বিদু্যৎ, জ্বালানি সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের পণ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা উদ্বেগজনক। কেননা, বর্তমান সময়ে বিদু্যৎ, জ্বালানি কতটা প্রয়োজনীয় এবং কীভাবে জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা সহজেই অনুমেয়। প্রসঙ্গত, বিগত বছরগুলোতে কোনো ধরনের গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে বিদু্যৎসহ সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই দাবি ওঠে গণশুনানির ভিত্তিতে এসব পণ্যের দাম নির্ধারণের। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। নতুন এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গণশুনানি ছাড়া সরকার বিদু্যৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণ করবে না। বৃহস্পতিবার জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
উলেস্নখ্য, 'বিদু্যৎ উৎপাদন, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের ব্যবস্থাপনা, ট্যারিফ নির্ধারণ, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন (২০০৩ সালের ১৩ নম্বর আইন) প্রণীত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৫, ২০১০, ২০২০ ও ২০২৩ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। ইতোপূর্বে আইনটি সংশোধন করে এর ৩৪ ধারার সঙ্গে ৩৪ক ধারা সংযোজন করা হয়। সেটি হলো ৩৪ক। ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা। এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসাবাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উহাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহণ ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রম্নত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদু্যৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।'
আমরা বলতে চাই, যখন জানা যাচ্ছে যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদু্যৎ উৎপাদন এবং গ্যাস সম্পদ ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের ট্যারিফ বা মূল্য নির্ধারণে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের অধিক সম্পৃক্ততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন, জন প্রত্যাশা ও ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর উপরোক্ত ৩৪ক ধারা বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। জনস্বার্থ রক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে বিদু্যৎসহ জ্বালানি পণ্যের দামের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। বিদু্যতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। জনসামর্থ্যর সঙ্গে যেন দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি, বিদু্যৎ খাতে লুটপাটের মহোৎসব সংক্রান্ত খবরও প্রকাশিত হয়েছে। জানা যায়, গত ১৫ বছর এ খাতে লুটপাটের সব বড় ফাঁদ উন্মুক্ত করে দেওয়া ছাড়াও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গুটি কয়েক কোম্পানির হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার পথ প্রশস্ত করা হয়েছে বলে খবরে উঠে আসে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের বিদু্যৎ খাত 'খোলা' হয়ে গেছে; ভেতরে কিছু নেই। ক্যাবের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও আমলে নেওয়া হয়নি। এ মুহূর্তে দেশের সব উন্নয়ন বন্ধ রেখে বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতের ওপর নজর দেওয়া জরুরি, তা না হলে বিদু্যৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আর জ্বালানি ও বিদু্যৎ খাত যদি ধসে যায় তাহলে গোটা অর্থনীতি বালুর বাঁধের মতো তছনছ হয়ে যাবে- এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।
সর্বোপরি বলতে চাই, বিদু্যতের দাম সহনীয় পর্যায়ের রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক। একইসঙ্গে বর্তমান সরকার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৪ এর খসড়ার যে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে এবং নতুন এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গণশুনানি ছাড়া সরকার বিদু্যৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণ করবে না, এটি আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।