উন্নত জীবনমান, উন্নত স্বপ্ন দেখায়

বর্তমানে আমাদের দেশে খুবই অসহায় ও বিধ্বস্ত অবস্থায় আছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

এন ইউ প্রিন্স
শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। আর এ মেরুদন্ড যে কারখানায় তৈরি হয় তার নাম প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটি শিশু ভবিষ্যতে কতটুকু ন্যায়-নীতিবান, আদর্শবান, চরিত্রবান হবে এটি অনেকাংশে নির্ভর করে তার প্রাথমিক শিক্ষার ওপর। প্রখ্যাত লেখক জন মিল্টনের মতে, 'ঞযব পযরষফযড়ড়ফ ংযড়ংি :যব সধহ, ধং সড়ৎহরহম ংযড়ংি :যব ফধু.' যার অর্থ উঠন্তি মূলো পত্তনেই চেনা যায় বা সকালেই দিন বোঝা যায়। অর্থাৎ শিশুকাল থেকেই যদি সঠিক শিক্ষা দেওয়া যায় তাহলে মানুষ হিসেবে আদর্শবান মানুষ গড়া সম্ভব। কারণ শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা আর এর কারিগর হচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষক। তারাই একটি শিশুর মনে প্রথম বীজ রোপণ করেন সততার, কর্তব্যপরায়ণতার, কাজের প্রতি আন্তরিকতার, পরোপকারিতার, মানবসেবার ও দেশপ্রেমের। এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাবা মায়ের স্নেহ-মমতা দিয়ে শেখান কীভাবে অপরের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হয়, কীভাবে সুন্দরভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে নিয়ম মেনে রাস্তায় চলাচল করতে হয়, কীভাবে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে হয়, কীভাবে দলগতভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়, কীভাবে নিজের আনন্দ ভাগ করে নিতে হয়, আবার অন্যের দুঃখে সমবেদনা জানাতে হয়। তাই শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষকদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এজন্য শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষকরা যেন ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা পর্যালোচনা করা একটি দেশের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। বর্তমানে আমাদের দেশে খুবই অসহায় ও বিধ্বস্ত অবস্থায় আছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বর্তমানে যে সমস্যাগুলো সমাধান করা অত্যাবশ্যক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে সেসব পর্যালোচনা নিম্নে তুলে ধরছি : ১. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদান করা। ২. প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেড প্রদান করা। ৩. যথাসময়ে এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেড, টাইমস্কেল ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রদান করা। ৪. ডিপিএড সার্টিফিকেটকে বিএড সমমানের মর্যাদা দেওয়া এবং বর্তমানের বিটিপিটি ট্রেনিং করার পর অর্জিত সার্টিফিকেট সার্ভিসবুকে সংযুক্ত করার সঙ্গে উচ্চতর স্কেল প্রদান করা এবং এই সার্টিফিকেট অর্জনকারীদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় বিভাগীয় প্রার্থিতা প্রদান করা। ৫. প্রতিটা স্কুলে দপ্তরি নিয়োগ করা এবং বর্তমানে নিয়োজিত মাস্টার রোলে অন্তর্ভুক্ত সবাইকে স্থায়ীপদে ও রাজস্বতে অন্তর্ভুক্ত করা। ৬. প্রতিটি বিদ্যালয়কে এক শিফটে রূপান্তরিত করতে হবে এবং ক্লাসে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার অনুপাত সর্বোচ্চ ১ :৪০/৪৫-এর মধ্যেই সীমিত রাখতে হবে। অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি ক্লাসে একজন শিক্ষকের জন্য ৪০/৪৫-এর বেশি ছাত্রছাত্রী হ্যান্ডেল করা কষ্টকর। এমন হলে ওই শিক্ষকের দ্বারা ভালো মানের শিক্ষাদান করা সম্ভব নয়। ৭. প্রতিটা বিদ্যালয়ের আধুনিক ওয়াশবস্নক বা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, বিদু্যৎ সংযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ, সীমানা প্রাচীর তৈরি, ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যানুযায়ী কক্ষ/বিল্ডিং তৈরি/মেরামত, বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাস্তা নির্মাণ/মেরামত করা। ৮. এক স্কুলে/উপজেলায়/জেলায় একজন শিক্ষক/ এইউইও/ইউইও/এডিপিইও/ডিপিইও/ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর/ অফিস সহকারীর চাকরিকাল ৩/৫ বছরের বেশি হলেই বদলি হতে হবে এবং বদলির কার্যক্রম হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক বদলি চালু করতে হবে। ৯. পেনশনের সব কার্যক্রম এক মাসের মধ্যেই শেষ করতে হবে এবং এটা হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই, এ ব্যাপারে কোনোভাবেই কোনো শিক্ষককে হয়রানি করা যাবে না। একইসঙ্গে কল্যাণ ফান্ডের টাকা উত্তোলনে হয়রানি বন্ধ ও এর প্রক্রিয়া সহজতর করা। ১০. একই নিয়োগবিধি হবে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য, আলাদা কোনো নিয়োগবিধি থাকবে না। প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি, সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে মহাপরিচালক পর্যন্ত শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান। ১১. