বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের 'বিপস্নবী জেনারেশন' হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই জেনারেশনের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ প্রায় দেড় দশকের দুঃশাসন, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তি পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এক দীর্ঘ সময় ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে অক্ষম ছিল এবং স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগও তাদের অনুপলব্ধ ছিল। এই দেশের জনগণ বেশ কয়েকটি বিতর্কিত নির্বাচনের সাক্ষী হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন এবং জোসেফ স্টিগলিজসহ ১৭৬ জন বিশ্ব নেতা একটি চিঠি প্রকাশ করেন, যেখানে নির্বাচনের 'বৈধতা নেই' বলে দাবি করা হয়। ২০১৮ এর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে লেভেল পস্ন্যাইন ফিল্ড না থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি জানিয়ে ৩১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের নির্বাচনও ছিল বিতর্কিত একটা নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট একটি বিবৃতিতে উলেস্নখ করেছে যে, ২০২৪ সালের বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। একইভাবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন অফিস এই নির্বাচনকে গণতন্ত্রের নূ্যনতম মানদন্ড পূরণে ব্যর্থ হিসেবে অভিহিত করেছে। দ্য ইকোনমিস্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কার্যত একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পর পর তিনটি বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল। প্রতিটি বিতর্কিত নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে সমাদৃতির সিঁড়ি হারাতে থাকলেও, প্রতিবেশী মহারাষ্ট্র সরকার তাদের প্রতি প্রদর্শন করেছে অকুণ্ঠ সমর্থনের সুর। যেন অব্যক্ত এক বন্ধুত্বের অমোঘ চুম্বন, যার ছায়ায় মুছে গিয়েছে গণতন্ত্রের সোনালি রশ্মি। মহারাষ্ট্রটি বাংলাদেশের মানুষের কথা চিন্তা না করে, চিন্তা করেছে একটি দলের কথা। ফলে, তাদের পররাষ্ট্র নীতি হয়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দলের। তাদের অন্ধ সমর্থনের কারণে আওয়ামী লীগ ভোট ছাড়াই দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকতে সক্ষম হয়েছিল। ভোটের অভাব একটি রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে- যার ফলে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এক বিশাল ফ্যাসিস্ট শাসনের রূপ নিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট শাসকদের মতাদর্শ বিরোধী দল ও মতের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে না এবং আওয়ামী লীগও এই বৈশিষ্ট্যের ব্যতিক্রম ছিল না। দীর্ঘ ১৬ বছরের অবৈধ শাসনকালে, গুম, খুন এবং হয়রানির একটি কঠোর রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার প্রধান শিকার ছিল বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা। ফলস্বরূপ, দেশের জনগণের মধ্যে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে একটি গভীর মনোভাব গড়ে উঠেছিল : সরকারের সমালোচনা নিষিদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা অপরাধ, আওয়ামী লীগ মতাদর্শের বাইরে মেধার মূল্যায়ন হয় না, বিরোধী দলের নির্যাতন বৈধ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আইন ও শাস্তির ঊর্ধ্বে। এই পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল, তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের উপায় ছিল না। তারা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিল, ঠিক সেই সময়ে এক বিপস্নবী জেনারেশন উদ্ভাসিত হলো অধিকার আন্দোলনের মশাল নিয়ে। এই নতুন প্রজন্ম গঠন করল 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামে একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা সারাদেশে সর্বজনীন হয়ে ওঠে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই অকুণ্ঠ হৃদয়ে সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল। এভাবে আন্দোলনের মাত্র ছত্রিশ দিনের মধ্যে তারা একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে শক্তির উজ্জ্বলরূপে পরিণত করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হলো। যেন এক অদম্য তরঙ্গের মতো, জনগণের সমর্থন ও প্রতিরোধের শক্তি একত্রিত হয়ে রাজনৈতিক অন্ধকারে আলো ফেলল।
এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন এমন একটি প্রজন্মের সদস্যরা, যাদের 'জেনারেশনকে জেড' বা 'জেন জি' বলা হয়। জেনারেশন জেডের সদস্যদের জন্ম ১৯৯৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে। ফলে তাদের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যের বয়স ২৮ বছর এবং কনিষ্ঠ সদস্যটির বয়স ১২ বছর। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশ এই প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত- যার মধ্যে একটি উলেস্নখযোগ্য অংশ ছাত্রছাত্রী এবং কিছু অংশ সম্প্রতি শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেছে। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী, জেনারেশন জেডের চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে : ডিজিটাল অভ্যস্ততা, প্রযুক্তিগত সান্ত্বনা, দ্রম্নত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং মাল্টিটাস্কিং সক্ষমতা। আবার অস্ট্রেলিয়ান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকক্রিন্ডল রিসার্চের তথ্যানুসারে, এই প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে দেখা যায় স্বতন্ত্র চিন্তা, সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতা, অন্যদের সঙ্গে সংযোগের নতুন উপায় এবং নির্ভুল তথ্যভান্ডার। এই দুই বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছে, সেগুলোর প্রতিটি আমরা আমাদের দেশের জেন জির মাঝে স্পষ্টভাবে দেখতে পাই। যেন তারা এক আশ্চর্য ক্যানভাসে আঁকা চিত্রের মতো, সেসব বৈশিষ্ট্য আমাদের প্রজন্মের প্রতিটি ধাপে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। জেনারেশন জেডের প্রজ্ঞা, নেতৃত্বের দক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রম্নতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ ছিল কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে গণঅভু্যথানের রূপ দেওয়া। তাদের আন্দোলনের কৌশল, সদস্যদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন, তথ্য বিনিময়ের দক্ষতা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, গণতান্ত্রিক কর্মসূচির প্রয়োগ, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার, স্বতন্ত্র চিন্তা এবং বিশাল তথ্য প্রবাহের মধ্যেও নির্ভুল তথ্য সংরক্ষণ- এই সমস্ত গুণাবলি তাদের সাহসিকতা ও জীবনকে বাজি রেখে আন্দোলন পরিচালনার দক্ষতার সঙ্গে মিলিত হয়ে সব প্রজন্মের মানুষকে মুগ্ধ করেছে। জেন জির প্রথম শহীদ আবু সাঈদ, মৃতু্যর অমোঘ ছায়া স্বীকার করে নিয়েও বুক পেতে দিয়েছিলেন। তার সাহসিকতা এবং দাবির প্রতি অটুট প্রতিশ্রম্নতি কখনো নতি স্বীকার করেনি। আবু সাঈদ, মুগ্ধের মতো পাঁচ শতাধিক জেন জি সদস্য জীবনকে সঁপে দিয়ে বিজয়ের হাসি হাসেন। তাদের বিজয় ছিল বাংলাদেশের বিজয়, গণতন্ত্রের বিজয় এবং ভোটাধিকারের বিজয়। জেন জির কাছে বাংলাদেশ চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে।
যখন জেনারেশন জেড বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করে, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কারের স্বপ্ন দেখে, তখন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীরা প্রতি অভু্যত্থানের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট সরকার তার দীর্ঘদিনের শাসনে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে এবং সর্বস্তরে দলীয়করণের চরম মাত্রা সাধন করেছিল। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কোণায় দলীয়করণের বিষ ছড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে, গণঅভু্যত্থানের ঢেউ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে, তখনো তার অনুসারীরা উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত থেকে প্রতি অভু্যত্থানের গোপন পরিকল্পনার বাস্তবায়নে মগ্ন রইলেন। তাদের অন্ধকার পরিকল্পনার জালে যেন রাষ্ট্রের প্রতিটি ধারা আবদ্ধ ছিল।
৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপস্নবী সরকার শপথ গ্রহণ করার পর, দেশের পুলিশ বাহিনী কর্মবিরতিতে চলে যায়। ফলে, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ঘটার আশঙ্কা তৈরি হলেও, জেনারেশন জেডের হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাত জেগে অতন্দ্র প্রহরীর মতো এলাকা পাহারা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখে। তারা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীকে ব্যাপকভাবে অসাংবিধানিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল- যার কারণে ঊর্ধ্বতন কিছু কর্মকর্তার অপকর্মের জন্য পুরো বাহিনীই আজ ইমেজ সংকটে পড়েছে। ১০ আগস্ট জেনারেশন জেড একটি বড় ধরনের কু্য-র চেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দেয়। এর আগের দিন ৯ আগস্ট, শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমার মা কখনই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। তিনি পদত্যাগ করার সময় পাননি। তাই সাংবিধানিকভাবে, এখনো তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।' এই মন্তব্যের পর, জেনারেশন জেড-এর সদস্যরা সম্ভাব্য কু্য সম্পর্কে সজাগ হন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বিনা নোটিশে ১০ আগস্ট সকাল ১০টায় আকস্মিক 'ফুলকোর্ট রেফারেন্স' বৈঠক ডাকায় জেন জির সদস্যরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন, তাদের সঙ্গে যোগ দেন আইনজীবী ও সংবাদকর্মীরা। সম্মিলিত প্রতিরোধের ফলে ফুলকোর্ট রেফারেন্স বৈঠক বাতিল হয়- যা একটি বিচার বিভাগীয় কু্য-র চেষ্টা হিসেবে ধারণা করা হয়েছিল। পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা মতে জেনারেশন জেড-এর সদস্যরা দ্রম্নত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা রাখে। এই চারিত্রিক গুণের কারণেই তারা এই সম্ভাব্য কু্য-এর পরিকল্পনা সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও ২৫ আগস্ট আনসারদের বিদ্রোহের চেষ্টাও সফলভাবে নস্যাৎ করে এই জেনারেশনের শিক্ষার্থীরা। এই জেনারেশনের শিক্ষার্থীদের মাল্টিটাস্কিং সক্ষমতা তাদের অনন্য একটি গুণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা একদিকে একের পর এক কু্য-এর পরিকল্পনাগুলোকে সফলভাবে প্রতিহত করছে, অন্যদিকে বিভিন্ন গ্রাফিতির মাধ্যমে পুরো দেশকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলছে। তাদের এই গ্রাফিতি শুধু শিশুদের প্রেরণা জোগাচ্ছে না, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিকেও আরও সুসংগঠিত ও জোরালো করছে।
জেনারেশন জেড বর্তমানে এক ভয়াবহ বন্যার মোকাবিলা করছে- যা দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলাকে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে টানা বৃষ্টিপাত এবং ভারতের পাহাড়ি ঢলের প্রবাহ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া গণত্রাণ কার্যক্রম বন্যার্তদের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রোববার, ২৫ আগস্ট বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে- যা দিয়ে ৫০টি ট্রাকে করে ত্রাণসামগ্রী বন্যাকবলিত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। ত্রাণের পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া, গেমস রুম এবং বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে ত্রাণসামগ্রী জমা রাখার জায়গা ফুরিয়ে যায়। আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছরে বন্যা আসে, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির এত সুন্দর চিত্র দেশবাসী আগে কখনো দেখিনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, গ্রাম থেকে শুরু করে মহলস্না, উপজেলা, জেলা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণত্রাণ কার্যক্রম নজিরবিহীন সাড়া ফেলেছে। জেনারেশন জেড-এর এই তৎপরতা সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা, অস্ট্রেলিয়ান ম্যাকক্রিন্ডল রিসার্চের সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতাকে এক নূতন রূপ দিয়েছে। একে একে তারা মানবতার সুরে সুরেলা গাঁথা বুনে, দুর্যোগের অন্ধকারে আলোর রেখা সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি, তাদের এই মানবিক উদ্যোগ শুধু বন্যার্তদের সহায়তাই নয়, বরং তাদের রাষ্ট্র সংস্কারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রম্নতিকেও দৃঢ় করেছে। আশা করা যায়, জেনারেশন জেড-এর অগ্রযাত্রায় রাজনৈতিক দলগুলোতে গড়ে উঠবে গণতন্ত্রের আলোকিত মঞ্চ, যেখানে নীতি ও মেধা হবে মূলধন। দুর্নীতি ও অনিয়মের আঁধার পেছনে ফেলে, উন্মুক্ত হবে মতপ্রকাশের স্বাধীন আকাশ। তাদের সাধনায় ফুটবে এক সবুজ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
ড. ইলিয়াছ প্রামাণিক : সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর