বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াই

আনিসুর রহমান
  ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াই

হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করেছে কুমিলস্না, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার অঞ্চলে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশকে কোনো প্রকার পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ত্রিপুরার ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছে ভারত। এর ফলে, তীব্র বেগে পানি ঢুকে পড়ে বাংলাদেশ সীমান্তে হঠাৎ করে এত পানি আসায় বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় জীবন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে অসহায় মানুষের আর্তনাদ এবং সময়মতো আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেননি অনেক মানুষ। ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের বন্যা পরিস্থিতির চিত্র নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ছয় জেলায় ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে এবং এক (১) জনের মৃতু্য হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্যায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে এবং আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে।

বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানির অভাবে হাজার হাজার জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মানুষ হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন এলাকায় ঢুকছে বন্যার পানি। ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৯৮ সালের বন্যার পরে এটি হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। বন্যায় বাড়ছে নদী ভাঙন। ফলে অনেকই বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব। বন্যাদুর্গত এলাকায় চলছে চরম মানবিক বিপর্যয়।

একদিকে কিছুদিন যাবত বৃষ্টিপাত বেড়েছে, বৃষ্টির সময়ে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের আয় রোজগার কমেছে। তার ওপর হঠাৎ করে এত বড় বন্যা যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।

\হবন্যাদুর্গত এলাকায় তলিয়ে গেছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে তারা। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন তীব্র অভাব। গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েরা পাচ্ছে না সঠিক খাবার এবং পরিচর্যা। রয়েছে শিশু খাদ্যের অভাব। বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চরম কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক এবং খামারিরা। তলিয়ে গেছে কৃষকের ক্ষেতের ফসল। এখন আমন ধান রোপণের সময় কিন্তু ধানের চারা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মৎস্য খামার এবং হাঁস-মুরগি খামার। এমতাবস্থায় নিঃস্ব হয়েছেন তারা। কীভাবে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেবেন এখন সে চিন্তার ছাপ তাদের চোখে-মুখে। কারণ বন্যা শেষ হলেও তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

মানুষের পাশাপাশি চরম খাদ্য সংকটে আছে পশু-পাখিরা। তলিয়ে গেছে বাসস্থান। কিন্তু এ অবস্থা চলতে থাকলে দেখা দেবে চরম মানবিক বিপর্যয়।

এমতাবস্থায় দেশের সর্বস্তরের সামর্থ্যবান মানুষের উচিত ওই এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দেশে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে- যারা যে কোনো বিপর্যয়ে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেন। তাদের মানবতার হাত এবারো বাড়ানো প্রয়োজন।

বন্যাকবলিত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অসংখ্য টিম রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নৌবাহিনী, বিজিবি এবং কোস্ট গার্ডের একাধিক টিম। তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরাসরি গিয়ে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করার চেয়ে সেনাবাহিনী কিংবা অন্য বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মাধ্যমে দিলে তারা সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করে দেবেন। এতে একদিকে যেমন যাতায়াত খরচ বাঁচবে, তেমনি বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত সব অঞ্চলের মানুষের মাঝে সুষ্ঠু বণ্টনের নিশ্চয়তা বাড়বে।

সবশেষে বলতে চাই, যে কোনো দুর্যোগ সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করলে তা থেকে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আমরা মানবিক জাতি, সবার সহযোগিতায় বন্যাদুর্গতদের কষ্ট লাঘব হোক। আবার দেখা যাবে- এক মানবিক বাংলাদেশ।

আনিসুর রহমান

বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে