খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের মানুষ মূল্যস্ফীতির তীব্র চাপ অনুভব করছে- এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছিল। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। দেশের ইতিহাসে এভাবে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি আর দেখা যায়নি। প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন করেছেন দেশের শিক্ষার্থীরা। এতে করে দেশে এক ধরনের অচল অবস্থা দেখা যায়। ফলে, ঢাকা কার্যত দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিল, বন্ধ ছিল পণ্যের সরবরাহও। এর ফলে, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, যখন দেশের ইতিহাসে রেকর্ড খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি সামনে আসছে, তখন তা এড়ানো যাবে না। বরং পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়- যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে, খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১১ সালের অক্টোবরে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি নিয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় জুলাই মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আগের মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া- বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহণ ও শিক্ষা উপকরণের দামও বেড়েছে। জুলাই মাসে এ খাতে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ, জুন মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে, আগের মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রসঙ্গত, এর আগেও বারবার মূল্যস্ফীতির বিষয়টি সামনে এসেছে। এমন আলোচনা উঠে এসেছিল যে, মূল্যস্ফীতির পেছনে বিশ্ববাজারের প্রভাব আছে যেমন, তেমনি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনারও ত্রম্নটি আছে। কারণ হিসেবে জানা গিয়েছিল, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ হয় না। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সিন্ডিকেট আছে, আছে মধ্যস্বত্বভোগী- এই আলোচনাও নানা সময়েই সামনে এসেছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অভিযোগও উঠেছে- যা আমলে নিতেই হবে। স্মর্তব্য, বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর; ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। কিন্তু এটা এড়ানো যাবে না, আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়েন। আগে থেকেই, প্রায় দুই বছর ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির প্রভাব বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ এবং দেশের ইতিহাসে এভাবে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি আর দেখা যায়নি- এই বিষয়টি কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি, এটি আমলে নেওয়ার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, যদি নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। এর আগে এমনটিও জানা গিয়েছিল যে, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না অনেকের। অন্যদিকে, দুই বছর ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে এটাও এড়ানো যাবে না। সর্বাত্মক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।