পাঠক মত

আমরা মানুষ হতে পেরেছি কি?

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

তপন কুমার ঘোষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা বাঙালিরা সভ্য জাতি! কথাটা খুব একটা সত্য নয়। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। আমার মনে হয়, এই কথাটার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য ইতিহাস ঘাটার দরকার হবেনা। আপনারা যারা বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন, তারা হয়তো সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে এর অনেক নমুনা দেখতে পেয়েছেন। তারপরও আমি আমার ক্ষুদ্রজ্ঞান দিয়ে বিশ্লেষণ করে কিছু ঘটনা বা কথা আপনাদের মধ্যে তুলে ধরছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের ডাক দেওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ক্ষমতাসীনদের ভুল সিদ্ধান্ত আর দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ভুল বাক্য প্রয়োগের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই পরে রূপ নেয় অসহযোগ আন্দোলনে। এক পর্যায়ে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করেন ক্ষমতাসীন দলের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় দেশজুড়ে চলে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো বেশকিছু ভয়াবহ ঘটনা। যদিও অনেকেই এ ঘটনাগুলোকে ক্ষমতাসীনদের শাসনামলে তৈরি হওয়া সাধারণ মানুষের চাপা রাগের বহিঃপ্রকাশ বলেই আখ্যায়িত করেছেন। অবশ্য এ কথার সঙ্গে আমারও খুব একটা দ্বিমত নাই। তবে একটু গুরুত্ব সহকারে পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে আমার বলতে চাওয়া কথাগুলো আপনাদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের পদত্যাগের পরই গণভবনে লুটপাট, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ও বিভিন্ন সময় দেশের জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের প্রতিকৃতিতে অবমাননার মতো বেশকিছু ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনা স্বাভাবিক মনে হলেও হতে পারে। আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানি না, একটা ভিডিওতে দেখা যায় 'বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর দাঁড়িয়ে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিচ্ছে কয়েকজন তরুণ, আরেক ভিডিওতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর দাঁড়িয়ে তার মাথায় প্রস্রাব করছে এক ব্যক্তি।' হয়তো আপনি বলবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা ও তার কর্মকান্ডের ফলে এসব ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এটা বলে আপনি এতবড় অপরাধ এড়িয়ে যেতে পারেন না। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় আসার আগেই তিনি মারা গেছেন। পরাধীন বাংলাকে স্বাধীন করার পেছনে তার যে অবদান, এটা তার মেয়ের জন্য বাঙালি জাতি ভুলে যেতে পারে না। এসব ভুলে গেলে ইতিহাস কলঙ্কিত হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের রেখে যাওয়া কলঙ্কিত ইতিহাস পড়ে উপহাস করবে। এখানেই শেষ নয়! একটা ভিডিওতে দেখলাম, বেশকিছু তরুণ শহীদ মিনারের চূড়ায় উঠে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে দড়ি বেঁধে আনন্দ উলস্নাস করছে। এরপরও কি বলবেন বাঙালি সভ্য জাতি? ফেসবুকে ঢুকতেই একটা ছবিতে দেখলাম, সংসদ ভবনে ঢুকে এক ব্যক্তি চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর দুই পা তুলে মোবাইল ফোনে সেলফি নিচ্ছে, আর এক ব্যক্তি চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর দুই পা রেখে ধূমপান করছে। আগের বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলেও, এটাকে আপনি কী বলবেন? এটা নিশ্চয়ই বলবেন না, যে শেখ হাসিনা ও তার এমপি-মন্ত্রীরা এই জায়গায় বসতেন বলেই এসব ঘটনা ঘটেছে। না! এসব বলে আপনি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে পারবেন না। কারণ এটা সংসদ ভবন, শহীদ মিনার। একটা মুসলিম ধর্মাবলম্বীর কাছে মসজিদ যেমন পবিত্র, একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কাছে মন্দির যেমন পবিত্র, একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে প্যাগোডা যেমন পবিত্র, একজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর কাছে গির্জা যেমন পবিত্র, একটা জাতির কাছে সংসদ, শহীদ মিনার ঠিক ততটাই পবিত্র। কোনো অসাধু ব্যক্তি মসজিদ, মন্দিরে বসতেই পারে, তাই বলে কি আপনি মসজিদ, মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করবেন? জানি আপনি তা করতে পারবেন না। তাহলে সংসদ ভবনে কে ছিল তার জন্য আপনি তার পবিত্রতা নষ্ট করতে পারেন না। বলতে পারেন যে তখন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কোনো নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী সেখানে ছিল না। মসজিদ, মন্দির রক্ষা করার জন্য কি প্রসাশনের দরকার হয়? বলবেন না! তাহলে সংসদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য প্রসাশনের দরকার কেন হবে? ভিডিও ফুটেজে এটা স্পষ্ট যে সংসদ ভবনের ভিতরে তখন কয়েকশ মানুষ অবস্থান করছিল। কারও মনেই কি প্রশ্ন জাগে নাই, যেটা হচ্ছে সেটা ঠিক হচ্ছে না? কেউই কি পারত না, এসব ঘটনা থেকে ওইসব ব্যক্তিকে দূরে রাখতে? একটু ভেবে দেখবেন। কারণ ভাবার সময় এসে গেছে। আমার বর্তমান সরকার ও দেশবাসীর কাছে একটা আবেদন, সব বিষয় ভুলে যাবেন না। কারণ এসব ঘটনা শুধু দেশের ভিতরেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্ববাসীও দেখছে। আজ যদি আমরা এসব ঘটনা ভুলে যাই তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই লাঞ্ছনা সহ্য করতে হবে। আজ যদি আমরা এসব ঘটনা ভুলে যাই, বিশ্ববাসী আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসবে। কারণ ইতিহাসের চোখ কালা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না। আমি চাই না সামান্য কিছু মানুষের ভুলের মাশুল সমগ্র জাতি বহন করুক। তপন কুমার ঘোষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়