রাওয়ালপিন্ডিতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। কেননা, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩তম টেস্টে এসে জয়ের দেখা পেল টাইগাররা। তাও বিশাল ব্যবধানে, বিদেশের মাটিতে। এ কথাও বলা দরকার, এ পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে সাতটি টেস্টে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবধানের জয়। ইতিহাস গড়া এই জয়ে টাইগারদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। একইসঙ্গে জয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী দিনেও টাইগাররা নিজেদের শাণিত করবে এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে সবটুকু উজাড় করে দিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করবে এমনটি কাম্য।
বলা দরকার, ২০০৩ সালে মুলতানে একদম কাছে গিয়েও পুড়তে হয়েছিল ১ উইকেটে হারের যন্ত্রণায়। সেদিন চোখে জল নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন টাইগাররা। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে ঘরে-বাইরে অনেক টেস্ট খেললেও জয় ছিল অধরা। অবশেষে ২১ বছর পর রাওয়ালপিন্ডিতে এলো ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তথ্য মতে, রাওয়ালপিন্ডিতে রোববার নাজমুল হোসেন শান্তর দল বাংলাদেশ জিতেছে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। অথচ চতুর্থ দিন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল এই টেস্ট এগুচ্ছে নিষ্প্রাণ ড্রয়ের দিকে। তবে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে পেস-স্পিনের মিশেলে দুর্দান্ত বোলিংয়ে চিত্রপট বদলে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। দলকে পাইয়ে দেন রোমাঞ্চকর ও অবিস্মরণীয় এক জয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওয়ানডে ও টি২০তে পাকিস্তানকে হারালেও টেস্টে পারছিল না বাংলাদেশ। ২০০১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে লাল বলের ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ খেলে, তারপর দেশে ও বাইরে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে, যে ১৩ বার তার মধ্যে ১২টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ, একটিতে ড্র। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২৩ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে রোববার ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
প্রসঙ্গত, সিরিজের প্রথম টেস্টের লক্ষ্যটা ছিল খুবই ছোট। সময়ের হিসাবেও বাকি ছিল প্রায় আড়াই ঘণ্টা, উইকেটও হাতে ১০টি। এতসব রসদ নিয়ে বাংলাদেশকে করতে হবে মাত্র ৩০ রান। এই রানটা সহজেই তুলে নেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। দারুণ ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং উপহার দিয়ে দলকে ঐতিহাসিক এক জয় এনে দিয়েছেন টাইগাররা।
জানা যায়, ১১৭ রানের পিছিয়ে থেকে পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে। শেষ বিকালে এক উইকেট হারিয়ে তারা চাপে পড়ে যায়। রোববার সকালে নেমে বাংলাদেশের স্পিনারদের ঘূর্ণিজাদুতে একে একে ব্যাটসম্যানরা কোণঠাসা হয়ে পড়লে ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কাও জাগে। শেষ পর্যন্ত রিজওয়ানের দায়িত্বশীল ইনিংসে কোনোমতে সেটা এড়িয়ে বাংলাদেশেকে ৩০ রানের লক্ষ্যে বেঁধে দিতে পারে স্বাগতিক দল। পাকিস্তানের হয়ে শফিক ৩৭ ও রিজওয়ান ৫১ রানের ইনিংস খেলেছেন। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে আনেন স্রেফ ৩০ রানের লক্ষ্য। সেটা পেরোতে ৬.৩ ওভারের বেশি খেলা লাগেনি। উলেস্নখ্য যে, বাংলাদেশের জেতার ভিত তৈরিতে বড় ভূমিকা ব্যাটসম্যানদের। স্বাগতিকদের ৪৪৮ রানের জবাবে ৫৬৫ রান তুলে ১১৭ রানের লিড নিয়ে চমকে দেয় শান্তর দল। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম খেলেন ১৯১ রানের ইনিংস। ওপেনার সাদমান ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ৯৩ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাটিংয়ে ৭৭ রানের পর বোলিংয়েও ৪ উইকেট নিয়ে রাখেন বড় ভূমিকা। উইকেটের পেছনে ৬টি ডিসমিসালের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে ফিফটি করেন লিটন দাস, ফিফটি আসে মুমিনুল হকের ব্যাট থেকেও। নতুন বলে শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদরা দুই ইনিংসেই রাখেন ঝাঁজালো ভূমিকা। সম্মিলিত পারফরম্যান্সেই ডানা মেলে ধরে বাংলাদেশ।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রাওয়ালপিন্ডির এই ঐতিহাসিক জয় অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সঙ্গত কারণেই জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতিও অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, টাইগাররা বারবার দেশে সুনাম ছড়িয়েছে, সারা বিশ্বের সামনে দেশকে উজ্জ্বল করেছে। ফলে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাবে আরও বহুদূর- এমন লক্ষ্যকে সামনে রেখে ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।