নতুন গ্যাসকূপের সন্ধান উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
নোয়াখালীতে নতুন গ্যাসকূপের সন্ধান মিলেছে। জেলাটির সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বরনগর ইউনিয়নে খননকৃত বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপের তিনটি স্তরে মিলেছে জ্বালানি গ্যাস। দেশের গ্যাস সংকট মোকাবিলায় দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানের চলমান কাজের অংশ হিসেবে এই খননকাজ চালানো হয়। এই কূপ থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপেস্নারেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় গ্যাসকূপ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাপেক্সের ভূ-পদার্থিক বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার। বাপেক্স জানায়, সোনাইমুড়ীর অম্বরনগর ইউনিয়নের ওয়াছেকপুর গ্রামে খননকৃত বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপে মিলেছে গ্যাসের সন্ধান। ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল শুরু হওয়া খননকাজ শেষ হয়ে ডিএসটি টেস্ট শেষে এখন চলছে সর্বনিম্ন স্তরের উৎপাদন টেস্ট। প্রাথমিকভাবে কূপটির তিনটি স্তরে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। উৎপাদন টেস্ট শেষে জানা যাবে এখানে মজুতকৃত মোট গ্যাসের পরিমাণ। কূপটিতে ৩ হাজার ১১৩ মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়। যার মধ্যে ১ হাজার ৯২১ থেকে ১ হাজার ৯৭৩ মিটার পর্যন্ত প্রথম স্তর, ২ হাজার ৫৪৮ মিটার থেকে ২ হাজার ৫৮৫ মিটার পর্যন্ত দ্বিতীয় স্তর এবং ৩ হাজার ৮১ মিটার থেকে ৩ হাজার ১০১ মিটার পর্যন্ত তৃতীয় স্তরে গ্যাস মিলেছে।
বাপেক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি গ্যাস মিলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত টার্গেটকৃত চারটি জোনের মধ্য থেকে তিনটি জোন বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে আশা করছে বাপেক্সের কর্তৃপক্ষ। প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধানে বাপেক্স দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছে। বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপটি গত ২৯ এপ্রিল খননকাজ শুরু হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না থাকায় খনন কাজেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে লোয়ার জোনে গ্যাসের কন্ডিশন দেখে মনে হচ্ছে আরও বেশি কিছু করা সম্ভব। উৎপাদন টেস্ট শেষে মোট গ্যাসের মজুত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আশার কথা হচ্ছে, এক সময় গ্যাসকূপ খননের কাজে বিদেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তারা যুক্ত থাকত। তবে এখন তার পরিবর্তন হয়েছে। এই কূপ খননের সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই বাংলাদেশের। এটাও আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। এর আগে ১৯৭৬ সালে বেগমগঞ্জ-১ ও ১৯৭৮ সালে বেগমগঞ্জ-২ গ্যাসকূপ খনন করা হলেও সেগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালে বেগমগঞ্জ-৩ কূপ খনন করা হয় এবং সেখান থেকে এখনো প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ফেনী-নোয়াখালী-লক্ষ্ণীপুর আঞ্চলিক সঞ্চালন লাইনে সবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এখানে বেগমগঞ্জ-৫ ও বেগমগঞ্জ-৬ কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে বাপেক্স'র।
প্রাকৃতিক গ্যাস বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। এর প্রধান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মিথেন হলেও ইথেন, প্রোপেন ও অন্যান্য উপাদানও এতে বিদ্যমান থাকতে পারে। প্রচলিত অপদ্রব্যসমূহের মধ্যে নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইড অন্তর্ভুক্ত। প্রাকৃতিক গ্যাস স্বয়ংসম্পূর্ণভাবেও থাকতে পারে আবার তেল সহযোগেও বিদ্যমান থাকতে পারে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলভাগেও প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে।
আমাদের অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক গ্যাস অতিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাধারণত গৃহস্থালির রান্নাবান্নার কাজে, কলকারখানায় গ্যাস ব্যবহার করা হয়। দেশে ১৯৫৯ সালে ছাতক গ্যাসক্ষেত্র থেকে সর্বপ্রথম শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। গ্যাস সংকট নিরসনে নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করতে হবে।