মহানগর আওয়ামী লীগের ঢাকা দক্ষিণের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবে একাই একটানা ১৫ বছর যাবত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের (বর্তমানে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল) চেয়ারম্যান পদ নিজের দখলে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বোর্ডের অন্যান্য সদস্য নিয়োগ, নতুন নতুন কলেজ অনুমোদন, অবৈধভাবে তার দলের শিক্ষকদের পদোন্নতি, অধ্যক্ষ নিয়োগ, নতুন নতুন নিয়োগ বাণিজ্য, ভবন অবকাঠামো নির্মাণ বাণিজ্য, পরীক্ষায় নকল বাণিজ্যসহ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রায় হাজার কোটি টাকার অবৈধ অর্থ উপার্জনের তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দুদকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জানলেও তার বিরুদ্ধে কখনো কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে বিতর্কিত হয়েছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ মহান চিকিৎসা ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ৬৬টি ডিপেস্নামা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১টি সরকারি ও ১টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ৯ জন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসার কর্মরত, প্রায় দুইশত জন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক বিভিন্ন উপজেলা ও সদর হাসপাতালের হোমিওপ্যাথিক ইউনিটে কর্মরত, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিটি কেন্দ্রে হোমিওপ্যাথিক ইউনিটে চিকিৎসকরা কর্মরত, সরকারি-বেসরকারি বহু দাতব্য হোমিও চিকিৎসালয়ে চিকিৎসকরা কর্মরত কাউন্সিলে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত প্রায় এক লাখ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শিল্পের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ কর্মরত, সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজসহ ৬৬টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে শিক্ষক, চিকিৎসকরা কর্মরত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা পরিদপ্তর এবং বিকল্প চিকিৎসা পরিদপ্তর রয়েছে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো জনবল নেই, রিট ৫৩৫/২০১৯ এ মহামান্য হাইকোর্ট তাদের পর্যবেক্ষণে বিশ্বের ১১০টি দেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে এবং ওই মামলায় ভারতের আয়ূশ মন্ত্রণালয়ের আদলে হোমিওপ্যাথিসহ বিকল্প চিকিৎসা উন্নয়নে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় স্থাপনের জন্য আদালত সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। উপরোক্ত সার্বিক বিষয়ে দেখাশুনা ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল। ছাত্র, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে ২ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল আইন-২০২৩ পাস হওয়ার পর গত ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ গেজেট আকারে তা প্রকাশিত হয়েছে। বিগত প্রায় এক বছর যাবত অতিবাহিত হতে যাচ্ছে অথচ ওই আইনের ধারা ৮ ও ধারা ১১ অনুসারে কাউন্সিলের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট গর্ভনিং বডি ও ২৪ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী পরিষদ আজ পর্যন্ত গঠিত হয়নি- যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। হোমিওপ্যাথিক আইন-১৯৮৩ বিলুপ্ত হওয়ার পর নতুন আইনটির শর্তমতে পূর্বের আইন দ্বারা গঠিত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি নতুন আইনদ্বারা নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান গঠন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের ঐতিহাসিক জনবিপস্নবের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ পেয়েছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। '৫২-এর ভাষা আন্দোলন, '৬৯-এর গণ-অভু্যত্থান, '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, '৯০-এর স্বৈরাচার খেদাও আন্দোলন এবং সর্বোপরি ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে ১৮ কোটি জনতা। ওই আন্দোলনের সফল (ছায়া পড়েছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। ফলশ্রম্নতিতে তৎকালীন হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চরম দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায় অতি গোপনে পদত্যাগ করে পালিয়াছে। সব প্রতিষ্ঠানে অন্যায়কারী ব্যক্তিরাও ক্রমান্বয়ে পালানোর অপেক্ষায় আছে। আজ প্রায় ২০ দিন চেয়ারম্যানবিহীন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল। ফলে কাউন্সিলের কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ ৬৬টি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের বিগত দিনে অবৈধ কর্মকান্ডের ফলে বাস্তব পরিস্থিতির মোকাবিলা করা এবং সব ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে পড়েছে। সব প্রক্রিয়া সচল রাখার জন্য এখনই কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ অপরিহার্য। চেয়ারম্যান নির্বাচনে পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ইতোমধ্যে স্বেচ্ছায় আবেদনকৃত চিকিৎসকদের মধ্যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ (বিএইচএমএস) ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক যিনি (ক) সহকারী অধ্যাপকের নিচে নয় (খ) যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসভুক্ত আইন গ্রন্থ অর্গানন অব মেডিসিন ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিজ্ঞানে অধ্যাপনার দায়িত্বে ছিলেন বা আছেন (গ) যিনি প্রায় সব চিকিৎসকদের কাছে সর্বোজন শ্রদ্ধেয়, গ্রহণযোগ্য, সৎ এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব (ঘ) আইনের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সদস্য নির্বাচনে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষায় ডিগ্রি/ডিপেস্নামা অর্জনকারী চিকিৎসকদের প্রাধান্য দিয়ে দল নিরপেক্ষদের মনোনয়ন দিতে হবে (ঙ) মহিলা সদস্য ও বিভাগীয় চিকিৎসক প্রতিনিধি নির্বাচনে বিগত ১৭ বছর পূর্বে বিগত সরকারের নীতি অনুসরণে বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আইনসম্মতভাবে নিয়োগ/মনোনয়ন অপরিহার্য। বিভাগীয় শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালটের মাধ্যমে বিভাগীয় শিক্ষকদের নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন করা আবশ্যক। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তথাকথিত বিশ্ব দুর্নীতিবাজ একটানা ১৫ বছর একই ব্যক্তি অর্থাৎ ডা. দিলীপ কুমার রায় তৎকালীন সরকারের দুর্নীতিবাজ কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে বসে ৫ বার নিজে একটানা চেয়ারম্যান পদে বহাল ছিলেন এবং ওই বোর্ডের তথাকথিত কতিপয় সদস্যদেরও একই প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ে বসে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। একই প্রক্রিয়ায় যদি ওই সময়ের কোনো সদস্যদের নির্বাচন করা হয় তাহলে বৈষম্যবিরোধী হোমিওপ্যাথিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, ছাত্র-জনতা তা মেনে নেবে না। উপরন্তু দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের আপমর জনতার অতন্ত্র প্রহরী অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকাদায় ফেলার একটি নীল নকশার নামান্তর। সাবেক সরকারের আমলে বারবার মনোনীত একই ব্যক্তি ডা. দিলীপ কুমার রায়ের সচিত্র প্রতিবেদন গত ১০-০৬-২০২৪ ইং দৈনিক ইত্তেফাকে, ২৯-০৫-২০২৪ ইং দৈনিক আমার কাগজে, ২৫-০২-২০২৪ ইং দৈনিক ইনকিলাবে, ২৩-০৯-২০২০ দৈনিক নয়া দিগন্তে, ০৮-০৭-২০২১ ইং দৈনিক মানব জমিনে, ১৫-০৬-২০২৪, দৈনিক আমাদের সময়ে, ০৮-০৯-২০২৪ দেশ টিভি এবং ১৯-০৭-২০২১ মাই টিভিতে প্রকাশিত হওয়ার পরও তৎকালীন সরকার ওই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বারবার দুদক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে দিলেও কোনো কাজ হয়নি। এখনই ওই দুর্নীতিবাজকে আইনের হাতে সপর্দ করা সময়ের দাবি। এখন ও কী দুদক নীরব ভূমিকা পালন করবেন? তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী তৎকালীন বোর্ড সদস্য ডা. আব্দুর রাজ্জাক তালুকদারের দুর্নীতির প্রতিবেদন গত ১৬-০৯-২০২০ তাং দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আবার চেয়ারম্যান এবং তার আনুগত্য সদস্যদেরসহ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরে জমা দিয়েছেন। হোমিওপ্যাথিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, চিকিৎসক শিক্ষক সমাজ মনে করেন ওই দুর্নীতিবাজরা যেন আগামী দিনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিলে স্থান না পায়। বর্তমান সরকারের এবং বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিদের্শনা অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী দুর্নীতি করলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে নিতে হবে। আর কাউকে কোনো অপমান বা কোনো প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর না করার নির্দেশনা জারি হয়ে গেছে। আমরা হোমিওপ্যাথিক সমাজ অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখব। আইন নিজের হাতে তুলে নেব না। সবার কাছে সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হোমিওপ্যাথিতে সর্বোচ্চ (বিএইচএমএস) ডিগ্রি অর্জন করে অধ্যাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন/আছেন তাকে কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ/মনোনয়ন দিয়ে আপাতত কাউন্সিলের অচলায়তন অবস্থা সচল করা একান্ত আবশ্যক এবং বর্ণিত পরামর্শ ক্রমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সময়ের দাবি।
ডা. মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া : (বিএইচএমএস) (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) সহকারী অধ্যাপক (অব.), সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, উপদেষ্টা বাংলাদেশ অনলাইন হোমিওপ্যাথিক ফোরাম (বিওএইচএফ)