তারুণ্যের জয় আগামীর প্রত্যাশিত বাংলাদেশ
প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
রবিউস সানি জোহা
বাংলার ইতিহাস অনাদিকাল থেকেই সংগ্রামের ইতিহাস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে তারুণ্যের অবদান অনস্বীকার্য। '৫২-এর ভাষা আন্দোলনে তরুণদের সাহসী ভূমিকার ফলে আমরা পাই আমাদের মায়ের ভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় সম্মান। ৬৯- এর গণঅভু্যত্থান ও হয়েছিল তরুণদের হাত ধরে। এরই ধারাবাহিকতায়, '৭১-এর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দুর্নিবার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে পাই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সংগ্রামী চেতনায় লালায়িত তারুণ্যের হাত ধরেই বাংলাদেশ এসেছে। ফলে '৯০-এর আন্দোলন, ২০০৭-এর আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের আন্দোলন- সর্বক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের একনিষ্ঠ ভূমিকা অস্বীকার্য। এ দেশের মানুষ যেমন শান্তিপ্রিয়, তেমনি বৈষম্যে প্রতিরোধ করার অপ্রতিরোধ্য সাহস নিয়ে সংগ্রাম করতে সদা প্রস্তুত। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘিরে তরুণদের অনস্বীকার্য ভূমিকার দরুন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রূপ নিয়ে স্বৈরাচার পতন করতে সচেষ্ট হওয়ার নজির বিরল।
ইতিহাসের শিক্ষাই হলো কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না; যার পুনরাবৃত্তি ঘটল নব্বই দশক পরবর্তী একবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে। তারুণ্যের চাহিদা সঠিকভাবে অনুধাবন না করায় দম্ভের পাহাড় ভেঙে চুরমার!
সম্প্রতি কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার পতনের যে আন্দোলন শুরু হয় তাতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আন্দোলনে যোগ দেয় সাধারণ জনগণ। ফলে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় সরকারপ্রধান। বিগত সময়গুলোয় অনেক আন্দোলন গড়ে তুললেও সরকার পতন করতে পারেনি কোনো রাজনৈতিক দল; কিন্তু এবার তরুণ ও ছাত্রসমাজের আন্দোলনের কারণে তা সম্ভব হয়। তবে এখন প্রশ্ন, কেমন হবে আগামীর প্রত্যাশিত বাংলাদেশ?
কোটা আন্দোলন ঘিরে সারাদেশব্যাপী যে আন্দোলনের শুরু হয় তার অগ্রপথিক হিসেবে তরুণদের পথ দেখান ছয় তরুণ সমন্বয়ক এবং তরূণরাই পারবে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে। ছয় সমন্বয়কের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস এ সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে বলেন- 'আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে মিডিয়ার ভাইরা সত্য প্রচার করতে পারবে, এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চাই যার মাধ্যমে বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারব, এমন একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাই যাতে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পায়, এমন বিচার ব্যবস্থা চাই যেখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার পাবে, এমন একটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চাই যা আপামর জনসাধারণের আস্থার জায়গা হবে।' তাই তরুণদের এই চিন্তাধারা থেকেই আমাদের নতুন সোনার বাংলা গড়তে হবে।
দেশের ছাত্রসমাজ সাধারণ জনগণের যে আস্থা অর্জন করেছে তাতে সাধারণ জনগণও চাইছে আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতেই নিরাপদ। একজন প্রকৃত তরুণ ছাত্র পড়াশোনার মাধ্যমে এমন জায়গায় আসবে যেখানে তার দেশের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা থাকবে এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত দ্রম্নত ও সঠিকভাবে নেওয়ার সক্ষমতা থাকবে। একটি দেশ তখনই স্বাধীন হয়, যখন দেশের সাধারণ মানুষ তাদের বাকস্বাধীনতা পায়, ন্যায়-অন্যায় মাথা উঁচু করে বলতে পারে, ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য তেলবাজি করতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় না।
একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের মূলভিত্তি হচ্ছে-
দেশের আইন, বিচার ও শাসনবিভাগ। আইনবিভাগ আইন প্রণয়ন করবে, বিচারবিভাগ সেই অনুযায়ী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার করবে এবং শাসনবিভাগ ওই আইনের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। সোনার বাংলা গড়তে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকেও সুনজর দিতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোয় আরও উন্নত ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একই ডাক্তারের কাছে হাসপাতালে একরকম চিকিৎসা আবার ক্লিনিকে অন্যরকম চিকিৎসা, এ রকম যেন না হয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন হওয়া দরকার যাতে দেশের সরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নত ও গবেষণাধর্মী শিক্ষা, গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সুব্যবস্থা থাকে। দেশের বাহিরে যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য যায় তাদের সঠিক মূল্যায়ন করে দেশের সম্পদ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।
দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে একটি দেশের উন্নয়নের পথে বড় বাধা বেকারত্ব। সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনঃগঠনের জন্য অবশ্যই বেকারত্ব দূর করতে হবে। মানবসম্পদকে দক্ষ জণশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে আগামীর সোনার বাংলাদেশ। জয় হোক তারুণ্যের, গড়ে উঠুক সোনার বাংলা।
রবিউস সানি জোহা
শিক্ষার্থী
জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