বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অশ্রদ্ধার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে

দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, অর্থ পাচারকারীদের ঘৃণা জানাই। সেই সঙ্গে অতিসম্প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম নিষ্ঠুরতা, হত্যার সঙ্গে জড়িতদের এসব অপকর্মের জন্য ধিক্কার জানাই। সবক'টা খুনের বিচার চাই।
মীর আব্দুল আলীম
  ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অশ্রদ্ধার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে

অর্ধশত বছর ধরে কেবল রাজনীতির খেলা দেখছি আমরা। নোংরা রাজনীতির খেলায় কখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবার কখনো শহীদ জিয়াকে অসম্মান করা হয়েছে। এটা আমরা দেশবাসী কোনোভাবে প্রত্যাশা করি না। দেশের জন্য শতাব্দীর জননেতা মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হকসহ অনেক গুণী মানুষের অবদান রয়েছে। রাজনীতি করতে গিয়ে তাদেরও ভুলে যাই আমরা। আসুন আমরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে প্রকৃত দেশপ্রেমীদের ভালোবাসতে শিখি। আমরা দেশের অর্থ পাচারকারী, লুটেরা, খুনি, সম্পদ বিনষ্টকারী ক্ষমতা লোভীদের প্রত্যাখ্যান করি। যারাই ক্ষমতায় যান তারা প্রায়ত নেতাকে ঊর্ধ্বে তুলতে অন্যকে অসম্মান করেন। এই ধারাবাহিকতা বন্ধ হওয়া দরকার। অশ্রদ্ধার রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে।

দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, অর্থ পাচারকারীদের ঘৃণা জানাই। সেই সঙ্গে অতিসম্প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম নিষ্ঠুরতা, হত্যার সঙ্গে জড়িতদের এসব অপকর্মের জন্য ধিক্কার জানাই। সবক'টা খুনের বিচার চাই।

তবে দেশ স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারি না আমরা। বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করতে পারি না আমরা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। পাশাপাশি শহীদ জিয়াউর রহমানের অবদানও অপরিসীম। শ্রদ্ধা জানাই দেশপ্রেমী শহীদ জিয়াউর রহমানকে।

বাংলাদেশের নাম এলে বঙ্গবন্ধুর নাম সামনে আসবেই। সঙ্গে শহীদ জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক, তাজউদ্দিন আহমেদসহ অনেকের নাম সামনে না আসার কোনো সুযোগ নেই। দেশের জন্য তাদের অবদান অস্বীকার করবার উপায় আছে কি? আমরা বরাবরই দেখছি যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে কখনো বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে, কখনো শহীদ জিয়াউর রহমানকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে। মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নাম তো অনেকটা ভুলিয়েই দেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে বিগত সরকার শহীদ জিয়াউর রহমানকে কতটাই না হেনস্তা করেছে। নেতাকর্মীদের জেলজুলুম, নির্যাতন, গুম, খুনের কথা না হয় বাদই দিলাম। বিএনপি সরকারের সময়ও এসব হয়নি তা একেবারে বলা যাবে না। প্রয়াত এরশাদ সরকারও অপরাজনীতির খেলা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। তবে আমরা লক্ষ্য করছি দিন যত যাচ্ছে ততই রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা বাড়ছে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় তার সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়েছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বেশ কয়েকদিন যা হয়েছে তাও কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। অগণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছিলাম আমরা। যেই লাউ সেই কদুই পেল দেশবাসী। এ দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ হবে না হয়ত। অপরাজনীতি থেকে আমরা স্বাধীনতার পর থেকে আমার বেরিয়ে আসতে পারিনি।

বিগত ১৫-১৬ বছরে কি দেখেছি আমরা। শহীদ জিয়াউর রহমানের নামটি যেন দেশের মানুষ ভুলে যায় তার চেষ্টা চলেছে পদে পদে। নাম পরিবর্তন করে আরেকটা নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। নামকরণ আর পাল্টা নামকরণের রাজনীতি কবে বন্ধ হবে। নাম পরিবর্তনের জন্য বহু টাকা ব্যয় করতে হয় আমাদের। জিয়া আন্তর্জাতিক নাম বদলাতে কত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে হয়ত দেশবাসীর তা জানা নেই। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এই নামটি নিয়ে আমাদের এখন কোনো বিতর্ক করার কোনো সুযোগ নেই। এমনভাবে অনেক না পরিবর্তন হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম এখন বদলে ফেলা হচ্ছে। এরপর আবার অন্য কোনো সরকার এলে নাম পরিবর্তনের খেলা চলবে। এই খেলা বন্ধ হওয়া দরকার।

