শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্ব সঠিক পদক্ষেপ নিন

  ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্ব সঠিক পদক্ষেপ নিন

বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে বেকার সমস্যা। দিনে দিনে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রবাদে আছে, কর্মহীন জীবন হতাশার কাফনে মোড়া। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কেউ যদি বেকার বা কর্মহীন থাকে তা হলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। বলা হয়ে থাকে বেকার মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ব্যক্তির নিজের কাছেও এখন বোঝা। দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারণে হতাশায় ভোগে তরুণরা আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। অনেকেই আবার নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে যে সামাজিক অবক্ষয় চরমে এর প্রধান কারণ বেকারত্ব। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সুতরাং, বেকার লোক সুযোগ পেলে যে কোনো অপরাধ সংঘটিত করতে পারে।

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক তথা এপ্রিল-জুন সময়ে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশে- যা আগের বছরের একই সময়ে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশের তুলনায় শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, দেশে বেকারত্বের হার এ সময়ে ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে এসেছে। আর লিঙ্গভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুরুষদের মধ্যে গত তিন মাসে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশে- যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৪ এর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ফলাফল বুধবার প্রকাশ করেছে বিবিএস।

এই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক বছরে দেশে ১০ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থান কমেছে। কাজের সংস্থান না থাকায় শ্রমবাজারে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যাও কমেছে প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার। এক বছরে কৃষি খাতে ২ লাখ ৩০ হাজার কর্মসংস্থান কমে আসার বিপরীতে শিল্প খাতে বেড়েছে প্রায় ২ লাখ কর্মসংস্থান। তবে এককভাবে সেবা খাতে প্রায় ১০ লাখ ৪০ হাজার কর্ম কমেছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। কয়েক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন জটিলতা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে আসাসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে কর্মসংস্থান কমছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। এসব সমস্যা কাটিয়ে দেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়টি বর্তমানের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলেও মনে করেন তারা।

এটা সত্য, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। সে কারণেই প্রচুর লোক প্রতি বছর বিদেশে পাড়ি জমায়। কাজের সন্ধানে বিদেশে যাওয়া এই শ্রমিকদের অনেকে দক্ষ, অনেকে অদক্ষ। অনেকে আবার তেমন লেখাপড়াও জানেন না। প্রতারক চক্র এই অদক্ষতা ও শিক্ষাগত দুর্বলতার সুযোগ নেয়। এই সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে বিদেশগামী শ্রমিকদের সঙ্গে। নানা ছুতোয় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ঘটনা তো অহরহই ঘটে। পাশাপাশি এক কাজের কথা বলে শ্রমিকদের অন্য কাজ দেওয়া হয়। যে সুযোগ-সুবিধা ও বেতনের কথা বলা হয় বা চুক্তি হয়, সেখানেও প্রতারণার শিকার হতে হয় শ্রমিকদের। দেশের অর্থনীতিকে সচল ও দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে যেসব খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এর মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা অন্যতম। কেবল বিদেশে শ্রমবাজার শক্তিশালী করলেই বেকারত্ব দূর হবে না, অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণে ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে শ্রমের বাজারকে আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে