একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। সঙ্গত কারণেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যথাযথ গতি ফিরিয়ে আনতে হবে এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এমন আলোচনা উঠে এসেছে যে, নতুন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। কেননা, দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কাল অতিক্রম করে আসছে বাংলাদেশ। গত জুনে সমাপ্ত বছরের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় পৌনে ১০ শতাংশ। এছাড়া জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। দেশের ইতিহাসে এভাবে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি আর দেখা যায়নি। অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্রদের বাজার মনিটরিংয়ের কারণে শাকসবজিসহ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে বলেও জানা যায়। অন্যদিকে, এটাও আলোচনায় আসছে যে, অন্তর্র্বর্তী সরকার যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারে তবে দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অন্যদিকে, এটাও লক্ষণীয় যে, কোভিড-১৯, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ক্রমাগত যুদ্ধবিগ্রহ ও সামাজিক অস্থিরতার সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়েছে। বেকারত্ব বেড়েছে ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এক হিসাবে দেখা যায়, সাম্প্রতিক অস্থিরতায় সরাসরি আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল লাখো কোটি টাকারও বেশি। এর সঙ্গে আছে পরোক্ষ ক্ষতি। ফলে, এ অবস্থা থেকে দ্রম্নত উত্তরণ দরকার এমন অভিমতও উঠে এসেছে। যা সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অনেক দিন থেকেই দেশের ব্যাংক খাতে অস্থিরতা চলছে। বাংলাদেশে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি জানিয়েছে। গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি বলছে। আত্মসাৎ হওয়া অর্থের পরিমাণ চলতি অর্থবছর মানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ এবং দেশের মোট জিডিপির দুই শতাংশের সমান। ফলে, ব্যাংকিং খাতকে গতিশীল করতে এবং যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধে উদ্যোগ নিতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের উচ্চমূল্যর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা ডলার সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে বলেও জানা যায়। এছাড়া আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হওয়াসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এছাড়া, এ কথাও বলা জরুরি যে, প্রবাসী আয় দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখে। ফলে, প্রবাসী আয়ের বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। এই খাতের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। নতুন শ্রমবাজার, দক্ষ শ্রমিকসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে সামনে রেখে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসছে তা আমলে নিতে হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রম্নত করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রপ্তানি, প্রবাসী আয় সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সামনে রেখে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে রেখে তা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে- এমনটি কাম্য।