শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন ও তাদের দেশাত্মবোধ, বিজ্ঞানমনস্কতা, সৃজনশীলতা ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করে। আর এই শিক্ষা বাস্তবায়নে মা-বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ঝপযড়ড়ষ খবাবষ ওসঢ়ৎড়াবসবহঃ চষধহ (ঝখওচ), প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উপকরণ, বিদ্যালয়ের রুটিন মেইন্টিন্যান্স, খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয় ইমার্জেন্সি, কন্টিনজেন্সি বাবদ, এছাড়াও ক্ষুদ্র ও বড় ধরনের মেরামত বাবদ এবং অন্যান্য প্রকল্প/স্কিমের আওতায় অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। এসব বরাদ্দ প্রয়োজন অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাছাই করে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নিয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা সংগ্রহ করেন। পরবর্তী সময়ে তা যাচাই করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেন। বরাদ্দ পাওয়ার পর প্রতিটি বিদ্যালয় যেন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সঠিকভাবে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যয় করে তা মনিটরিং করে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে।
প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ও আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, কুইজ, দেয়ালিকা ও দেয়াল পত্রিকা তৈরি, উপকরণ তৈরি, ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম, স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন, জাতীয় দিবস পালন, মা দিবস ও শিশু দিবস উদযাপন করেন। আর এসব কার্যক্রম শিক্ষা প্রশাসন মনিটরিং করে।
প্রাথামিক শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রান্তিক পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপন করেন। শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুদের বিজ্ঞান মনস্কতা ও সৃজনশীল করে তুলতে প্রশাসন বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে। শিশুদের উৎসাহ প্রদান করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষকদের নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভার আয়োজন করেন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলো শিক্ষকদের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেন- যা শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে কাব- স্কাউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাব-স্কাউট জাতিকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। উপজেলা, জেলা, বিভাগ পর্যায়ে কাব স্কাউট উন্নয়নে প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও বিভাগ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার কাব-স্কাউটের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। খেলাধুলা শিশুর শারীরিক, মানসিক ও দৈহিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসন ছেলেদের জন্য একটি 'গোল্ডকাপ' ও মেয়ে শিশুদের জন্য একটি 'গোল্ডকাপ' টুর্নামেন্ট আয়োজন করে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের সুস্থ সবল, রোগ ও মহামারি মুক্ত রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের সচেতন করতে প্রশাসন লিফলেট, পেস্ন-কার্ড, ব্যানারসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী বিদ্যালয়ে প্রদান করেছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাক্স ও সাবান ইত্যাদি প্রদান করা হয়। এছাড়া, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশাসন বিদ্যালয়গুলোতে লিফলেট বিতরণ করে।
শিশুদের দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন কুচকাওয়াজ ও বিভিন্ন ডিসপেস্নর আয়োজন করেন। এছাড়াও প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সর্বোপরি, একটি উপজেলায় অভিভাবক হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও বিভাগ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মো. কামরুল হাসান সোহেল : উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নবাবগঞ্জ, ঢাকা