কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা- এমন খবর বারবার সামনে এসেছে। এছাড়া এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ফলে, বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি সামনে এলে তা আশাব্যঞ্জক। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, আগামী শীত মৌসুম শুরুর আগেই সরকার ঢাকার বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে উলেস্নখ করে পরিবেশ ও পানি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে ঢাকার চারপাশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ বায়ুদূষণ রোধের ব্যবস্থা না করে নতুন ভবন নির্মাণের লাইসেন্স দেওয়া হবে না। খোলা ট্রাকে বালু বা ইট বহন করা যাবে না।
আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে বায়ুদূষণ কমাতে পরিবেশ ও পানি উপদেষ্টা যে বিষয়গুলো আলোকপাত করেছেন তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন যে, এখন থেকে নতুন করে আর কোনো ইটভাটার লাইসেন্স দেবে না সরকার। সারাদেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সহানুভূতি দেখানো হবে না জানিয়ে বলেছেন, ইট বানানোর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন জরুরি। এছড়া রাস্তায় গাড়ির যত্রতত্র হর্ন বন্ধ করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় অভিযান শুরু করবে বলেও জানা যাচ্ছে। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, মানুষের মধ্যে হর্ন বাজানো বন্ধ করতে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এজন্য ঢাকার ১০টি পয়েন্টে অভিযান শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করবে সরকার এমনটি জানা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে দেশের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যে পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ফলে, বায়দূষণ কমাতে উদ্যোগ গ্রহণের যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। স্মর্তব্য যে, এর আগে এমনটি জানা গিয়েছিল, বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। ফলে, যখন পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন যে, এখন থেকে নতুন করে আর কোনো ইটভাটার লাইসেন্স দেবে না সরকার; সারাদেশে অবৈধ যত ইটভাটা আছে সবগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে- তখন এগুলোর যথার্থ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের এক গবেষণায় উঠে এসেছিল যে, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী বলেও তথ্য উঠে এসেছিল। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্র, পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ নানা কারণ উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, দূষণের কারণগুলো আমলে নিয়ে দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
সর্বোপরি বলতে চাই, এর আগে জানা গিয়েছিল যে, বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি। এছাড়া বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও জানা গেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি বায়ুদূষণের ভয়াবহতা বিশ্লেষণপূর্বক প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, বায়ুদূষণে প্রাণহানি শুধু নয়, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সঙ্গত কারণেই বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ কমাতে উদ্যোগ নেওয়ার যে বিষয়গুলো সামনে আসছে- তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।