নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানব পাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এর ফলে সমাজে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাগরপথে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচার হচ্ছে। এখন মানব পাচারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে দেশের সাধারণ অসহায় মানুষ, যাদের জীবনে উজ্জ্বল স্বপ্ন খেলা করছে। তারা জীবনে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা চায়।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মাদারীপুরের দুই ভাইয়ের মৃতু্য হয়েছে। প্রায় ৪ মাস আগে মৃতু্য হলেও মঙ্গলবার ৩ সেপ্টেম্বর মৃতু্যর খবর বাড়িতে পৌঁছালে শোকের মাতম ওঠে। এদিকে খবর পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছে দালাল। এ ঘটনায় দালালের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। স্বজনরা জানায়, মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর সহজভাবে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেয়। এতে ধারদেনা করে ৩০ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দেয় স্বজনরা। একদিকে স্বজন হারানোর শোক, অন্যদিকে, ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুই ভাইয়ের পরিবার। এই ঘটনায় জড়িত দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
\হএ দেশের সাধারণ মানুষ যারা বিদেশে যেতে চায়, মনে করে কোনোভাবে একবার সাগর পাড়ি দিয়ে যেতে পারলেই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে, লাখ লাখ টাকা কামাতে পারবে। এমন স্বপ্নময় মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে সাগর পথে বিদেশে পাড়ি জামাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন লোকজন। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। উন্নত জীবনের আশায় তারা সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছেন। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফাঁদে ফেলছে দালালরা। মানব পাচার রোধ করা না গেলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল, স্থল ও আকাশপথে প্রতিদিন মানব পাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশিরভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন। চলাচলে সীমাবদ্ধতা, ঋণের চক্রে পরা, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিয়ে এবং দাসত্বের মতো শোষণমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারী ও পুরুষ এবং শিশুরাই মানব পাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন।
আমরা মনে করি, মানব পাচার বন্ধ না হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কাজেই কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে সীমান্তের সক্ষমতা বাড়িয়ে, পাচার বন্ধ করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।