিবের জন্য না সরকারি সাহায্য এসেছে, তার স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে। সরকারের ১০ টাকার চাল ৩০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে খেতে দেখেছি গরিব অসহায়কে। চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছের লোকগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হলেও তাদের জোর করে ১০ টাকা কেজি চাল দিতে দেখেছি। যা তারা হাঁস-মুরগিকে খাওয়াতো, কেউ সিদ্ধ করে পুকুরে দিত ও ৩০ টাকা করে অসহায়দের কাছে বিক্রি করত। কোনো দরিদ্র লোক তাদের আচরণে তিক্ত হয়ে যদি বলত, ভোট চাওয়ার সময় তো ঠিকই সান্ত্বনার বাণী শোনান। তখন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বলেন তোমার ভোটে জনপ্রতিনিধী হইনি, হয়েছি টাকা দিয়ে ভোট কিনে। একটি পরিবার সরকারি মহলের সব সুবিধা পেলেও অন্য সব দরিদ্র পরিবার থাকত বঞ্চিত। ডাক্তারের রোগী দেখার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি। বিমানবন্দরে স্বজনপ্রীতি। সরকারি মহলের কোথায় নেই স্বজনপ্রীতি? তাই আসুন, রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে, দেশকে এগিয়ে নিতে, যোগ্য লোককে প্রাপ্য সম্মান দিতে স্বজনপ্রীতিকে না বলি।
ইমন হাওলাদার
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