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন পোস্টগুলোতে ১০০% শিক্ষকদের থেকে নিতে হবে। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও নেপের প্রশাসনিক ও প্রশিক্ষণের পোস্টগুলোতে যারাই পদোন্নতি পাবেন তারা চাকরি জীবনের প্রথমকালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আর এই পদোন্নতি হবে ৫০% জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং ৫০% বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে। বিভাগীয় পরীক্ষায় সব শিক্ষক অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এতে করে শিক্ষকরা সবসময়ের জন্য আপডেট থাকবেন। ১২. প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি হট লাইন চালু করতে হবে, যার মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা মাঠপর্যায় থেকে সরাসরি অধিদপ্তর যেন শুনতে পারেন ও তার দ্রম্নত তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন। এর মাধ্যমে ঘুষবাণিজ্য ও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা ভয় পাবে এবং এই ধরনের অপসংস্কৃতিচর্চা রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি। ১৩. শিক্ষকদের আধুনিক শিক্ষাদানের জন্য প্রতিনিয়ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং ট্রেনিং শেষে অর্জিত জ্ঞান বিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তার তদারকি করা। ১৪. শিক্ষকদের জন্য আলাদা ব্যাংক ও হাসপাতাল নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। ১৫. প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বর্তমানের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের দ্রম্নত পদোন্নতি দেওয়া এবং ভবিষ্যতে চলতি দায়িত্ব দেওয়া বন্ধ করে বরং পদোন্নতিকে নিয়মিতকরণ করা। ১৬. শিক্ষকদের ও শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রদান এবং তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। ১৭. প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমস্ত মামলার দ্রম্নত নিষ্পত্তি করা। ১৮. শিক্ষকদের টিফিন ভাতা, চিকিৎসা ভাতা বাজার দর অনুযায়ী বৃদ্ধি এবং এর পাশাপাশি চরাঞ্চলের শিক্ষকদের জন্য হাওড় অঞ্চলের শিক্ষকদের মতো যাতায়াত ভাতা প্রদান করা। ১৯. প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বল্পসুদে হোম লোন প্রদান করা। ২০. শিশুরা মূলত আনন্দের মধ্যেই শিখে। তাদের শারীরিক ও দৈহিক বিকাশে গতানুগতিক পড়াশোনার পাশাপাশি তাই খেলাধুলাও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত খেলাধুলার সময় রাখার জন্য বিদ্যালয়ের সময়সূচি ৯টা/১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত করা। ২১. পেশায় পদোন্নতি হবে নিয়মিত; তবে সবাইকে পদোন্নতি না দিতে পারলে উচ্চতর গ্রেড দিয়ে শিক্ষককে সন্তুষ্ট রাখতে হবে যাতে করে শিক্ষকের মনোযোগ সবসময়ই ছাত্রছাত্রীদের প্রতিই থাকে, সে যেন কখনো তার পেশার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ না করে তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ২২. বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সংস্কার করা দরকার। দেখা যায়, অধিকাংশ বিদ্যালয়েই এই কমিটির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কমিটির প্রধান সদস্যদের প্রয়োজনেই বেশি ব্যয় করা হয়। অনেক সময় স্থানীয় প্রভাব বা প্রশাসনিক অনৈতিক প্রভাবের জন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সম্পূর্ণ অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারেন না। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের কমিটিতে সব শিক্ষকের অংশগ্রহণ রাখতে হবে এবং তাদের মতামতের প্রাধান্য দিতে হবে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু তদন্ত করা উচিত। মনে রাখতে হবে, শিক্ষক যদি কোনোভাবে কোনো অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে যায় তাহলে তার থেকে নৈতিক শিক্ষা আশা করা দুরূহ। এর পাশাপাশি এটিইও এবং টিইওদেরকেও স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে হবে। ২৩. শিক্ষকদের শিক্ষা দেওয়ার মানের ওপর ছাত্রছাত্রীদের রিভিউ নেওয়া, এতে করে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাদানের ব্যাপারে আরও যত্নশীল হবে এবং আপডেট থাকবেন নিয়মিত। