অর্থ পাচার সংক্রান্ত উদ্বেগ নানা সময়ই আলোচনায় এসেছে যা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। বিদেশে অর্থ পাচারসহ সার্বিকভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপরাধ আমলে নেওয়ার বিকল্পও নেই। ফলে এ সংক্রান্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরি বলেই আমরা মনে করি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ-উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মূলত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে বায়িং হাউসের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
আমরা মনে করি, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করার যে বিষয়টি অর্থ-উপদেষ্টা জানিয়েছেন তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। উলেস্নখ্য, এমন প্রশ্ন সামনে আসে- আপনারা ১৮ দিন হলো দায়িত্ব নিয়েছেন, সেখানে যে সংস্কারের কথা বলেছেন, সেটা কী দৃশ্যমান হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ-উপদেষ্টা বলেছেন, অবশ্যই দৃশ্যমান হয়েছে। অনেক বিষয়ই দৃশ্যমান। যেমন খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেসব ব্যাংকের সমস্যা ছিল, সেসব ব্যাংক রি-অর্গানাইজ (পুনর্গঠন) করা হচ্ছে। লিকুইডিটির যে সমস্যা ছিল সেটা সমাধান করেছে গভর্নর। একই সঙ্গে তিনি জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
এ কথা বলার অপেক্ষা না, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশে অর্থ পাচার অন্যতম প্রতিবন্ধক, এতে কোনো সন্দেহও নেই। ফলে অর্থ পাচার হলে তা কতটা উদ্বেগজনক সেটা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ই এ তথ্য উঠে এসেছে, দেশ থেকে প্রতিবছর নানাভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। সঙ্গত কারণেই অর্থ পাচার রোধ করা কতটা জরুরি তা সহজেই অনুমেয়। বিদেশে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ও পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে সামগ্রিক উদ্যোগ যেমন অব্যাহত রাখতে হবে, তেমনি ট্রাস্কফোর্স গঠন ও উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থ পাচার রোধ হবে এমনটিও আমরা চাই।
আমরা এটাও বলতে চাই, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ-উপদেষ্টা এটি যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনিভাবে সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া জরুরি. বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার জন্য সেগুলো সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও দুর্নীতিবিরোধী চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। জানা যায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে সম্পদ অবরুদ্ধ করার অনুরোধ করার কথা জানিয়ে মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের অবৈধ সম্পত্তি জরুরি ভিত্তিতে 'ফ্রিজ' করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাগুলোর প্রধান। আমরা মনে করি, এ বিষয়গুলোও সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। যেসব দেশে বাংলাদেশের অর্থ-সম্পদ পাচার হয়েছে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের এসব সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং পাচারের সঙ্গে জড়িত সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পথ ত্বরান্বিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, অবৈধভাবে অর্থ পাচার করা যেমন অপরাধ তেমনিভাবে অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। ফলে অর্থ পাচারকারীদের যেমন শাস্তির আওতায় আনতে হবে, তেমনিভাবে অর্থ পাচারের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সতর্ক থাকা এবং সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ-উপদেষ্টা। এটিকে সামনে রেখে অর্থ পাচার রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।