বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নিন

  ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নিন

জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনদুর্ভোগের বিষয়টি নতুন নয়। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকারে দৃশ্যমান হয় এমন খবর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ পেয়েছে। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বৃষ্টিতে ফের চট্টগ্রামের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। তথ্য মতে, গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত কখনো মুষলধারে আবার কখনো হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ঝরেছে। আর তাতেই তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন নিচু এলাকা। প্রকাশিত খবরে এটাও উঠে এসেছে যে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনিভাবে এ কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাস্তাঘাট হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে বলেও জানা যায়। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, নগরীর কাতালগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে নৌকায় করে লোকজনকে পানি পার হতে দেখা গেছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই জলাবদ্ধতা এবং জনদুর্ভোগের বিষয়টি আমলে নেওয়া জরুরি।

উলেস্নখ্য, চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সকাল থেকে নগরীর কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, মুরাদপুর, ষোলোশহর দুই নম্বর গেট, চকবাজার, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক, ইপিজেড, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমেছে। এ কারণে সড়কে যানসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১২২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে সোমবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন রোববার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৩৩ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

আমরা বলতে চাই, জলাবদ্ধতা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ এবারই নয়, বিভিন্ন সময় জলবাদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অন্যদিকে, শুধু চট্টগ্রামই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত হয়। ফলে, যখন চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার কারণে আবারও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্ট হলো, তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। এমন আলোচনা বারবার সামনে এসেছে যে, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘ দিনের। শহরের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। সামান্যতম বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তা-ঘাটসহ অনেক এলাকা। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, একদিকে জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি; অন্যদিকে, অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসেরও আশঙ্কা তৈরি হয়। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, নগরের ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে আকবরশাহ থানাধীন ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়গুলোয়। পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবারগুলো সেখানে বসবাস করছে। ফলে, এ বিষয়গুলোও এড়ানো যাবে না। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকল্পের কথা সামনে এলেও নগরবাসীর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি দূর হয়নি। উল্টো দিন দিন সমস্যা প্রকট হয়েছে বলে জানা যায়। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জলাবদ্ধতার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা কতটা উদ্বেগের- সেটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এর আগে এটাও আলোচনায় এসেছে যে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ জলবাদ্ধতার অন্যতম কারণ। ফলে এটিও এড়ানো যাবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে