সারাদেশে আজ ভয়াবহ অবস্থা। কেউ পানিবন্দি হয়ে কষ্ট পাচ্ছে, কেউ সেসব দেখে যন্ত্রণায় দিন পার করছে। একসঙ্গে দেশের কয়েকটি জেলা আক্রান্ত। ভয়াবহ বন্যা আর জলাবদ্ধতায় নাকাল দেশের মানুষ। দুঃখ, কষ্ট আর দুর্ভোগের শেষ নেই। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। এবারের বন্যার মাত্রা বেশ ভয়ংকর। এই বন্যায় ক্ষতির পরিমাণও অধিক হবে। এসব জেলার মানুষ ভালো নেই, ভালো নেই পুরো দেশের মানুষ। এই ভালো না থাকার গল্প কবে শেষ হবে, সেটাও বলা মুশকিল। সেই সঙ্গে কয়েকদিন টানা ভারী বর্ষণ। এতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে। এতে আশঙ্কা হচ্ছে আরও মারাত্মক কিছু হবে। তবে আশঙ্কা যেন সত্যি না হয়, সেই কামনা করি।
ভয়াবহ এই বন্যায় সবার নজর থাকছে মানুষ ও সম্পদের ক্ষতির দিকে। কিন্তু পশু-পাখিদের জীবন এবং পরিবেশও যে হুমকির মুখে, সেটি দেখার কেউ নেই। এই বন্যায় ফেনী, নোয়াখালীর বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মহাবিপদে পড়েছে পোষা ও বন্যপ্রাণীরা। এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগতভাবে গড়ে ওঠা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি ও হাঁসের খামার ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
গবাদি খামার, হাঁস-মুরগির খামার, কৃষি ভূমি ও দানাদার খাদ্য, নষ্ট খড় ও ঘাস ও মৃত পশু-পাখি মিলিয়ে মোট কত ক্ষতি হয়েছে, সেটার সঠিক হিসাব না আসলেও ধারণা করা যাচ্ছে, এটা অত্যাধিক হবে।
অনেকের মতে, দেশের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। ভারত তাদের বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের দেশে সব পানি ছেড়ে দেয়। যা আমাদের এসব অঞ্চলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে এই দায় আগামীতে সরকারের ওপরও বর্তাবে। ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের আরও শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। বিগত সরকার যেসব ভুল করেছেম সেসব ভুল যেন এই সরকার পুনরাবৃত্তি না করে, সেই প্রত্যাশা রাখি।
তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের কিছু মানুষ সর্বোচ্চ পর্যায়ে অমানুষ, অমানবিক হয়ে যায় এই সময়গুলোতে। বোট, নৌকা, ট্রলার কিংবা স্পিডবোট এসব যেন সোনার চাইতে বেশি দামি হয়ে উঠে। ভাড়া হয়ে উঠে ১৫-৫০ হাজার পর্যন্ত। মানুষ যখন পানিতে সবকিছু হারিয়ে জীবন বাঁচাতে ছুটছেন, তখন একদল পশু এসে ব্যবসা করছে মানুষের জীবন নিয়ে। ৫০-১০০ টাকার নৌকা ভাড়া ৪০-৫০ হাজার টাকা দাবি করে তখন সত্যি অবাক লাগে, তারা কি মানুষ নাকি পশু। সরেজমিন জানতে পারলাম, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বোট ভাড়া করতে গিয়ে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ৫ টাকার জিনিস ১০-১৫ টাকা হলেও মানা যায়। কিন্তু দুই হাজার শতাংশ বাড়িয়ে ১০০ টাকা দাম রাখা কতটা জঘন্য মনের কাজ, সেটা ভাষায় প্রকাশযোগ্য না। এ ছাড়াও একদল পশু ডাকাতি করছে। মীরসরাই, ফেনীসহ কয়েকটি স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। শুধু এতেই শেষ নয়, কেউ কেউ আবার ত্রাণও চুরি করছে। অসহায় সেজে ত্রাণ নিয়ে সেগুলো বিক্র করছে। কি চরম নোংরা বিষয়।
যেখানে বিভিন্ন সংগঠন, বাইরে থেকে মানুষজন গিয়ে টাকা-পয়সা, ত্রাণসহ ইত্যাদি সাহায্য দিচ্ছে, সেখানে কীভাবে এসব মানুষ নামক পশুদের বিবেক জাগ্রত হয় না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিলস্না, খাগড়াছড়ির মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতার অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। লেখক, গায়ক, অভিনেতা, সংগঠক বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করছে। অনেকেই সেসব টাকার হিসাবও দিচ্ছে অনলাইনে এসে। অনেকের আবার হিসাব নেই। কথা হচ্ছে, এসব টাকা নিজের ব্যক্তিগত খরচের জন্য নয়। তাই কেউ অসহায় মানুষের কথা বলে নিজের পকেট ভারি করবেন না।
অনেক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে মানুষকে সহযোগিতা করছে। যা সত্যি প্রশংসনীয়। এসব মানুষ আছে বলেই আজও বাংলাদেশ টিকে আছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি উন্নত দেশের আগে একটি মানবিক দেশ গড়া খুব জরুরি। যেখানে মনুষ্যত্ব নেই, মানবতা নেই- সেখানে উন্নয়ন দিয়ে কী হবে!
এই অমানবিকতার গল্প এখানে শেষ হতে পারত। কিন্তু শেষটা আরও ঘৃণ্য। এই কঠিন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে মানুষকে আরও ভয়ংকর সময় পার করতে হচ্ছে। একদিকে পানির স্রোত, অন্যদিকে ডাকাতের হানা। ভাবতেই কেমন যেন গা শিউরে উঠে। কী ভয়ংকর অবস্থা। মানুষ কতটা নির্দয় হতে পারে, সেটা এই বন্যা পরিস্থিতিতে বুঝতে পেরেছে অসহায় মানুষজন।
পরিশেষে বলতে চাই, আসুন মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই, মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাই। মনে রাখবেন, আজ আপনি অন্যের বিপদে ফায়দা লুটছেন, ক্ষতি করছেন, সেটা আপনার বিপদে অন্য কেউ করবে। মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না। আশা রাখছি, একদিন এসব অমানবিকরাও মানবিক হবে।
আজহার মাহমুদ
খুলশী-১, চট্টগ্রাম ৪২০২