কোন পথে বাংলাদেশ?

হিংসা-দ্বেষশূন্য সমাজ ও রাষ্ট্র সবার প্রত্যাশা। উদ্ভূত পরিস্থিতি চায় না জনতা। পুঁজিবাদী সমাজের ভয়ংকর ও কুৎসিত চেহারা জনতা দেখতে চায় না। দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে ফের সমষ্টিগত সমাজ উজ্জীবিত।

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

শাহমুব জুয়েল
সবার আগে দেশ। দেশ বাঁচলে রাজনীতি করা যাবে। কাঁধে কাঁধ রেখে হাঁটা যাবে। মৃতু্য হলেও শেষ ঠিকানাটা হবে বাংলাদেশ। সম্প্র্রীতি বজায় থাকবে। খেয়ে পরে জীবনের বহু চাহিদা পূরণ করা যাবে। যাদের দেশপ্রেম নেই তারা সময় বিবেচনায় আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, দেশপ্রেমের চেয়ে বড় কিছু নেই। সামগ্রিক বাংলাদেশের চিত্র অনুসন্ধান করলে মনে হবে। দেশের মানুষের স্বস্তি ও শান্তিই কাম্য। মানুষ আশা করে, একটু স্বস্তিতে বসবাস করবে। রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন উৎফুলস্নভাব নেই। আপামর জনতা চায়, সুন্দর ও নিরাপদ জীবনযাপন। বাঙালি মিশ্রজাতি, আবেগ-অনুভূতি ভিন্ন হলেও গণতান্ত্রিক চিন্তা ও বাকস্বাধীনতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। সম্প্রতি বিপস্নবী প্রজন্ম ও একটি অভু্যত্থানই বড়ো প্রমাণ বহন করে। বাংলাদেশের মানুষ জেগে ওঠার শক্তি রাখে। নিঃশ্বাস ধরে থাকা মানুষের মাঝে ফুঁসে ওঠা দেখে বিশ্ব সত্যি হতবিহ্বল হয়েছে। ভূ-রাজনীতির মারপঁ্যাচে বাংলাদেশ এখন আলোচিত দেশ। স্পষ্টত বাংলাদেশকে কেউ একনায়কোচিতভাবে ধরে রাখতে পারবে না এটি হচ্ছে টার্নিং পয়েন্ট ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কৃষি ও কৃষক সমাজ দেশের প্রধান অংশীদার। খরা ও অতিবৃষ্টির ফলে বন্যাজনিত কারণে যখন চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটে। ফসল বিনষ্ট হয় তখনো কৃষক সচেষ্ট থাকে। উৎপাদন থেকে কখন মুখ ফিরিয়ে নেয় না; ঘাম ও শ্রম দিয়ে কৃষি খাতকে রক্ষা করে। সার, কিটনাশক ও বুর্জোয়াশ্রেণির হস্তক্ষেপে বাধাপ্রাপ্ত হলেও বারবার কৃষি উৎপাদনে হাত লাগায়। যতবার পরাস্ত হয় ততবার বীজের পরিচর্যা করে। গাভীর পরিচর্যা করে। কৃষকের কাছে, চাষাভূষার কাছে দেশই কবিতা। কৃষক ও মাছচাষিরা প্রকৃতির ভাষা বোঝে, প্রকৃতির সঙ্গে খেলা করে, দুর্যোগে মৃতু্য উপত্যকা পাড়ি দেয়। তাদের মনোবল কখনো ভাঙে না; শত বিপদেও মন শক্ত থাকে। তারা উৎপাদন না করলে সবজিবাজার হু হু করে বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। এলিটশ্রেণি খেতে পায় না; জিহ্বায় স্বাদ তৈরি করতে পারে না, আহ্লাদি আপ্যায়ন করতে পারে না। কৃষক-শ্রমিক ও মাছ চাষিদের মন ও মানসিতা না বুঝার কারণে আজও সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ সমাজ নির্মিত হয়নি। সময় অসময় গড়ে উঠেছে বুর্জোয়া, সিন্ডিকেট ও ফ্যাসিবাদী শ্রেণি। দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। সিন্ডিকেটের উপদ্রবে নাকাল হয়েছে কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্য সরবরাহ। মনে হচ্ছে চেপে বসেছে রাষ্ট্রযন্ত্রকে। অথচ সঠিক মূল্য ও সুবিধাপ্রাপ্তির মাধ্যমে একটি আদর্শশ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে ওঠা সম্ভব ছিল। সম্ভব ও সম্ভাবনাকে তোয়াক্কা করা হয়নি। নিজ স্বার্থ ও সুবিধা লাভের আশায় তৈলি মাসেজ ছিল নিয়মিত। