শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ টাইগারদের অভিনন্দন

  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ টাইগারদের অভিনন্দন

ইতিহাস রচিত হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। কেননা, চব্বিশ বছরের অপেক্ষার পর যা কখনোই হয়নি, সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই টেস্ট সিরিজ জয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন মুশফিকুর রহিমরা। বাবর আজমদের তাদেরই মাটিতে ২-০-তে হোয়াইটওয়াশের বিস্ময় উপহার দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে দ্রম্নতগতিতে বল ছুটে গেল বাউন্ডারিতে। স্টাম্প মাইকে শোনা গেল গর্জন। নিশ্চিতভাবেই তা মুশফিকুর রহিমের বজ্র হুঙ্কার! টিভি পর্দায় দেখা গেল, ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পাকিস্তানের বুকে বাংলাদেশের বিজয় উলস্নাস! এক্ষেত্রে বলা দরকার, জয়ের সুবাস মেখে যে দিনের শুরু, স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় সেই আবেশেই মাখামাখি হলো বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেট হারিয়ে ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয়ে নিজেদের রাঙাল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এই বিজয়ে টাইগারদের জানাই আমরা আন্তরিক অভিনন্দন। একইসঙ্গে জয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী দিনেও টাইগাররা নিজেদের শানিত করবে এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে সবটুকু উজার করে দিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করবে এমনটি প্রত্যাশা করি।

এ কথাও বলা দরকার, এ নিয়ে বিদেশের মাটিতে তিনবার টেস্ট সিরিজে জয়ের স্বাদ পেয়েছে লাল-সবুজের দল। জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর অতীত গৌরব থাকলেও এবারই প্রথম পাকিস্তান-বধ। ২০০৯ সালে দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ করানোটা যদি সাকিব-মুশফিক প্রজন্মের শুরুর সাফল্য হয়, তাহলে গতকাল পাকিস্তানের মাটিতে এই ধবলধোলাইটা ছিল যেন সেই পরীক্ষিত প্রজন্মের পরিণত এক কীর্তি। গতকাল সেই জুটিই কিনা ক্রিজ থেকে জয় নিশ্চিত করল। শান মাসুদ, বাবর আজম, রিজওয়ান, শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, খুররাম মঞ্জুরসহ পাকিস্তানের পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই এই সিরিজ খেলতে নেমেছিল তাদেরই মাঠে। সেখানে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে হারার পর সাড়ে তিন দিনের দ্বিতীয় টেস্টও হার।

আমরা মনে করি, এবারের জয় তাই অনেক বেশি স্পেশাল, আরও বেশি স্মরণীয়। এই জয়ের আনন্দ প্রেরণার, এই প্রেরণাকে সামনে রেখে আগামী দিনেও টাইগাররা জয়ের ধারায় এগিয়ে যাবে এমনটি কাম্য। উলেস্নখ্য, শেষ ইনিংসের ১৮৫ রানের তাড়ায় শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৪৩ রান। সেই লক্ষ্যে খুব দ্রম্নততায় ছুটতে পারেনি দল। প্রয়োজনও পড়েনি। ম্যাচ সব সময়ই ছিল নিয়ন্ত্রণেই। ফিফটি করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। কিন্তু কয়েকজনের অবদানে বেশ সহজেই জিতে গেছে বাংলাদেশ। সম্মিলিত দলীয় পারফরম্যান্সের জয়গান গেয়েই অসাধারণ এই সিরিজ জয়ের সাফল্য ধরা দিয়েছে। আর সে জন্যই বোধ হয় ৪ উইকেটে ১৮৫ রান তুলতে কোনো অস্বস্তিই কাজ করেনি। ৬ উইকেটের এই জয়কে 'বাংলাওয়াশ' বলে ধারাভাষ্যকার যেন মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন, কেন এই সিরিজ জয়ের মাহাত্ম্য আর সবকিছুর চেয়েও আলাদা! এক্ষেত্রে স্মর্তব্য, নিজেদের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে আগে কেবল একবারই দেশের মাঠে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল পাকিস্তান। ২০২২ সালে তারা তিন ম্যাচের সিরিজের সবকটি হেরেছিল ইংল্যান্ডের কাছে। এটাও আমলে নেওয়া দরকার যে, জানা যাচ্ছে- প্রথম ইনিংসে এত কম রানে ৬ উইকেট হারিয়েও জয় টেস্ট ক্রিকেটে দেখা গেল ১৩৭ বছর পর! সেই ১৮৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ও পরে ৪৫ রানে অলআউট হয়েও শেষ পর্যন্ত ১৩ রানে ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এবার বাংলাদেশও এই রেকর্ডে তাদের সঙ্গী।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এই ঐতিহাসিক জয় অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং প্রেরণার। সঙ্গত কারণেই জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতিও অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, টাইগাররা বারবার দেশে সুনাম ছড়িয়েছে, সারা বিশ্বের সামনে দেশকে উজ্জ্বল করেছে। ফলে, জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাবে আরও বহূদূর- এমন লক্ষ্যকে সামনে রেখে ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে