ফিজিওথেরাপি মানবসেবার সহযাত্রী

প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ডা. সংগ্রাম কান্তি কুন্ডু (পিটি)
আজ ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। ডড়ৎষফ ঈড়হভবফবৎধঃরড়হ ড়ভ চযুংরপধষ :যবৎধঢ়ু (ডঈচঞ) ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিশ্বের সমস্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৯৬ সাল থেকে ডঈচঞ ৮ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে- যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশন (বিপিএ) ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিবস পালন করে আসছে। এইবার এই দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে 'কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি'। বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই দিবস পালন করতে যাচ্ছে- যার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- ১। সকাল ৯.০০ ঘটিকা থেকে বেলা ১১.০ ঘটিকা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও রোগীদের অংশগ্রহণের্ যালি। ২। বেলা ১১.৩০ থেকে বিকাল ৪.০০ ঘটিকা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বিপস্নবে আহত ছাত্র-জনতা ও আপামর জনসাধারণের বাত ব্যথা ও প্যারালাইসিসে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ব বাস্তবতায় এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বর্তমান সময়ে ত্রিশোর্ধ্ব মানুষ জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়নি এরকম মানুষের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। মানুষের বয়স ও জেন্ডার ভেদে ব্যথার কারণ এবং ধরন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। স্পোর্টস ইনজুরি, ভারী বস্তু তোলার কাজ করলে অনেক্ষণ দাঁড়ানো বা বসা কাজ করলে, সামনে ঝুঁকে কাজ করলে শরীরের ওজন উচ্চতা অনুযায়ী বেশি হলে, গর্ভকালীন কোমরব্যথা, ভুল নিয়মে ব্যায়াম করলে, হাড়ের ক্ষয় এবং মাংসপেশী দুর্বলতা ইত্যাদির কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। কিছু নিয়ম সঠিকভাবে মেনে চললে কোমরব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব। শক্ত বিছানায় ঘুমাতে হবে, কোমর সোজা রেখে বসতে হবে এবং এ জন্য ছোট কুশন ব্যবহার করা যেতে পারে, কোনো কিছু নিচ থেকে তোলার সময় কোমর না বাঁকিয়ে হাঁটু বাঁকিয়ে বসে তুলতে হবে, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা যাবে না। বিছানা থেকে একপাশে কাত হয়ে উঠতে হবে। অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি কোমরব্যথার কারণে কোমরে লাম্বার করসেট ব্যবহার করতে হয়। বর্তমান সময়ে ফিজিওথেরাপি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অপরিহার্য শাখা। এটি একটি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর সব কথা শুনে ও বুঝে রোগীকে ভালোভাবে দেখে এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করে ম্যানুয়েল টেকনিক, বরফ, তাপ ও ব্যায়ামের মাধমে চিকিৎসা করে থাকেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোগীর শক্ত মাংসপেশির স্ট্র্রেচিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো এবং দুর্বল মাংসপেশিকে চাপ প্রয়োগের ব্যায়ামের মাধ্যমে শক্তিশালী করা। এছাড়াও আমরা কোমর ব্যথা রোগীর চিকিৎসার জন্য কিছু ইলেক্ট্রথেরাপি মেশিন ব্যবহার করে থাকি- যেমন: ঝডউ (শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি), গডউ (মাইক্রোওয়েভ ডায়াথার্মি), ওজজ (ইনফ্রারেড বিকিরণ), টঝঞ (আলট্রাসাউন্ড থেরাপি), ওঋঞ (ইন্টারফারেনশিয়াল থেরাপি) ইত্যাদি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জীবনে জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন করার মাধ্যমে কোমর ব্যথা হার এবং তীব্রতা কমানো সম্ভব। দেহ যখন রোগাক্রান্ত হয়, মন তখন ভারাক্রান্ত হয়। আবার মন যখন ভারাক্রান্ত হয়, দেহ তখন রোগাক্রান্ত হয়। ফলে, দৈহিক এবং মানসিক শুশ্রূষা ফিজিওথেরাপি সেবার মধ্যে দিয়ে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগী তথা মানবসেবার চিরন্তন সহযাত্রী হয়ে রয়। ডা. সংগ্রাম কান্তি কুন্ডু (পিটি) কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি) প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র বাগেরহাট