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা নৈতিক দায়িত্ব। শিক্ষা পেলেও সুশিক্ষা না পাওয়ায় মৌলিকত্ব বিনষ্ট হয়েছে। মাধুর্য ও ত্রম্নটি নিরূপণ হয়নি। দু'টি সমাজে থাকবে কিন্তু দুটোকে আলাদা করে দেখানোর উপায়করা নির্জীব ছিলেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কী বন্ধু না স্বার্থপ্রেমিক? বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুর সম্পর্ক কেমন? তা বিবেচ্য বিষয়। দুঃখ ও সুখ অনুধাবনের মানসিকতা না থাকলে বন্ধুত্ব পরিণত হয় বিষক্রিয়ায়। বাংলাদেশ ভৌগোলিক কারণে দুর্বল। দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নানাভাবে দমিয়ে রাখা হচ্ছে। খরা মৌসুমে জল না দেওয়া, বর্ষা ও ভারি মৌসুমে বাঁধ ছেড়ে দেওয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রপ্তানি বন্ধ করা। এগুলো হটকারি সিদ্ধান্ত, পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলে জনমনে বৈরী মনোভাব তৈরি হবে। যা মোটেও শুভকর নয়- কে কতটুকু ক্ষতির মধ্যে পড়বে তা থেকে বড়ো বিষয় ক্ষতি ও দুঃখ ভর করেছে। পস্নাবন হলে উভয়ের মাঝেই তা ঢলে পড়বে। এসব চিন্তা না করলে সভ্যতা, মানবতা ও পরমত সহিষ্ণুতা থাকবে না; ব্যর্থতা ঝাপটে ধরবে। এমন কাজ পরস্পর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে কাম্য নয়- যা অপ্রত্যাশিত। অথচ ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে এক ও অভিন্নপ্রায়। প্রতিবেশীর দ্বারা প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকলে যে কোনো সময় বড়ো ধরনের বিপর্যয় ঘটে। কথায় আছে, 'নগর পুড়িলে দেবালয় কী এড়ায়'। বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সহিষ্ণু ও সমজদার হতে হবে। বৈরীভাব পোষণ করাও ঠিক হবে না; আমাদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে- উন্নত চিন্তার। স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা এসেছে। তারা কেউই দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। কারণ স্বদেশপ্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন নিঃস্বার্থ। একটি শ্রেণি বরাবরই রাষ্ট্রের সম্পদ ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে, লুটপাট করেছে, দুর্নীতি করেছে জনগণের সম্পদ তছনছ করেছে, ম্যাচাকার করেছে দেশের অর্থনীতি। তাতে উত্তরণের পথ ক্ষীণ হয়েছে। যারা এসব করেছে তারা উন্নত রাষ্ট্রে নিজ ও পরিবারের জীবন নিশ্চিত করেছে। বেগমপাড়া, সুইসব্যাংক, প্যালেস, স্টেট তৈরি করেছে। যখনই ধরা পড়ছে তখন নিরাপদ জোন ও সেফ জোনে চলে গেছে। দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্য এবং কলঙ্ক বহন করতে হচ্ছে দেশের আমজনতা। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ হচ্ছে প্রভাববিস্তারকারী রাষ্ট্রগুলোর মাধ্যমে দলিত ও মথিত। তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে। কম তো হলো না, ব্রিটিশ শোষণ, পাকিস্তানি শোষণ, বুর্জোয়া শোষণ। শোষকরা সুবিধা ও সুবিধালোভী। বাজারজাতে সব সময়ই জোটবদ্ধ। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাজার দখল। চীন, আমেরিকা ও রাশিয়াসহ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বিশ্বব্যাপী তা করছে। তবে জাপানকে একটু আলাদাভাবে বিবেচনা করা চায়। সভ্যতা ও সহিষ্ণুতা তাদের প্রধানতম উপকরণ। চিন্তা ও গবেষণায় তারা সচ্ছল। অন্যের খবরদারি করছে না নিজেদের টেকসই প্রযুক্তি ও বিজনেস পলিসিনীতি নীরবে ব্যবহার করছে। কিন্তু অন্য প্রভাবশালী দেশগুলো যা দেবে তা সুদে-আসলে কড়ায় গন্ডায় বাগিয়ে নেয় এবং গাড়ে চেপে বসে। তদুপরি বাংলাদেশকে সুসম্পর্ক রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। সাধারণ ও গণচিন্তার দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষ বিভিন্ন দেশে কাজ করে। শ্রমবাজার রপ্তানিতে শীর্ষে। বাড়তি আয় ও রোজগারের আশায় পরিবার-পরিজন ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি দেয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবার-পরিজনকে সুন্দর রাখা। ইতোমধ্যে প্রবাসীদের পরিবারগুলো স্বাচ্ছন্দ্য জীবন খুঁজে পেয়েছে। প্রবাসে যাওয়ার কারণ হচ্ছে দেশীয় বেকারত্ব, শিল্প ও শ্রমবাজার দুর্বল। আর্থিকভাবে অর্থাৎ বেতনকাঠামো যৎসামান্য। অথচ কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে। মৌলিক খাতগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। দেশীয় শিল্পকলকারখানা গড়ে ওঠেনি; কেবল দেদারসে পাচার হয়েছে। পাচারকারীরা সবাই শিক্ষিত দাপ্তরিক কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক এবং রাজনীবিদ। কিন্তু দায় টানতে হয়েছে জনতা, শ্রমজীবী মানুষ এবং কৃষক সমাজের। শিক্ষকরা সমাজের আইকন। কিন্তু তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলন করতে হয়, দিনের পর দিন অনশন করেও কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি পাওয়া যায় না; দেশের বৃহৎ অংশ বেসরকারি শিক্ষকসমাজ। যাদের মনের কথা বোঝার সক্ষমতা কারো হয় না। এর প্রধানতম কারণ লেজুড়বৃত্তিক চিন্তা। দেশ ও সমাজ দুটো বিষয়কে মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষক হবেন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু এসব কখনো দূর হবে কিনা তা সন্দেহ। গবেষক ও গবেষণাগার কম। সঠিক গবেষণা না হলে কখনোই মানসম্মত ও উপযোগী সভ্যতা গড়ে ওঠে না। সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে মৌলিক বিষয় শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা, নদী ব্যবস্থা, নগরায়ণ গড়ে ওঠেনি। বারবার হোঁচট খেয়েছে। কারণ হচ্ছে সমালোচনা নেওয়ার মানসিকতার অভাব, আর্থিক অনিয়ম, রাজনৈতিক ট্যাগ লাগানো তেলবাজি এবং চাটুকারিতা। খাতবিশেষ মাধুর্য খুঁজে পেলেও ত্রম্নটিও যে আছে তা দেখানোর সাহস কারো ছিল না; দেশ স্বাধীনের পর এক্স, ওয়াই ও জেডসহ তিন প্রজন্ম চলছে- অপেক্ষা করতে হবে কী হবে এবং কী হতে পারে। খুব কম সময়ে ভারত চাপে পড়বে। কাশ্মীর নিয়ে পূর্ব উত্তেজনা বিদ্যমান। পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের টানাপোড়েন ও পূর্ব শত্রম্নতা বিদ্যমান রয়েছে। পাকিস্তানে সরকার ব্যবস্থা দুর্বল। রাজা আসে রাজা যায় ত্রাহী রব থাকলেও পারস্পরিক শত্রম্নতার জেরে মারমুখী অবস্থায় আছে পাকিস্তান। অন্যদিকে, ভারতের প্রতি চীনের স্নায়ুগত দূরত্ব রয়েছে। বুঝে শুনে পা ফেলছে চীন। আমেরিকাও হিসেব ঠিক রেখে দু'দেশীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। আমেরিকার দরকার আধিপত্য ও বিশ্বশাসন। চীন বিশ্বশাসনের চিন্তা মাথায় নিলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বলয়ে রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ চলমান। ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের যুদ্ধ চলমান, যা বিশ্বব্যাপী সংকট তৈরি করেছে। কিন্তু পাকিস্তান ও ভারত দেশীয় টালমাটাল অবস্থায় নিজেদের অবস্থান ঘন ঘন পরিবর্তন করছে। এমতাবস্থায় যে কেউ ভুল করতে পারে। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো চেপে বসবে এবং নিজেদের স্বার্থ হাসিল করবে। ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন? শান্তি অনিশ্চিত। কিন্তু বাংলাদেশকে খুব সাবধানে এগিয়ে যেতে হবে কারো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। সবার আগে দেশ, দেশের মানুষ ও দেশপ্রীতি। গণতন্ত্রের ত্রম্নটি চেপে ধরাই বাংলাদেশের নিরাপত্তাহীনতা। স্বাধীনতা রক্ষা এবং জনস্বার্থ বিবেচনা করার মূল শক্তি হচ্ছে গণতন্ত্র। সবাই মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেছে বাস্তবিকপক্ষে গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরে স্বৈরতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং করার প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। গণতন্ত্র লুণ্ঠিত হলে রাষ্ট্রকে প্রভু রাষ্ট্রগুলো চেপে ধরার সাহস পায় এবং হামলে পড়ে। চাহিদা বেড়ে যায় এবং অন্যায় আবদার তৈরি হয়। চীন আমেরিকা ও ভারত এমনটাই করেছে। এমন অশুভ নজরের জন্য বারবার দায়ী হয়েছে গণতন্ত্রহীনতা। মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর বাঙালিকে দাসত্বে রাখা সোজা কথা নয়- তা প্রমাণিত। যে কোনো শাসকই বহুজাতিক সমস্যা মোকাবিলা করে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী। এর মাঝে রয়েছে ধর্মভিত্তিক