সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, মিয়ানমারে রাখাইনের মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বিমান হামলাও। এতে একদিনে রাখাইনে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, অন্যদিকে সীমান্তের এপারে বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যেও বাড়ছে আতঙ্ক। ফলে এই আতঙ্কের বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
তথ্য মতে, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত রাখাইনের মংডুতে তুমুল সংঘর্ষে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তজুড়ে বারবার কেঁপে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার (মংডুতে) রোহিঙ্গারা টিকতে না পেরে প্রাণে বাঁচতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আবার অনেকে সীমান্ত দিয়ে এপারে প্রবেশের অপেক্ষা করছে। তবে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না করতে পারে, সে জন্য সীমান্ত-নাফনদে বিজিবি-কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সীমান্তে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিতে হবে এবং সতর্কতাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
উলেস্নখ্য, টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেছেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তর কাছাকাছি হওয়ার কারণে বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। সে দেশে চলমান যুদ্ধের কারণে সীমান্তে বিকট শব্দ ভেসে আসছে। তবে সীমান্ত অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়া জানা যাচ্ছে এদিকে খারাংখালী, টেকনাফ, পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদীর মোহনা ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের মুহুর্মুহু শব্দ। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি, সীমান্তের লোকজন বলছে, দীর্ঘদিন বন্ধের পর এই প্রথম কোনো বড় ধরনের মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ। টেকনাফ সীমান্তের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমানের হামলার কারণে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঘুমাতে পারেননি। এমন বিকট শব্দ আগে কখনো শুনেননি বলেও জানিয়েছেন। অন্যদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে ১০-১৫ মিনিট পরপর মর্টার শেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল বলেও একজন জানিয়েছেন- যার কারণে তারা আতঙ্কিত হয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। তথ্য মতে, এতদিন সংঘর্ষ বন্ধ থাকলেও বুধবার রাতে নতুন করে বেশি বিস্ফোরণ হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকে বজ্রপাতের মতো বিকট শব্দ আর কালো ধোঁয়া দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে চলা সংঘাতের আঁচ এসে লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলেও। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, মিয়ানমানের ঘটনার দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। এছাড়া সীমান্তে অনুপ্রবেশের বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার সীমান্তে আতঙ্কের যে ঘটনা ঘটছে তা বিবেচনায় রেখে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে- যা এড়ানো যাবে না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে- সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।