এ কথা বলতেই হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোনোভাবেই সর্বজনগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নেই। নোংরামি, চরিত্র হনন, পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, পরনিন্দা ইত্যাদির চর্চা চলছে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে একে অন্যকে নিচু করে উপস্থাপনের মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও দিন দিন নিচু হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কিংবা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে তাদের অসম্মান হয় এমন বাচনভঙ্গি বা শব্দচয়ন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কলুষিত করবে। এ ক্ষেত্রে অন্তত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা জেনারেল জিয়াউর রহমান বা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নামটা সম্মানের সঙ্গে বলুন। কি দেখছি আমরা মৃতু্যর এতটা বছর পরেও সম্পূর্ণ হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানকে কটাক্ষ, অসম্মান ও আক্রমণ করে কথা বলি।

বিগত বিএনপির সময়েও দেখেছি বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে ছোট করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও তার ব্যতিক্রম দেখিনি, দেখছিও না। দেশপ্রেমী এসব নেতা যারা দেশ স্বাধীন করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন তাদের অসম্মান করা, রাজনৈতিকভাবে ছোট করা মোটেও ভালো কাজ নয়। আমাদের সবার মাঝে প্রকৃত দেশপ্রেম এবং শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু, শহীদ জিয়াউর রহমানসহ সব নেতাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখে আমাদের সম্মান দেওয়া উচিত। কারা কোন দল এ ট্রেডিশনটা চালু করবে? বঙ্গবন্ধু এবং শহীদ জিয়ার দেশের জন্য তাদের অবদান খাটো করে দেখার সুযোগ আছে। এখনকার মতো লুটপাট, অর্থ পাচার, সিন্ডিকেট এসব বিষয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কিংবা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাকালীন সময়ে এতটা অধঃপতন দেখেনি দেশবাসী। বঙ্গবন্ধু দেশকে ভালোবেসে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। শহীদ জিয়াউর রহমানের সময়ও দেখেছি কৃষি ক্ষেত্র থেকে ধরে শিল্প উন্নয়নে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে সর্বোচ্চভাবে। তাদের সততার ব্যাপারে প্রশ্ন ওঠে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর কিছু ভাষণে ঘুষখোর, লুটেরাদের কথা জোরেশোরে বলেছেন। যার প্রতিফলন বিগত সরকারে দেখেছি। শহীদ জিয়াউর রহমানও দেশকে এগিয়ে নিয়ে মাঠে ময়দানে থেকেছেন। খাল খনন করেছেন, কৃষি বিপস্নব ঘটিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হয়েও তার সাধারণ জীবনযাপনের কথা দেশের মানুষ জানত। তার মৃতু্যর পরে তা আরও স্পষ্ট হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় চরম দুর্নীতি, ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যার রাজনীতি দেখিনি আমরা। এরপর থেকেই দেশে শুরু হয় যত অপকর্ম। গুম, খুন, ক্রসফায়ারের রাজনীতি। পরের সময়গুলো খুব একটা ভালো যায়নি বলা যায়। এসব নেতারাই আজ সময়ে অসময়ে অসম্মানিত হচ্ছে। আসুন, আমরা জাতীয় নেতাদের অসম্মান করা থেকে বিরত থাকি। বিগত সরকারের সময় জুলুম অত্যাচার নির্যাতন হয়েছে এটা অস্বীকার করবার নয়। সর্বশেষ ছাত্রদের ওপরে যে নির্যাতন হয়েছে, নিষ্ঠুরের মতো গুলি হয়েছে সেটা দেশের মানুষ মন থেকে মেনে নেয়নি। যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন তাদের হৃদয়ও কেঁপেছে বারবার। বিএনপির সময় কি হয়েছে কিম্বা আওয়ামী লীগের সময়, জাতীয় পার্টির সময় কি হয়েছে সেটা নিয়ে আমি বিতর্কে যেতে চাই না। রাজনীতির কথা বললে, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কথা বললে নানা বিতর্ক হতে পারে তাই বেশি কিছু বলতে চাই না। ভালো সময় কখনোই পার করিনি আমরা। সামনে কি হবে তাও জানি না। তবে জাতীয় নেতাদের সম্মান আমরা দেব সেটা যেন করতে পারি আমরা। অন্য কাউকে হেয় করার মধ্য দিয়ে নিজের নিচু রুচিবোধ ও নিচু মন-মানসিকতা প্রকাশ পায়। প্রতিপক্ষও তদ্রম্নপ উত্তর দেওয়ার সুযোগ পায় এবং সর্বোপরি এর মধ্য দিয়ে উভয়ই সবার কাছে হাসির পাত্র হয়। দুঃখের বিষয়, এ দেশে বিভিন্ন দলের রাজনীতি করেন এমন অনেক লোক আছে যারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক বা বঙ্গবন্ধু বলা তো দূরের থাক তাকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করতেও লজ্জাবোধ করেন না। বঙ্গবন্ধুকে সারা দুনিয়া সম্মান করে। সেখানে তার প্রতিকৃতিতে আমরা মূত্র ত্যাগ করছি। ছিঃ ছিঃ! তার কন্যা কোনো ভুল করলে সে দায় বঙ্গবন্ধুর ওপর কেন বর্তাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলি, আর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলি কিংবা মাওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক, তাজ উদ্দিন আহমেদসহ যাদের কথাই বলি না কেন তারা ছিলেন দেশপ্রেমী, সৎ, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী, পরোপকারী, মানবদরদি, সহমর্মী, নির্লোভ-নিরহংকার, সাহসী মানুষ। তারা ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই একজন আদর্শ মানুষ, আদর্শ নেতা। বাংলার শোষিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তিই ছিল তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নে তারা আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বাংলার মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিচে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ নেই। তার প্রতিকৃতিতে মূত্র ত্যাগ করা অর্থ জাতির গায়ে মূত্রত্যাগের সমান। বঙ্গবন্ধু মাত্র ৫৪ বছর বেঁচেছিলেন। শৈশব ও কৈশোর বাদ দিলে ৩০ বছরের মতো তার রাজনৈতিক জীবন। এর মধ্যে ১৩ বছরই কাটিয়েছেন জেলখানায়। কতটা ত্যাগ দেশের জন্য ছিল বঙ্গবন্ধুর।

