সামাজিক অবক্ষয় সঠিক পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোনোভাবেই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটছে, যা দেশবাসীকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, কুমিলস্নার হোমনায় বাড়ির একটি কক্ষ থেকে একই পরিবারের তিন সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধে তাদের হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে বড় ঘাগুটিয়া গ্রামের শাহ পরানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন- শাহ পরানের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (৩৫) ও ছেলে সাহাব উদ্দিন (৯) এবং শাহ পরানের মামাতো ভাইয়ের মেয়ে তিশা আক্তার (১৪)। এর আগেও এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় একটি বাড়ির ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় এক গৃহবধূ ও তার দুই ছেলের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদের তিনজনকে হত্যা করা হয়েছিল। সভ্য সমাজে এটা ভাবা যায় না। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করেছে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে, বন্ধু বন্ধুকে অবলীলায় হত্যা করছে। স্ত্রী স্বামীর লাশ ছয় টুকরা করে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। স্বামী ঠুনকো কারণে স্ত্রীকে সন্তানসহ হত্যা করছে। এমনকি প্রেমের কারণে অর্থ-সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে, হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বঞ্চনা, অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা-মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পর্যন্ত করছে। পারিবারিক বন্ধন- স্নেহ, ভালোবাসা মায়া-মমতা, আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। এর পাশাপাশি করোনাকালে সমাজে ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও নারী নির্যাতন অবমাননা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, যা সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নজির। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, যা বতর্মান সমাজে প্রকট। আমরা চাই পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি, যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এসব রোধ করতে না পারলে একদিকে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে, অন্যদিকে পরিবারের সদস্যরাও থাকবে নিরাপত্তাহীন। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন।