নারী শিশু নির্যাতন রোধে সঠিক পদক্ষেপ জরুরি
প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
সমাজে নারীর প্রতি মর্যাদাপূর্ণ মনোভাব না থাকায় জুলাই মাসের পরিস্থিতিতেও নারী ও শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসেবে আক্রান্ত হয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় গত ১৩ জুলাই পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হন এক নারী (৩১)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) তাকে ভর্তি করা হয় ১৭ জুলাই। স্বামীর হাতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আরেক নারী ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ওসিসিতে আসেন ২৪ জুলাই। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুসারে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে উত্তাল জুলাই মাসেও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা থেমে ছিল না। পরিস্থিতির কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলা করতে দেরি হয়েছে। থানায় পুলিশ সদস্য কম থাকা বা না থাকার কারণে সেবা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের সম্মান না থাকায় জুলাই মাসের পরিস্থিতিতেও নারী ও শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসেবে আক্রান্ত হয়েছে।
কেবল জুলাই মাসে ২৫৫ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। নির্যাতনের শিকারের অর্ধেকই শিশু, ১২৪ জন। ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে ৬২টি। এ ছাড়া ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যার ২টি এবং ধর্ষণচেষ্টার ২০টি খবর প্রকাশিত হয়েছে। জুলাই মাসে ১১ ধরনের নির্যাতনে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে কল গ্রহণ করা হয়েছে ২ হাজার ৩৭২টি।
উলেস্নখ করা প্রয়োজন, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। আন্দোলন বিক্ষোভের সময় পুলিশ মাঠে বেশি থাকায় থানায় অন্যান্য অভিযোগ গুরুত্ব পাচ্ছিল না। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হয়। নির্যাতনের বিষয়ে কল করেও ভুক্তভোগীরা সহায়তা পাচ্ছিলেন না। সরকারের পতনের দিন থেকে থানা আক্রান্ত হওয়া শুরু করলে পুলিশনির্ভর ৯৯৯ সেবায় পুরোপুরি ধস নামে। ১২ আগস্ট পর্যন্ত এ সেবা কার্যত বন্ধ ছিল। ওসিসিতে ভর্তি কার্যক্রম মাঝে বন্ধ ছিল। ১০ আগস্ট থেকে আবার নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু ভুক্তভোগী ওসিসিতে ভর্তি হতে শুরু করে। জুলাই মাসে অনেক ভুক্তভোগী পরিস্থিতির কারণে ওসিসিতে আসতে পারেননি উলেস্নখ করে ওসিসির আইন কর্মকর্তা তাহমিনা নাদিরা। তিনি বলেন, কিছু ঘটনায় কয়েকদিন পর মামলা হয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সেবা না পাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯ এ কলের সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। তবে কল বাড়লেও প্রায় সারাদেশেই থানা-পুলিশ আক্রান্ত হওয়ায় সেবা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হেল্পলাইন ১০৯ এর তথ্য অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে কল এসেছিল সাড়ে ৭৪ হাজার। জুলাই মাসে কল আসে ৮২ হাজারের বেশি। তবে পরিস্থিতির সুযোগে 'রাজনৈতিক ইসু্য' বানিয়েও ব্যক্তিগত আক্রোশ দেখিয়েছেন অনেকে। এ ধরনের ঘটনায় ভয়ে অনেক পরিবার মেয়েদের বাড়ি থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে হবে। এটা যে বড় ধরনের সামাজিক সমস্যা, তা স্বীকার করে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আমরা মনে করি এই চিত্র বদলাতে হবে যে কোনো উপায়ে। না হলে পারিবারিক ও সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে অতিমাত্রায়। তখন আর করার কিছু থাকবে না। সুতরাং, সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন। পাশাপাশি দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াও জরুরি।