শ্রমিক অসন্তোষ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যে কোনো কারণেই হোক শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেননা, এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ঢাকার অদূরে গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় তৃতীয় দিনের মতো বুধবারও বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। তথ্য মতে, বেতন বৃদ্ধি, শ্রমিকদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার, চাকরিচু্যত শ্রমিকদের আবার নিয়োগ, শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য এবং পুরুষ শ্রমিকদের বিনা নোটিশে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে সিরামিক, পোশাক ও ওষুধ কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া জানা যাচ্ছে, শ্রমিক ও বহিরাগতদের বিক্ষোভে সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চল বুধবার যেমন অশান্ত ছিল, তেমনি বিক্ষোভ ও হামলার কারণে ১৬৭টি তৈরি পোশাক কারখানায় বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে ওষুধ খাতেও অস্থিরতা চলছে। জানা যাচ্ছে, অন্তত ২৫টি বড় ওষুধ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ আছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুইশ' শিল্পকারখানায় বন্ধ আছে উৎপাদন। আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে, একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। কেননা, যেভাবে কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকার তথ্য উঠে আসছে তা কোনোভাবেই সুখকর নয়। ফলে, পরিস্থিতি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। জানা যাচ্ছে যে, আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বহিরাগতদের উসকানি রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, 'শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে যারা বিশৃঙ্খলা করছেন, তারা শ্রমিক নন, বহিরাগত।' আমরা মনে করি, যদি বহিরাগতদের উৎসকানিতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে তা এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং এক্ষেত্রে সংকট নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। জানা যায়, বুধবার সকাল ৬টা থেকেই গাজীপুরের শ্রমিকরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং সাড়ে ৮টায় 'বাংলাদেশ বেকার সংগঠন' নামে একটি দল নগরের চান্দনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানার গেটে গিয়ে ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা তাদের প্রতিহত করতে অবস্থান নিলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পিছু হটেন। বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিলে যানজটের সৃষ্টি হয়। কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় ট্রান্সকম বেভারেজ কারখানার শ্রমিকরা ২০ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন। চাকরি স্থায়ীকরণ, প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, নারী শ্রমিকদের নাইট ডিউটি বাতিলসহ ২০ দফা দাবি জানান তারা। শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় আরএকে সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবে বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গাজীপুর সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নিয়ে একদল শ্রমিক ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালান। অন্যদিকে, শিল্প পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকালে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুলস্নাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বন্ধ ঘোষণা করা কারখানার শ্রমিকরা চালু থাকা বিভিন্ন কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন তারা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরিপ্রত্যাশীরাও যোগ দেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বলে জানা যায়। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যেভাবে কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক অসন্তোষ সংক্রান্ত খবর আসছে তা আমলে নিতে হবে। এছাড়া বহিরাগতদের উসকানি বা যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হলে তার প্রভাব কতটা আশঙ্কার সেটাকে এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।