সাময়িক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়ে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই তথ্য প্রকাশ করেছে। আমলে নেওয়া দরকার, একটি দেশের অভ্যন্তরে এক বছরে চূড়ান্তভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজারে সামষ্টিক মূল্যই হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি। আগের বছরের তুলনায় পরের বছরে এ উৎপাদন যে হারে বাড়ে সেটি হচ্ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। ফলে যখন সাম্প্রতিক তথ্যে সাময়িক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া ও করণীয় নির্ধারণসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।
বলা দরকার জিডিপি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক। সঙ্গত কারণেই জিডিপি সংক্রান্ত চিত্র এড়ানো যাবে না। লক্ষণীয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় চূড়ান্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ ওই অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে সেটি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ওই হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরেরও চূড়ান্ত প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবের চেয়ে কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, শেখ হাসিনা সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ- যা পরে নামিয়ে আনা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। কিন্তু সাময়িক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সেই সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিবিএস বলছে, গত অর্থবছরে স্থির মূল্যে জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা- যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ৩২ লাখ ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, এ সময় কৃষি ও শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে; তবে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিল্পে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ- যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে। ফলে দেখা যাচ্ছে এ নিয়ে টানা চার অর্থবছর শিল্প প্রবৃদ্ধি কমতির ধারায় রইল। অন্যদিকে, বিবিএসের সর্বশেষ জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরের বছর ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পতনের ধারা অব্যাহত থাকে পরের দুই অর্থবছরেও। কৃষি খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ- যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২১ শতাংশে। উল্টো সামান্য বাড়ে সেবা খাতে। এ খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ; ২০২৩-২৪-এ এসে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।
আমরা বলতে চাই, সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করতে হবে একইসঙ্গে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যেখানে জিডিপি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক সেখানে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। বলা দরকার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর আসে মহামারি। তাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে যায় ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া দুঃসময় কাটিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতির দুর্দশার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার উপায় ছিল না বাংলাদেশেরও। ফলে প্রাথমিক হিসাবে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ জিডিপি অর্জিত হওয়ার ধারণা দেওয়া হলেও চূড়ান্ত হিসাবে তা ছয় শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সাময়িক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সামান্য বেড়ে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে- যা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।