ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে
প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
এবারের আকস্মিক বন্যায় কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ জনে। নতুন করে নিহতদের মধ্যে ফেনী ও কুমিলস্নায় তিনজন এবং নোয়াখালীতে দুজন মারা গেছেন। অন্যদিকে, তথ্য অনুযায়ী, বন্যাকবলিত এলাকার পানি ধীরে নামায় কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। তবে কয়েকটি জেলায় উন্নতি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো- পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ। এমনকি হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ায় নানাভাবে হাসপাতালের বাইরে গাছের নিচে শুইয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যেমন কাজ করতে হবে, তেমনি পানিবাহিত রোগের বিষয় আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
উলেস্নখ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে- ফেনী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজারসহ ১১টি জেলার ৬৮টি উপজেলায় ৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬৭টি পরিবার এখনো আটকা পড়ে আছে। এ ছাড়া ১১টি জেলার ৫০৪টি পৌরসভা বা ইউনিয়নে আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ লাখ ৮ হাজার ২০২ জন। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ, ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল, ১৫ হাজার পিস শুকনো খাবার বা অন্যান্য খাবার এবং শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা করে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট অবস্থা কতটা উৎকণ্ঠাজনক, তা বিবেচনায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই।
সামগ্রিকভাবে বন্যার্ত এলাকায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে মোকাবিলা করতে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। তেমনি পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্যাকবলিত বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ- এটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখতে হবে। বিশেষ করে জেলাগুলোর মধ্যে ডায়রিয়ার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে ফেনীতে। জানা গেছে, ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে, বারান্দায় ও বাগানের গাছতলায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে চিকিৎসা পাওয়ার আশায় দিনাতিপাত করছেন বন্যাদুর্গতরা। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, আক্রান্তদের বেশিরভাগ শিশু। ফলে সার্বিক পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার দ্রম্নত পরিস্থিতির উন্নয়নে যথাযথ বাস্তবায়ন অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।
সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া দরকার যে, জানা যাচ্ছে, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন শয্যা সংখ্যার নয় গুণের বেশি রোগী। অন্যদিকে, রোগীরা বলছেন, কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না তারা। চিকিৎসকরা বলছেন, স্বল্প জনবলে তারা কুলিয়ে উঠতে না পেরে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা দিতে। এছাড়া ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালের সামনের চত্বরে গাছতলায় পাটি বা চাটাই বিছিয়ে থাকছেন। গাছের সঙ্গে স্যালাইন টাঙিয়ে তা রোগীর শরীরে দেওয়া হচ্ছে এমন তথ্যও সামনে আসছে। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। এটা এড়ানো যাবে না যে, বৃষ্টি ও উজানের ঢল কমে আসায় বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছে। কিন্তু বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। চর্মরোগ, ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবন্দি মানুষ। অন্যদিকে, জানা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বয়স্করা। এছাড়া দুর্গত এলাকায় ত্রাণ না পৌঁছানোয় বাড়ছে ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট- এটাও খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের বিষয় আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একদিকে বন্যায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে; এই বিষয়গুলো যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, বন্যাকবলিত এলাকায় পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ- এটি কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।