অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও কর্মপরিকল্পনা দ

সমাজের সৎ, দায়িত্বশীল, নীতিপরায়ণ ও গ্রহণযোগ্য মানুষদের থেকে যাচাই-বাছাই করে ভালো ও আদর্শবান মানুষকে বিশেষ করে স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যানারের আওতায় সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সাব-কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক মনিটরিং কমিটি খুবই জরুরি এবং সর্বোপরি জাতীয় পর্যায়ে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন নিরাপত্তা কাউন্সিলও গঠনের আবশ্যকতা আছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ ট্রমা মুক্ত হবে, জাতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। সর্বোপরি শান্তিময় ও মানবিক বাংলাদেশের পতাকা সমুন্নত রেখে অগ্রগতির নতুন যাত্রাপথ উন্মোচিত হবে- সাধারণ জনগণের এ প্রত্যাশা নতুন সরকারের কাছে।

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্ম
১. সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন গত ৫ জুন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে অসন্তোষের শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয় আন্দোলন। তৎকালীন সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিলেও কৌশলে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফেরত আনার চেষ্টা করছে অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা সরব হন। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণঅভু্যত্থান। সেই অভু্যত্থানে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিভে যায় শত শত প্রাণ। এর বিনিময়ে অবিস্মরণীয় এক জয়ের দেখা পেয়েছে ছাত্র-জনতা। জনবিক্ষোভ দমাতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি শেখ হাসিনার। অবশেষে যবনিকা ঘটল সাড়ে ১৫ বছরের একচ্ছত্র শাসনের। গত সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে তিনি ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে উড়াল দেন। এর আগেই দেশজুড়ে কোটি মানুষ পথে নেমে বিজয় উলস্নাসে মাতেন, নেন গণভবনের দখল। আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ শত শত মানুষ গত ২১ দিনে শাসকের বন্দুকের নলের সামনে বুকে পেতে দাঁড়ানোর নজিরবিহীন সাহস দেখান। বিরলতম এ আত্মত্যাগে বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার অভু্যত্থান। উলস্নাসে মাতোয়ারা সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, জনজোয়ারে ভেসে গেছে ক্ষমতার দম্ভ। ২. এমন বিজয় বাংলাদেশের মানুষ আগে দেখেনি, এমন পতনও তারা দেখেনি। দাম্ভিকতা, অহমিকা, আমিত্ব, বিরোধী মতের মানুষকে কোনোভাবেই সম্মান, মর্যাদা না দিয়ে অপমান তুচ্ছতাচ্ছিল্য করায় প্রবণতা, চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়ে সর্বনাশা সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেখ হাসিনাকে ভয়ংকর পতন ও মারাত্মক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছেন এটি তিনি উপলব্ধি না করে আরও বেপরোয়া, আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন। তার শেষ দিককার কর্মকান্ড দেশের সব মানুষকে চরমভাবে বিক্ষুব্ধ করে এক কাতারে নিয়ে এসেছিল। তখন শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন স্বৈরাচারী-স্বেচ্ছাচারী শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসান এবং তার বিদায়ের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। যার চূড়ান্ত পরিণতি তার পদত্যাগ এবং দেশে ছেড়ে পলায়ন। সবশেষে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় গ্রহণ। একজন জননেত্রী থেকে ভয়ংকর স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দেশ-বিদেশে নিন্দনীয় হয়েছেন আরও আগেই। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে শেখ হাসিনার সব কৌশল ব্যর্থ করে দিয়েছে। তার নির্দেশে যত বেশি সংখ্যক মানুষ হত্যা করা হয়েছে তত বেশি মানুষ এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। নারীরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্রীরা আরও বেশি এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। তারা বুঝতে পারে তাদের ভাইদের হত্যা ও নিপীড়ন ঠেকাতে হলে শেখ হাসিনার বিদায় ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনার পতনের এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। ছাত্র আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের নতুন এক রাজনৈতিক শক্তি প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ৩. শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের স্বৈরশাসনে বাংলাদেশে মানুষের সব ধরনের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিলেন। তার শাসনের মূল চাবিকাঠি ছিল ভয় দেখানো। এই ভয় দেখানোর কাজটি করা হতো প্রশাসন, আদালত এবং তার দলের পেটোয়া বাহিনীর মাধ্যমে। ফলে বাংলাদেশের বহু মানুষ ভয়ে অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন দেশের মানুষ তার নিপীড়নমূলক শাসন মেনে নিয়েছে। কিন্তু এ দেশের মানুষ কখনোই তার ফ্যাসিস্ট শাসন মেনে নেয়নি তারা ঐক্যবদ্ধ আওয়াজের অপেক্ষায় ছিলেন। ছাত্ররা মানুষের কথা বলার সেই পরিবেশ তৈরি করে দেয়। বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটিকে শেখ হাসিনা একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের মতো করে পরিচালনার চেষ্টা করেছেন। সাধারণ মানুষ যে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক তা তিনি কখনোই মনে করতেন না। তিনি মনে করতেন, তার পিতা ও তার পরিবার এ দেশের মানুষকে একটি রাষ্ট্র এনে দিয়েছে। ফলে গণভবনে বসে এই দেশ শাসন করার একমাত্র এখতিয়ার হচ্ছে তার পরিবারের। শহর ও গ্রামে, রাজনীতিক ও আমলাদের মধ্যে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী জন্ম নিয়েছিল। তারাই ছিল আইয়ুবের তল্পিবাহক। ১৯৬৮ সালে ঘটা করে উন্নয়ন দশক পালন করেছিল। সাধারণ মানুষের গায়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। 'উন্নয়ন দশক'-এর এক বছরের মাথায় জনগণের সেই পুঞ্জিভূত ক্ষোভের আগুন জ্বলেছিল ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে, যা স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছিল। ৫৫ বছর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। স্বাধীন বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটল আরও করুণভাবে। তিনি হেলিকপ্টারযোগে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। একদা যাদের ভোটাধিকার কেড়েছিলেন, ন্যায়সংগত দাবি অগ্রাহ্য করেছিলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে উপহাস করেছিলেন। ৪. বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম থেকেই এই দাবি জানিয়ে এসেছিলেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। উলেস্নখ্য, হাসিনা জমানায় শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় বাংলাদেশের তৎকালীন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যেই তিনি আইনী প্রক্রিয়ায় সাজামুক্তও হন। গত ০৫ জুলাই সোমবার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছাড়েন হাসিনা। সঙ্গে সঙ্গে পতন হয় আওয়ামী লিগ সরকারের। তার পরেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তার অঙ্গুলিহেলনেই হাসিনার পতন বলে মনে করছেন অনেকে। হাসিনা সরকার পতনের পরে বাংলাদেশে সেনাশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই অনুমান ছিল রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। যদিও সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিলেও মানুষ হয়তো তাতে স্বাগত জানাত। কিন্তু সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সব রাজনৈতিক দলকে সেনাসদরে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যটি এসেছে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কাছ থেকে। তারা জানিয়ে দিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তারা নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন। তিনি এ দায়িত্ব পালন করতে রাজি হয়েছেন। ডক্টর ইউনূস ছিলেন শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার। ডক্টর ইউনূসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের নতুন যাত্রা শুরু হতে পারে। সত্যিকার অর্থে হয়তো তার নেতৃত্বে বিভাজনের রাজনীতির অবসান ঘটে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। যে শ্রম ও কর্মজীবী মানুষ শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের জীবনে কি শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে? ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন যেমন নতুন এক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি বাংলাদেশ রাষ্ট্র ভয়ানক এক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এখন দ্রম্নত সরকারকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের পথে যেতে হবে। ৫. সেনাসমর্থিত সরকার হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হয়তো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাই প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এমন একজনই আদর্শ হবেন, যার কেবল শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রশাসনিক দক্ষতাই থাকবে না, বরং বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতাও থাকবে। প্রধান উপদেষ্টাকে অবশ্যই ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও জটিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নেভিগেট করার জন্য প্রয়োজনীয় ধীশক্তির অধিকারী হতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা ও বিদেশি সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ হবে। তাকে অবশ্যই স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং আইনের শাসনের জন্য প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ হতে হবে, যার ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। ৬. বর্তমান নিবন্ধ শেষ করার আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বের রূপরেখা নিয়ে কিছু আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু একটি তদন্ত কমিটি এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করা, যেন গণঅভু্যত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা যায়। আইনের শাসন ও জবাবদিহির প্রতি বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করার জন্য এই পদক্ষেপ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় এবং গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কারণে যেসব পরিবার প্রিয়জন হারিয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই উলেস্নখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে। নিপীড়ন ও ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে করা বানোয়াট সব মিথ্যা মামলা খারিজ করাও জরুরি। এর ফলে নিরপরাধ ছাত্র ও জনসাধারণের ওপর থেকে বোঝা লাঘব হবে। ৭. আমরা মনে করি, গত ১০ বছরে যে ফ্যাসিবাদী শাসন কাঠামো বাংলাদেশে জারি ছিল, তা মূলত সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র অথবা সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদ। ফলে বিদ্যমান সংবিধানের আমূল পরিবর্তন ছাড়া একটি উদার গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মাণ করা অসম্ভব। সে লক্ষ্যে সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সাংবিধানিক পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। এই পরিষদকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য সংবিধান সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। মূল সংস্কারের মধ্যে ক্ষমতার বিষম বণ্টন রোধ করতে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই মেয়াদে সীমিত করে এবং সংসদ সদস্যদের তাদের দলের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে সংসদে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা নিশ্চিত করে এমন ধারা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আবার সংবিধানে এমন কোনো ধারা প্রবর্তন করা যায় কিনা, যা রাজনৈতিক দলগুলোকে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় বাধ্য করবে, সে বিষয়টিও সাংবিধানিক পরিষদকে খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ যে দল নিজের মধ্যেই গণতন্ত্রের চর্চা করে না, তা স্বভাবতই দেশের সামগ্রিক গণতন্ত্রচর্চাকে বাধাগ্রস্ত করবে। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ডক্টর ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের এ দুর্যোগময় পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হবে। আমাদের বিশ্বাস তার যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বে জাতি ট্রমা মুক্ত হবে। তবে আশু মুক্তির জন্য এবং সম্ভাব্য সমস্যার সমাধান হিসেবে যে সমস্ত সেক্টরে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে হবে তা নিম্নরূপ : প্রথমেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি খাতে অগ্রাধিকার প্রদানপূর্বক তার পরিকাঠামোগত সংস্কারেও মনোযোগ দিতে হবে। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, এক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্ত প্রকল্প বা কমিটিকে ভেঙে তার যৌক্তিক সংস্কার ও পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন জরুরি সেবা খাত; যেমন- ডাক, তথ্যপ্রযুক্তি, গ্যাস, বিদু্যৎ, পানি- এ সমস্ত খাতে এ যাবৎকালের সিন্ডিকেটেড দুর্নীতির মূল উচ্ছেদ করতে হবে। অধিকন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণসহ খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অধিকন্তুত্ম গ্রামীণ উন্নয়ন ও শান্তি রক্ষায় স্থানীয় সরকার পর্যায়ে তথা ইউনিয়ন ও উপজেলা ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করতে হবে। সমাজের সৎ, দায়িত্বশীল, নীতিপরায়ণ ও গ্রহণযোগ্য মানুষদের থেকে যাচাই-বাছাই করে ভালো ও আদর্শবান মানুষকে বিশেষ করে স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যানারের আওতায় সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সাব-কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক মনিটরিং কমিটি খুবই জরুরি এবং সর্বোপরি জাতীয় পর্যায়ে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন নিরাপত্তা কাউন্সিলও গঠনের আবশ্যকতা আছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ ট্রমা মুক্ত হবে, জাতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। সর্বোপরি শান্তিময় ও মানবিক বাংলাদেশের পতাকা সমুন্নত রেখে অগ্রগতির নতুন যাত্রাপথ উন্মোচিত হবে- সাধারণ জনগণের এ প্রত্যাশা নতুন সরকারের কাছে। ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ :সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক