উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যায় দেশের ১২ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণ কমেছে। দ্রম্নত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। চলমান বন্যায় চট্টগ্রামে-৫, কুমিলস্নায়-৪, নোয়াখালীতে-৩, কক্সবাজারে-৩, লক্ষ্ণীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীতে একজন করে মারা গেছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় নগদ ৩ কোটি ৫২ লাখ, শিশুখাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ, গোখাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ত্রাণ কাজের অংশ হিসেবে ২০ হাজার ১৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত ১১ জেলার ৭৭ উপজেলা পস্নাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৮৭টি। ১১ জেলায় এখন পানিবন্দি আছে ৯ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা দিতে ৭৭০টি মেডিকেল টিম করা হয়েছে। ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা জানি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে পানিবাহিত রোগবালাই বাড়ে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে প্রস্তুতি রয়েছে। আশপাশের জেলা থেকে যথেষ্ট বোট আনা হয়েছে। গোমতী, হালদা, মুহরী নদীর পানির পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তবে আশার কথা, দেশের বন্যা উপদ্রম্নত পাঁচ জেলার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এলাকাগুলোর ছয়টি নদীর নয়টি স্টেশনের পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার নদীর পাঁচটি স্টেশনে এখন পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। কুমিলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টি কমে এসেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উলেস্নখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানের নদনদীর পানি কমে যাচ্ছে। ফলে এখন মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি শুক্রবার থেকে উন্নতি হচ্ছে।
উজানের টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে তৎপর হতে হবে। এ ছাড়া সমাজে যারা ধনাঢ্য তাদের এগিয়ে আসতে হবে। দলমতনির্বিশেষে সবাইকে বানভাসিদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ মানবিক তৎপরতা চালাতে হবে। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য এই অমীয় বাণী প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।