নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনুন
প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জুবায়ের আহমেদ
চলতি বছরের জানুয়ারিতে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করার সাত মাসের মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত বছরগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ব্যাপক তফাত থাকায় নাগরিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল দেশব্যাপী। নিয়মিত চড়া মূল্যে নিত্যপণ্য ক্রয়ের মধ্যেই প্রায় সময় পেঁয়াজের মূল্য ২৫০ টাকা, ভোগ্য তেলের মূল্য প্রতি লিটার ১৯০-২০০ টাকা, বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২২০ টাকা, বয়লার ডিম ১৬০ টাকা ডজন পর্যন্ত বিক্রির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পণ্যমূল্য কমানোর জন্য আহ্বান জানানো হলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। নিত্যপণ্যের চড়া মূল্যের জন্য সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করা গেলেও সেই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি কখনোই।
আশার কথা, সরকার পরিবর্তনের পর সিন্ডিকেট ভাঙার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। সাধারণ নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের মূল্য নির্ধারণের জন্য কথা হচ্ছে সর্বত্র। ইতোমধ্যে ফেসবুকে সেনাবাহিনীর নির্ধারিত পণমূল্য শিরোনামে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য তালিকা প্রকাশ পেলেও এই পণ্য তালিকা সঠিক নয়; অর্থাৎ গুজব হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কেননা, বাজারে এখনো পূর্বের ন্যায় দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে সব পণ্য। দোকানিদের ভাষ্যমতে, 'সিন্ডিকেটের কারণে দাম বৃদ্ধি হয়েছে, আমরাও খুব বেশি লাভ করতে পারি না, তাই পণ্যের দাম বৃদ্ধি বা কমলে আমাদের আলাদা কোনো লাভ-ক্ষতি নেই, তবে পণ্যের মূল্য কমলে আমাদের বাড়তি মূলধনজনিত সমস্যা কমে যায় এবং ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দ্যে বাজার করতে পারে।'
বাজারে এখনো ভোগ্য তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, রসুনের কেজি ২০০ টাকা, বয়লার ডিম ১৬০ টাকা, চিনি ১৫০ টাকা, মসুর ডাল ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি যে আলু শতভাগ দেশেই উৎপাদন হয়, সেই আলুর স্বাভাবিক মূল্য সিজনে ২০ টাকা এবং অফসিজনে ৩০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নিয়মিত। ডিমের মূল্য ৮০ টাকা ডজন থেকে একলাফে ১৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে এবং বর্তমানে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নিয়মিত, গরুর মাংস ৬০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় দীর্ঘদিন যাবত বিক্রি হওয়ার পর বিগত কয়েক মাস ধরে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির মূল্য স্বাভাকি মূল্যের চেয়ে দুইগুণ বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও প্যাকেটজাত সব পণ্য স্বাভাবিক দামের তুলনায় ৫০-১০০ ভাগ বৃদ্ধি করে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পণ্য উৎপাদনকারী কৃষক-শ্রমিকরা পাচ্ছেন না ন্যায্য মূল্য।
এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান থাকবে, নিত্যপণ্যসহ মৌলিক অধিকারের অন্যতম সব রকম খাদ্যপণ্যের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের নতুন মূল্য বিষয়ে দেশব্যাপী প্রচারণা চালাতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এনে জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে হবে।
জুবায়ের আহমেদ
সাবেক শিক্ষার্থী
ডিপেস্নামা ইন জার্নালিজম
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)
কাঁটাবন, ঢাকা।