বিভাজিত জনগোষ্ঠী। বহুমতের সন্নিবেশ আছে এখানে। একক কিংবা আংশিক চিন্তায় রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও শেকড় তৈরি করা যাবে না। এ দেশের মানুষের আবেগ সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া রাখতে হবে। এ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে কিন্তু কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয় কারণ আবেগ নিয়ে খেলা করা অসমীচীন। তাই ভোট, দল মতের মেনুফেস্টো চাহিদা রাখতে হবে। দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠা কেন? সততা, নিষ্ঠা, আদর্শ রাষ্ট্র কাম্য ছিল। কারণ হচ্ছে জবাবদিহিতার অভাব। দুর্নীতির বড়ো শেকড় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। আমলাশ্রেণি রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের চাবিগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখে এবং লকআপ ও ভ্যান করার সক্ষমতা রাখে। সর্ষের মধ্যে ভূত। তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব জনতার কথা মাথায় রাখে না; ভোগের রাস্তাগুলো রাজনীতিবিদের তারা তৈরি করে দেয়। নিজেদের স্বার্থে বোল পাল্টিয়ে আবার নতুন সাজে আসে এবং লুটপাট শুরু করে। রাজনীতিবিদ, শিল্পগোষ্ঠী ও সিন্ডিকেট এবং আমলাদের দুর্নীতির অভয়ারণ্যে দেশের বারোটা বাজে, দৌরাত্ম্য জনগণের চাহিদা ও স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। ধুঁকছে জনতা। কিন্তু তাদের সন্তানদি ও পরিবার-পরিজন নামিদামি রাষ্ট্রে বসতি স্থাপন করে। নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করে। যারা দুর্নীতিবাজ তাদের দেশ নেই, দল নেই, মত নেই, ধর্ম নেই। তারা হচ্ছে, দুর্বৃত্ত ও পরগাছা। যতদিন পরগাছা বিলুপ্ত না হবে ফলবান বৃক্ষের তদারকি না হবে ততদিনে মুক্তি নেই। জনতা বিদ্বেষহীন একটি সুন্দর ও নিরাপদ জীবন প্রত্যাশা করে। কন্ডিশন পুঁজিবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া ফিলোসোফি দিয়ে কখনো শঙ্কর জাতিকে দমিয়ে রাখা যায় না। ফিলোসোফি কেবল একটি শ্রেণি কিংবা আদর্শবাদে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীতে ব্যবহৃত হয় বাকি যা করা হয় চাপিয়ে দেওয়া এবং জোরজবরদস্তি করা। এসব করে বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। এজন্য মৌলিকত্ব খুব বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশ একটি আবেগীয় ও বহুজাতিক জনগোষ্ঠী। স্ব স্ব আইডিয়া কিংবা আইডলজি বহন করে। ধারাবাহিকতা থেকে বের হতে চায় না এটা পরিষ্কার। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানে সার্বিক অংশগ্রহণ ও সমৃদ্ধি খুব প্রয়োজন। রক্তে আবেগী যন্ত্রণা আছে, দাগ আছে, প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা আছে। ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য ইতিহাস হাজার বছরের। তাই প্রজন্ম ও জনতার আবেগ ও ইন্দ্রিয় বুঝতে হবে, কথা শুনতে হবে। শোনা বোঝার মধ্যে সময়টাও বেশি নেওয়া যাবে না। কারণ তাতে বিপদাপন্ন হওয়া সহজ। সেন্স জাস্টিস ও মূল্যবোধ নিরূপণে জনতার সঙ্গে এলিটশ্রেণির সম্পর্ক অটুট রাখা জরুরি। মতাদর্শের কারণে সম্পর্কের অবনতি কিংবা বিরুদ্ধপ্রভাব কাম্য নয় সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র ও দেশপ্রেম। হিংসা-দ্বেষশূন্য সমাজ ও রাষ্ট্র সবার প্রত্যাশা। উদ্ভূত পরিস্থিতি চায় না জনতা। পুঁজিবাদী সমাজের ভয়ংকর ও কুৎসিত চেহারা জনতা দেখতে চায় না। দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে ফের সমষ্টিগত সমাজ উজ্জীবিত। \হকিঞ্চিত অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে অধিকার চর্চায় জনতা সদা সচেতন। বসন্তের কাছে দুর্নিবার শক্তি পরাজিত। এটুকু মাথায় রেখে সম্মুখে হাঁটা নিরাপদ- কারণ জনতাই ট্রোটেম বা শক্তি। শাহমুব জুয়েল : প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক