আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সদ্য গঠিত অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে- এমন আলোচনায় সাম্প্রতিক সময়ে বারবার উঠে এসেছে। অন্যদিকে, আন্দোলনের সময় থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র-গুলির একটি বড় অংশ এখনো দুর্বৃত্তদের হাতে রয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গণহারে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ায় পলিটিক্যাল ক্যাডার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এ সুযোগ নিয়ে বৈধ অস্ত্র কিনেছে। যা পরবর্তী সময়ে তারা খুন, চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার করেছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে এসব বৈধ অস্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এতে বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী আহত ও নিহত হলেও ওইসব পলিটিক্যাল আর্মস ক্যাডাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। আর এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্সও স্থগিত করে সেগুলো থানায় জমা দেওয়ার জন্য ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় সরকার। তবে এরপরও এসব অস্ত্র খুব বেশি জমা পড়েনি বলে জানা যায়। ফলে, ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যৌথবাহিনী সমন্বিতভাবে এই বিশেষ অভিযান চালাবে বলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন।
আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথভাবে অভিযান পরিচালিত হোক একইসঙ্গে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী অস্ত্র-গোলাবারুদ জমা দেওয়ার শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে এই অভিযান সফল করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, এটাও আমলে নেওয়া দরকার, লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিতে বারবার সময় বাড়ানো হলেও আশানুরূপ সাড়া না মেলায় জনমনে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানা গেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি দুর্বৃত্ত বা পেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতে এসব অস্ত্র গেলে তা আশঙ্কাজনক- যা এড়ানোর সুযোগ নেই। এটাও লক্ষণীয় যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার সময় দেওয়ার পরও আশাতীত ফলাফল না পাওয়ায় লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ পেশাদার অপরাধীদের হাতে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হওয়া বিচিত্র নয়। তাই লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে সরকারের উচিত দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। ফলে আমরা বলতে চাই, বিশেষজ্ঞদের মতামত আমলে নেওয়া এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
উলেস্নখ্য, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপরই সারাদেশের বহু থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বন্ধ হয়ে যায় দেশের ৬৩৯টি থানার কার্যক্রম। টানা ১০ দিন চেষ্টার পর সব থানার কার্যক্রম চালু হয়। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ লুটপাট বা খোয়া গেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান জানার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে ঘটনার পরপরই পুলিশ সদর দপ্তর ছাত্র-জনতাসহ দেশবাসীর প্রতি লুণ্ঠিত অস্ত্র-গোলাবারুদ ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এছাড়া কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেরত দেন এবং দেরিতে জমা দেওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখান তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিতে বারবার সময় বাড়ানো হলেও আশানুরূপ সাড়া না মেলায় জনমনে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং যৌথবাহিনী সমন্বিতভাবে যে বিশেষ অভিযান চালাবে বলে যাচ্ছে, তা সফল করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।