দেশের মানুষ মূল্যস্ফীতির তীব্র চাপ অনুভব করছে- এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছিল। এছাড়া এটাও স্মর্তব্য, জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ- যা দেশের ইতিহাসে এভাবে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি আর দেখা যায়নি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের বিরাজমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার আরেক দফা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তথ্য মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আন্তঃব্যাংক থেকে ব্যাংকের ধারে ব্যবহারিত উপকরণে সুদ ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়। এর ফলে, এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারের সুদহার হবে ৯ শতাংশ। আন্তঃব্যাংকে ধারের সর্বোচ্চ সুদহার হবে সাড়ে ১০ আর সর্বনিম্ন সাড়ে ৭ শতাংশ। রোববার মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত ৮ মে সর্বশেষ নীতি সুদহার বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, মূল্যস্ফীতি বাড়লে বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি না থাকলে তা অত্যন্ত উৎকণ্ঠাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এর আগে বিশ্লেষকরা বলেছেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর; ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্তরা সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়েন। এছাড়া এটাও আলোচনায় এসেছে যে, গত দুই বছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিতজীবনে। ফলে যখন জানা যাচ্ছে, দেশের বিরাজমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার আরেক দফা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; তখন এটি আমলে নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে তা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত ছিল ৯ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর গত বছরের জুলাই থেকে সুদহার নির্ধারণে প্রথমে 'স্মার্ট' পদ্ধতি চালু হয়। স্মার্টের সঙ্গে সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার নির্ধারিত হয়ে আসছিল। এতে গত এপ্রিলের সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছিল ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে গত ৮ মে আইএমএফের শর্ত মেনে একদিনে অর্থনীতির তিন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওইদিন গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, নীতি সুদহার বাড়ানো হয় এবং ডলার দরে 'ক্রলিং পেগ' চালু করে ১১৭ টাকা করা হয়। ডলারের এ মধ্যবর্তী দরের সঙ্গে এক শতাংশ যোগ করে ডলার বেচাকেনার সুযোগ ছিল। এক্ষেত্রে এটাও আমলে নেওয়া দরকার, ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর ডলারের ১১৭ টাকা মধ্যবর্তী দরের সঙ্গে আড়াই শতাংশ যোগ করে ১২০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রির সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার আরও বাড়বে। জানা যাচ্ছে, মূলত চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদহার ও ডলারের দর বাড়ানো হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামগ্রিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা জরুরি। এর আগেও বারবার মূল্যস্ফীতির বিষয়টি সামনে এসেছে। এমন আলোচনা উঠে এসেছিল যে, মূল্যস্ফীতির পেছনে বিশ্ববাজারের প্রভাব আছে যেমন, তেমনি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনারও ত্রম্নটি আছে। কারণ হিসেবে জানা গিয়েছিল, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ হয় না। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সিন্ডিকেট আছে, আছে মধ্যস্বত্বভোগী- এই আলোচনাও নানা সময়েই সামনে এসেছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অভিযোগও উঠেছে- যা আমলে নিতে হবে। জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ এবং দেশের ইতিহাসে এভাবে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি আর দেখা যায়নি- এই বিষয়টিও এড়ানোর সুযোগ নেই। সর্বাত্মক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দেশের বিরাজমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।