ভারতের ত্রিপুরায় গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়া ও গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহাণির ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। বাঁচার আকুতি, জীবন-জীবিকা বিপন্ন ও সার্বিকভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। এ ছাড়া সতর্কতা না দিয়ে বাঁধ খুলে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপেদেষ্টাসহ বিশিষ্টজনরা। বাঁধ খুলে দেওয়ার খবরে ভারতের আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। যদিও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভয়াবহ বন্যা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ভারত।
তথ্যমতে, বন্যা হয়েছে দেশের ১২টি জেলায়। ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল স্রোতের কারণে বন্যার পানিতে ডুবে, পাহাড়ধসে ও বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন মারা গেছেন। দু'জন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও জানা গেছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফেনী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্ণীপুর ও কক্সবাজারের ৭৭ উপজেলার ৫৮৪টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আকস্মিক এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলাগুলোর ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৫ জন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯ পরিবার।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ফেনীসহ আট জেলায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। তবে তার কয়েকদিন আগে থেকেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে অনেক জেলায়। এরপর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে বৃহস্পতিবার আরও চার জেলার অনেক জায়গা তলিয়ে যায়। বন্যাকবলিত ১২টি জেলা হলো- ফেনী, কুমিলস্না, কক্সবাজার, লক্ষ্ণীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। আমরা বলতে চাই, স্মরণকালের যে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিতে হবে একই সঙ্গে সর্বাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বৃহস্পতিবার বলেছেন, বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের জীবন রক্ষায় ও দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ত্রাণ হিসেবে খাদ্য এবং নগদ অর্থের সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে জানিয়ে দ্রম্নত পানি নামলে পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়টি জানিয়েছেন। অন্যদিকে সেনা, নৌ, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে নিয়োজিত করা হয়েছে। সংস্কার আন্দোলনের ছাত্ররাও উদ্ধার তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সার্বিকভাবে প্রশাসন চেষ্টা করছে, সরকার চেষ্টা করছে যাতে মানুষের জীবন, জানমাল, গবাদিপশু রক্ষা করা যায় এমনটিও জানিয়েছেন।
আমরা বলতে চাই, বন্যার ভয়াবহতা আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এটা আলোচনায় এসেছে, এবারের বন্যা আকস্মিক। ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড যেটা বলে। সঙ্গত কারণেই বন্যার যে ভয়াবহতা জানা যাচ্ছে তা আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্ধারকাজ পরিচালনা সুষ্ঠুভাবে করতে হবে, পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহসহ সচ্ছল মানুষের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ দেশ, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো উপায় নেই- কিন্তু এ কথা ঠিক যে, যথাযথ প্রস্তুতি ও উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। ফলে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ও সৃষ্ট অবস্থা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখথতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তের ত্রাণ সহায়তাসহ পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। আমলে নেওয়া দরকার, ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে মানুষ ব্যাপকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রধান উপদেষ্ট বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। সাধ্যমতো সবার এগিয়ে আসতে হবে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায়। এটাও এড়ানো যাবে না যে, শুধু গবাদিপশু, ফসলিজমি বা ঘরবাড়ি নয়, মানুষ বাঁচার জন্য হাহাকার করছে। ফলে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। ভয়াবহ এই বন্যায় যে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি হয়েছে তা আমলে নিয়ে এবং করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।