বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ দেশ, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো উপায় নেই- কিন্তু এ কথা ঠিক যে, যথাযথ প্রস্তুতি ও উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। প্রসঙ্গত বলা দরকার, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে অসংখ্য বসতঘর, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক স্থানে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তের ত্রাণ সহায়তাসহ পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে।
তথ্য মতে, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে নোয়াখালী জেলা শহরসহ আট উপজেলার অসংখ্য বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে নোয়াখালী সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা ও দায়রা জজ, সিভিল সার্জনের বাসভবন, নোয়াখালী জেনারেল হসপিটাল ও হাউজিং এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিচু এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে- যা বিগত ২০ বছরেও হয়নি। এ ছাড়া জোয়ার থাকায় পানি নামতে পারছে না। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে।
ফেনীতে তৃতীয় দফার বন্যায় জেলার ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ায় একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানা গেছে। সিলোনীয়া নদীর একটি পয়েন্টে নতুন করে বাঁধ ভেঙেছে। প্রধান সড়ক ২ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ। ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক জানান, ৪৮ ঘণ্টায় ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা-ধলাই-জুড়ী নদসহ দেশের বিভিন্ন নদনদী। এর ফলে, পাড় ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। এতে শত শত বসতঘর বিলীন হয়েছে। বিলীনের পথে আরও শতাধিক বসতঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। লোকালয়ে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। মঙ্গলবার নিয়মিত বুলেটিনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবা) জানায়, সাগরের লঘুচাপের প্রভাব ও ভারতের অতি বৃষ্টির ঢলে পানি বেড়েছে। এছাড়া গেল চার পাঁচ দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত। কয়েকটি এলাকার মূল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে মারাত্মকভাবে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসন নানান উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
আমরা বলতে চাই, যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে নদনদীর পানি বাড়ছে, বন্যা আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কিংবা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি জনজীবনকে কতটা বিপর্যস্ত করতে পারে সেটিও এড়ানোর সুযোগ নেই। এটাও স্মতর্ব্য যে, এ মাসের শুরুর দিকে এই আশঙ্কাও উঠে এসেছিল- জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাভাবিক বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ু অতি সক্রিয় হওয়ায় ভারী বৃষ্টির কারণেই মধ্য আগস্টের পর দেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদনদীর পানি বাড়ছে, লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে- ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। নদনদীর পানি বৃদ্ধি এবং বন্যা আতঙ্কসহ যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।