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের রেটিং সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। ২৪. প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের অনুপাতে শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা, আর্ট, আইসিটি, ধর্ম ও নৈতিকতার জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। প্রতি বিদ্যালয়ে না হলেও ক্লাস্টার অনুযায়ী এই শিক্ষকরা রুটিন করে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষাদান করবেন। ২৫. শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য মেডিকেলের ইন্টার্নির ছাত্রছাত্রীদের/নার্সদের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে (তাদের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে) একটি ক্লাশ নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ছোট থেকেই সচেতন থাকবে ও অভিভাবকেরাও সন্তানদের প্রতি যত্নশীল হবেন। ২৬. বিদ্যালয়ে বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে বিশেষ ক্লাস নেওয়া/দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং সেখানে ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা, একইসঙ্গে দিবসে যেহেতু বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যেতে হয় সেহেতু সেইদিনগুলোকে কর্মদিবস হিসেবে গণ্য করা। ২৭. প্রতিটি বিদ্যালয়ে আইসিটি ও মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করা ও তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে একজন আইটি এক্সপার্ট শিক্ষক প্রতি বিদ্যালয়েই নিয়োগ দেওয়া অথবা আইটি ট্রেনিংয়ের যথাযথ ব্যবস্থা করে শিক্ষককে এ বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করা। ২৮. কোনো শিক্ষক/কর্মকর্তা যদি কোনো গবেষণা কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন বা সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখেন তাহলে তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা, যা একজন শিক্ষক/কর্মকর্তাকে সবসময়ে ভালো কিছু করতে উৎসাহ দিবে ও অনুপ্রেরণা যোগাবে। ২৯. প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নন-ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করা। ৩০. প্রাথমিক শিক্ষায় নীতিনৈতিকতা, মূল্যবোধ তৈরি, আত্মসংযম, দলীয়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা ও এর গুরুত্ব, দেশপ্রেম জাগ্রতকরণ, বিভিন্ন অন্যায় হতে নিরাপদ থাকা ও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শিক্ষা ও চর্চার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা। এমনকি এই গুরুত্ব বিষয়ভিত্তিক চর্চার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক শিক্ষাই একটি জাতির ভিত্তি। সমাজ থেকে অবক্ষয় দূর করতে হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নীতি-নৈতিকতার চর্চার কোনো বিকল্প নেই। জীবনের প্রথম থেকেই যদি ছাত্রছাত্রীরা নীতি-নৈতিকতার চর্চার অভ্যাস গড়ে তা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে প্রভাব ফেলবে। সর্বোপরি দেশে একটি ইতিবাচক প্রজন্ম, সভ্যসমাজ তৈরি হবে। উপর্যুক্ত অনেক দাবি শুধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বদিচ্ছার ওপরেই নির্ভর করে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি ইচ্ছা পোষণ করেন তাহলে অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের অনেক দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, যে দেশে গুণীর কদর নাই, সে দেশে গুণির জন্ম হয় না। চাপে রেখে দায় সারা যেতে পারে কিন্তু দায়িত্ব না! কর্তৃপক্ষ ওপরের অবস্থানে আছেনই তার অধস্তনদের সুবিধা-অসুবিধা দেখ-ভাল করার জন্য। এক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ 'ডরঃয মৎবধঃ ঢ়ড়বিৎ পড়সবং মৎবধঃ ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃু.' একটা কথা খুবই জরুরি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, বর্তমানে যে কোনো যৌক্তিক দাবি যেন আন্দোলন সংগ্রাম করে আদায় করে নেওয়াটা একটা ট্রেডিশনে রূপান্তরিত হচ্ছে। কিন্তু এটা নাগরিক অধিকারের পরিপন্থি বলেই প্রতীয়মান হয়। যে কোনো যৌক্তিক দাবি যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর করা হয় তাহলে তার বাস্তবায়ন করা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তারাই এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে উলিস্নখিত দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, শিক্ষাকে যদি একটি বিল্ডিংয়ের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে তার ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন এর কারিগর। কোনোভাবেই প্রাথমিক শিক্ষাকে যেমন গুরুত্বহীন মনে করার সুযোগ নেই, তেমনি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণের সাহায্য ছাড়া শিক্ষার্থীর পক্ষে কোনো কিছু শেখা সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষককে বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষাব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি পৃথিবীতে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনের সহায়তাকারীর পাশাপাশি তিনি একাধারে শিক্ষার্থীর সহায়ক বন্ধু, পরামর্শদাতা, অভিভাবক, হিতৈষী ও পথপ্রদর্শক। তাই তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং তাদের চলমান অসুবিধা বা সমস্যা সমাধান করা সমাজ তথা দেশেরও দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এন ইউ প্রিন্স : শিক্ষক