বন্যা পরিস্থিতি

মোকাবিলায় উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নোয়াখালীসহ দেশের ১১ জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এটা লক্ষ্য করা জরুরি যে, বেশিরভাগ রাস্তাঘাট, ফসলের খেত, গবাদি পশুর খামার ও শিল্পকারখানা থেকে পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়ায় প্রায় সব ধরনের কৃষিজ, ব্যবসায়িক এবং ক্ষুদ্র-মাঝারিসহ উৎপাদনশীল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সঙ্গত কারণেই সেখানকার সার্বিক অর্থনীতি এখনো স্থবির। বানের পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর এ সংকট সহসা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। উলেস্নখ্য, প্রশাসনিক সূত্রগুলো বলছে- অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের ২৪টি জেলার কৃষি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে দেশের ১১টি জেলার ৫৪১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতি ছাড়াও এসব অঞ্চলের বসতবাড়ি, অবকাঠামো ও ব্যবসাবাণিজ্যেরও ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, জেলাপর্যায়ে কৃষিবহির্ভূত অন্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। বিশেষ করে ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ অর্থনীতির বিভিন্ন উপখাত এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর আশপাশের জেলাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত। জানা যাচ্ছে, বসতবাড়ি ও অবকাঠামো মিলিয়ে এসব খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। আর কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি ছাড়িয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত বন্যায় দেশের আর্থিক ক্ষতি অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও টানা দেড় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান বন্যায় অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে যে বিপুল অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে তা হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে। আমরা বলতে চাই, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, বন্যা পরবর্তী সময়ে যে শঙ্কাগুলো উঠে আসছে তা আমলে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। পানিবাহিত রোগ, বিশুদ্ধপানি, পর্যাপ্ত ত্রাণ এই বিষয়গুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পরও কৃষি ও ব্যবসাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করতে অনেকটা লম্বা সময় লাগবে। কেননা, বন্যার্ত এলাকার ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট মেরামত করার আগে পরিবহণ চলাচল অসম্ভব। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাঁচামাল, ফসলের বীজ-সার, ব্যবসায়িক মালামাল আনা-নেওয়া কঠিন হবে। এছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, খামার ও শিল্পকারখানা বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা সংস্কারের আগে চালু করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ফসলের খেত চাষযোগ্য করতে তুলতেও অনেকটা সময় লাগবে। সব মিলিয়ে বন্যাকবলিত এলাকার অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি সচল করে তুলতে আরও এক দেড় মাস সময় লাগবে বলে আলোচনা উঠে আসছে। আমরা বলতে চাই, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টি হলো বন্যার্ত এলাকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র শিল্পমালিক, গবাদি পশু-মৎস্য খামারি ও কৃষকদের অনেকের পক্ষেই নতুন করে পুঁজি জোগাড় করা অসম্ভব। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ না পেলে তাদের আগের কর্মক্ষেত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ঋণ নিয়ে যারা পুঁজি বিনিয়োগ করে বন্যায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন তাদের অনেকের ভিটেমাটি বিক্রি করতে হবে। এতে বন্যার্ত এলাকার নিম্নবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশ অতি দরিদ্রের সারিতে গিয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তারা। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে তৎপর হতে হবে। এ ছাড়া সমাজে যারা ধনাঢ্য তাদের এগিয়ে আসতে হবে। দলমতনির্বিশেষে সবাইকে বানভাসিদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ মানবিক তৎপরতা চালাতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে তা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।