সমাজ গঠনে নৈতিকতা

সব ধর্মেই সৎ ও চরিত্রবান হিসেবে চলার উপাদান রয়েছে। আর এগুলোকে সঠিকভাবে রপ্ত করতে পারলে একটি সমৃদ্ধশীল সমাজ গঠন সহজ হবে।

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

রাসেল হোসেন
বিশ্ব থেমে নেই। শিক্ষা-সংস্কৃতি, সাহিত্য প্রযুক্তি নিয়ে যান্ত্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বসভ্যতা। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবিক সংস্কৃতি। আমাদের সমাজের শিরায় শিরায় ভাইরাসের মত্যে ছড়িয়ে পড়ছে অশিক্ষা, অপসংস্কৃতি ও নৈতিকতার অভাব। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিবেক বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য জীবের সঙ্গে মানুষের এখানেই পার্থক্য যে, মানুষ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে। যদিও আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এখনো দৃশ্যমান। শুধু আইন বা শাস্তি দিয়ে যে সমাজকে অপরাধমুক্ত করা সম্ভব নয়, তা এখন স্পষ্ট। তাই আইন প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে আইন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজন উদ্বুদ্ধকরণ। মূলত এ লক্ষ্যেই নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। যার ফলে মানুষের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ মানুষের জীবনে অনুসরণীয় এমন কিছু আচরণবিধি, যা মানুষের জীবনব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতিকে করে তোলে সুন্দর, নির্মল ও রুচিশীল। যা অবক্ষয় থেকে মুক্তি ও বিপদ থেকে রক্ষা করে। স্বার্থপরতার প্রলুব্ধকর আকর্ষণ ও মোহ থেকে বাঁচিয়ে মানুষকে আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রবল মানসিক শক্তি দানকারী এক শিক্ষা। যার বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ যাবতীয় দুর্নীতি ও অন্যায়কে প্রত্যাখ্যান করতে শেখে এবং সৎপথ অবলম্বন করে জীবনকে চালিত করে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের উপাদানগুলো ব্যক্তি, সমাজের অবস্থান, ভালো-মন্দ, দোষ-গুণ, ন্যায়পরায়ণতা, সততা ও নৈতিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে কাজের কল্যাণকর দিকনির্দেশনা। নৈতিক শিক্ষা মানুষকে পরিশুদ্ধ করে। যে শিক্ষা দীর্ঘদিনের আচার-আচরণ, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক চেতনা প্রদায়ী শিক্ষা। সুতরাং জাতীয় জীবনে উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য সমাজে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, একজন জ্ঞানী ব্যক্তি জানেন যে, তিনি কিছুই জানেন না। প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি সবসময়ই বিনম্র থাকেন এবং অহংকার থেকে দূরে থাকেন। এই বিনম্রতা এবং নম্রতা একজন মানুষকে অন্যের প্রতি সম্মান দেখাতে শেখায়, যা সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অপরিহার্য। বর্তমানে সমাজে একের পর এক জঘন্যতম ঘটনা ঘটছে। বের হয়ে পড়ছে ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রের পচনের ভয়ঙ্কর রূপ। যার ফলে ছড়িয়ে পড়ছে ভীতি, আতঙ্ক আর নানা মাফিক দুশ্চিন্তা। মূলত দেশের আইন, সংবিধান, রাজনৈতিক দল, শিক্ষা গোটা দেশ সংস্কারের প্রয়োজন। তবে সবকিছুর পূর্বশর্ত হচ্ছে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে অনৈতিকতার বিষবাষ্প। এ বাতাস যেন সব জায়গা দখল করে নিয়েছে। রক্তপ্রবাহ যেভাবে শরীরকে কার্যকর রাখে তেমনি নৈতিক মূল্যমান জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ধাবিত করে। সত্য সুন্দরের প্রতি প্রাণিত করে। অপরদিকে, রক্তপ্রবাহের অভাবে শরীর অকার্যকর হয়ে যায়। একইভাবে মূল্যবোধের অভাবে মানুষের জীবনকে গতিহীন হয়ে পড়ে। প্রাণহীন হয়ে যায় জীবনের পথ চলা। স্বপ্নহীন জীবনের মূল্যও কমে যায়। নতুন সৃষ্টির নেশা জাগে না। উদ্যমতা বিদায় নেয়। দিন দিন এর মাত্রা বাড়তে থাকে। মানবিকতার পতন এতটাই নিম্নে নেমে গেছে যে, সামান্য বিষয় নিয়ে মানুষ হত্যা সাধারণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যদি ও বৈশিষ্ট্য ব্যক্তিরা তাদের মতামত এভাবে ব্যক্ত করেছেন, রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের লোকেরা যদি লুটপাট, অনিয়ম, নৈরাজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন, নৈতিকতাহীন শিক্ষা ব্যবস্থা ও সম্পদের প্রতিযোগিতা। আর এসব থেকে মুক্তির একমাত্র সমাধান নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সৃষ্টি, যার প্রধান অন্তরায় ধর্ম। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী জোনাথন হ্যাইট বলেছেন, ধর্ম, ঐতিহ্য, মানবাচরণ এ তিনটি থেকে নৈতিকতার উদ্ভব ঘটে। তাই বর্তমানে এই অবক্ষয় থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য নৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম ধর্মেও নীতি ও নৈতিকতা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নীতিবান মানুষের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে বিশেষ পুরস্কার। নৈতিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষ অর্জনের মাধ্যমে মানুষ মহান আলস্নাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'আলস্নাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী।' (জামিউস সগির : ২১৮) সব ধর্মেই সৎ ও চরিত্রবান হিসেবে চলার উপাদান রয়েছে। আর এগুলোকে সঠিকভাবে রপ্ত করতে পারলে একটি সমৃদ্ধশীল সমাজ গঠন সহজ হবে। রাসেল হোসেন : নবীন কলাম লেখক