১৯৭২-এর ৪ নভেম্বর গণপরিষদের ভাষণে বঙ্গবন্ধু 'গণতন্ত্র' ও 'সমাজতন্ত্র' সম্পর্কেও নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই ভাষণে তিনি গণতন্ত্র সম্পর্কে বলেছেন: 'আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সেই গণতন্ত্র- যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে। মানুষের একটা ধারণা আছে এবং আগেও আমরা দেখেছি যে গণতন্ত্র যেসব দেশে চলেছে, দেখা যায় সেসব দেশে গণতন্ত্র পুঁজিপতিদের প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য কাজ করে এবং সেখানে শোষকদের রক্ষা করার জন্যই গণতন্ত্রের ব্যবহার প্রয়োজন হয়। সেই গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই, শোষিতের গণতন্ত্র এবং সেই শোষিতের গণতন্ত্রের অর্থ হলো আমার দেশের যে গণতন্ত্রের বিধিলিপি আছে, তাতে সেই সব বন্দোবস্ত করা হয়েছে, যাতে এ দেশের দুঃখী মানুষ রক্ষা পায়। শৈশবেই তিনি সাধারণ মানুষের অধিকার সম্পর্কে ছিলেন সচেতন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবি-অধিকার আদায়ে রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। তাই স্কুলজীবনেই তিনি রাজনীতি শুরু করেন এবং সান্নিধ্য লাভ করেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো মহান নেতাদের এবং দাবি জানান ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার। ১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত প্রতিদিনই ছিল তার কঠিন সংগ্রামের জীবন।

'আমি মেজর জিয়া বলছি' ঘোষণার মধ্য দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও আশান্বিত করে তুলেছিলেন জিয়াউর রহমান। একইসঙ্গে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের নেতৃত্বও দিয়েছেন। অবশেষে দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছিলাম স্বাধীনতা। পেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ। শহীদ জিয়ার প্রবর্তিত কালজ্বয়ী দর্শন 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ' ও তার অবিনাশী আদর্শ এ দেশের মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সুরক্ষার এবং উৎপাদন ও অগ্রগতি তরান্বিত করার।

জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি সব সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে তার অনবদ্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতেই হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়ার সেই ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষণায় দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ মরণপণ যুদ্ধে শামিল হয়।

জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অবস্থা থেকে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করেন। আধুনিক ও স্বনির্ভর দেশ গঠনের পদক্ষেপ নেন। এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে যতই চেষ্টা করুক না কেন, তিনি বিস্মৃত হননি। বরং দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে আছেন, থাকবেন।

ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে অভু্যদয় ঘটেছে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের। ত্রিশ লাখ মানুষের জীবনদানসহ এ দেশের স্বাধীনতার জন্য আড়াই লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন, পনেরো লাখেরও বেশি মানুষ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের দোসরদের হাতে নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য বিশ্বের অন্য কোনো দেশের মানুষ এত জীবনদান, নির্যাতন ও ত্যাগ স্বীকার করেননি। আর আমাদের এ অর্জনে বঙ্গবন্ধু কিংবা শহীদ জিয়া, দেশের আমজনতা, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা আমরা কিছুতেই ভুলতে পারি না। অশ্রদ্ধা অসম্মান করাত পরের কথা। সব শেষে যারা রাজনীতি করেন তাদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ- আসুন আমরা আমাদের জাতীয় নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। অশ্রদ্ধার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসি।

মীর আব্দুল আলীম :সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব, কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে