শিক্ষাপদ্ধতি হোক সেশনজট মুক্ত
শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত ও দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ও হতাশা বাড়ে। তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে।
প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সেশনজট বর্তমানে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি জটিল সমস্যা। শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের শিক্ষা সমাপ্ত করতে না পারার অর্থ সেশন জট। যার ফলে, তাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হয়। যা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি তাদের পেশাগত জীবনে প্রবেশেও বিলম্ব ঘটায়। একজন শিক্ষার্থী দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে; ডানা মেলে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছায়। পাশাপাশি বাবা-মা আর পরিবারের মানুষও এক নিদারুণ একবুক স্বপ্ন বুনে। স্বপ্ন, আশা সব যখন সেশন জটের মতো কালো ছায়া গ্রাস করে, তখন শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। যার একটি অনন্য উদাহরণ সেশন জট। দীর্ঘ প্রায় এক মাসের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, নয় দফা এবং সর্বশেষ এক দফা। দেশ থেকে স্বৈরশাসক হটানোর পর নতুন উদ্যোমে দেশ গড়ার লক্ষ্যে হাজারও তরুণ-তরুণী। ঠিক এমন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলন শেষ হওয়া এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ক্যাম্পাস খোলা এবং ক্লাস, পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতন হওয়ার পর পরই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য থেকে শুরু করে কোষাধ্যক্ষ এমনকি হল প্রভোস্টরাও পদত্যাগ করছেন। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে পড়েছেন অভিভাবক শূন্য। একরকম যেন নিরাপত্তার শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্যাম্পাসে ফিরলেও নেই কোনো ক্লাস, পরীক্ষা শুরু হওয়ার তৎপরতা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কমিটি সমন্বয়ক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে কয়েক দফায় মিটিংয়ে বসলেও উলেস্নখযোগ্য কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। তারই রেশ ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন নতুন আতংক সেশন জট। একদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে পূর্ব থেকেই সেশন জটের কবলে রয়েছে। অন্যদিকে, বিভাগগুলোর পরিকল্পনাবিহীন কার্যক্রম, ক্লাসরুম সংকট, শিক্ষকদের অপর্যাপ্ত, অতিরিক্ত একাডেমিক ছুটি, শিক্ষকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি, প্রশাসনিক জটিলতা, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতাসহ নানাবিধ বিষয়কে সেশন জটের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। উপরন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরবর্তী সময় যেন শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা! যেখানে প্রশাসনিকভাবে স্নাতক শেষ করার জন্য চার বছর সময় নির্ধারণ হয়ে থাকলেও কিছু কিছু বিভাগে ছয় এমনকি আট বছরও সময় লেগে যায়। শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত ও দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ও হতাশা বাড়ে। তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে। যা একাডেমিক পারফরম্যান্সকেও প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত টিউশন ফি, আবাসন ও অন্যান্য খরচের কারণে শিক্ষার্থীদের পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজেদের আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলাফলস্বরূপ অনেক শিক্ষার্থীই এই অবস্থা মেনে নিতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে; এমনকি আত্মহননের পথও বেছে নেন অনেকেই। অনেক বিশ্লেষক, উচ্চশিক্ষায় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের সুইসাইডের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে এটিকে আখ্যায়িত করে থাকেন। এসব সমস্যা নিরসনের জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি, শিক্ষকদের সঙ্গে সমঝোতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ক্যালেন্ডার সংস্কার এবং কঠোরভাবে তা অনুসরণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত অনতিবিলম্বে পূর্বের সেশন জট নিরাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সক্রিয় করে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা। তবেই এই নতুন স্বাধীনতায় শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যোমে স্বপ্ন বুনতে পারবে। আরিফা সেতু : নবীন কলাম লেখক