শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

বন্যা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা শুধু সরকারের কাজ নয় এ কাজ আমাদের সবার। সুতরাং, বন্যা পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে নানান পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় এর ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ
  ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বন্যা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন

ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থান গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে। পাশে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। দেশের ভেতর দিয়ে ছোট বড় মিলে প্রায় ২৩০টি নদী প্রবাহিত এবং এসব নদীর উৎপত্তি ভারতে। সুতরাং, বলায় যায় বাংলাদেশ একটি ভাটির দেশ। মূলত এজন্যই বাংলাদেশে প্রকৃতির দুর্যোগের মধ্যে বন্যার প্রকোপ বেশি। সাধারণত বন্যা একটি মৌসুমি দুর্যোগ প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে বন্যা হয়ে থাকে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বন্যা হয়ে থাকে- যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হয়ে থাকে- তবে ভয়াবহ রকমের ধ্বংসাত্মক বন্যার পরিমাণ বেশি। প্রতি বছরের বন্যার জরিপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এখন পর্যন্ত ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক বন্যা হয়েছে ১৯৬৬, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৭, ২০২২ এবং সর্বশেষ ২০২৪। অর্থাৎ ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতি ১০ বছরে একবার ভয়াবহ বন্যা হলেও ২০২২ এবং ২০২৪ সালে অর্থাৎ প্রতি ২ বছরে একবার করে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। অর্থনীতির দিক থেকে সৃষ্টিলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ একটি পিছিয়ে পড়া দেশ। দেশে এত বিপুল পরিমাণ প্রকৃতির সম্পদ থাকার পরেও অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে বন্যা একটি কারণ। প্রতি বছর বন্যার কারণে যে পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয় তা অকল্পনীয়। শুধু যে ফসলের ক্ষতি হয় তা কিন্তু নয়, পাশাপাশি নানান ধরনের স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প ও মানুষের বসতবাড়ির ক্ষতি হয়। বন্যা যে একটি দুর্বিষহ দুর্যোগ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০২২ সালে হওয়া সিলেটের বন্যায় আমরা এর ভয়াবহতা দেখতে পেরেছি সর্বশেষ এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের বন্যায় আমরা আবারও এর ভয়াবহতা দেখতে পারতেছি। ফেনী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ প্রায় ১০ জেলায় বন্যার এই ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট সবকিছুই পানির নিচে। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ১০ জেলায় প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ পানি বন্দি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ১৯৬৬ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বছরের পর বছর এমন ভয়াবহ বন্যার শেষ কোথায়?

বন্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বন্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ দুইভাবে নেওয়া যায়। একটি হলো স্থায়ী পদক্ষেপ এবং অপরটি হলো তাৎক্ষণিক বন্যা মোকাবিলার জন্য অস্থায়ী পদক্ষেপ। অস্থায়ী পদক্ষেপগুলো সরকার এবং ব্যক্তি উভয়ে নিতে পারে। যেমন শুকনো খাবার সংগ্রহ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য স্প্রিরিট বোর্ড বা নৌকা সংগ্রহ, উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করা, যে যার অবস্থান থেকে বন্যার্তদের জন্য সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। তবে অস্থায়ী পদক্ষেপ দিয়ে তাৎক্ষণিক মানুষকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারলেও সব থেকে বেশি কার্যকর স্থায়ী পদক্ষেপ। নিচে কয়েকটি স্থায়ী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

\হপ্রথমত, আমরা জানি আমাদের দেশে বন্যা হয় মূলত উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে। আর আমাদের উজান ভারত। উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্য মতে ভারত বাংলাদেশের প্রায় ৫৪টি নদীতে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করেছে। এ সব অবৈধ বাঁধের মাধ্যমে ভারত গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি আটকে রেখে তাদের দেশে পানির জোগান দিচ্ছে এতে বাংলাদেশ অংশে পানির অভাবে ফসল হচ্ছে না এবং নদীগুলো পানির অভাবে ভরাট হচ্ছে আবার বর্ষা মৌসুমে কোনোরকম সতর্ক সংকেত ছাড়াই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি করতেছে। এতে বাংলাদেশ সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমন অবস্থায় ভারতের সঙ্গে পানির ন্যায্য হিস্যা করা জরুরি। ভারত যদি পানির ন্যায্য হিস্যাকে গুরুত্ব না দেয় তবে বাঁধের বিপরীতে বাঁধ দেওয়া কিংবা আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া বর্তমান সময়ের দাবি। যদিও এই পদক্ষেপে দুই দেশের মধ্যে খারাপ সম্পর্ক তৈরি হবে তারপরও দেশের মানুষের স্বার্থে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সরকারকে কঠোর হওয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত, নদী খনন করা বন্যা নিয়ন্ত্রণের একটি স্থায়ী পদক্ষেপ হতে পারে। নদী খননের মাধ্যমে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করলে নদীর অধিক পরিমাণে পানি ধারণ করতে পারবে এতে সহজে বন্যা হবে না অথবা হলেও এর ভয়াবহতা হ্রাস পাবে।

তৃতীয়ত, সরকারের উচিত বন্যাকবলিত এলাকায় অধিক পরিমাণে গাছ রোপণের পদক্ষেপ নেওয়া। গাছ প্রতক্ষভাবে বন্যা মোকাবিলা করতে না পরলেও পানির প্রবাহকে বাধা প্রদানের মাধ্যমে বন্যার ভয়াবহতা হ্রাস করবে।

এছাড়াও স্থায়ী পদক্ষেপের মধ্যে আর একটি অন্যতম পদক্ষেপ হলো বন্যাকবলিত এলাকায় পূর্ব থেকেই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে রাখা। এতে বন্যার ভয়াবহতা কিছুটা হলেও কমবে। পাশাপাশি বন্যার সময় উদ্ধার অভিজাত পরিচালনার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম সরবরাহ করে রাখা।

সর্বোপরি বাংলাদেশ আমাদের সবার। এ দেশ একটি বন্যাকবলিত দেশ। এখানে প্রায়শই বন্যা হয়ে থাকে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা শুধু সরকারের কাজ নয় এ কাজ আমাদের সবার। সুতরাং, বন্যা পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে নানান পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় এর ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

\হ

মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে