রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশারবাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি- এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে- এ ধরনের আশ্বাস বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। উপরন্তু নানা সময়ে আরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশে সৃষ্ট অস্থিরতার সুযোগ নিয়েছেন সীমান্তের কিছু দালাল। এরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের নাফ নদ পাড়ি দিয়ে এ দেশে ঢুকতে সহযোগিতা করেছেন। অন্যদিকে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে ড্রোন হামলা। এ হামলায় অন্তত ২০০ মানুষের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। হতাহত হয়েছেন অনেক মানুষ। নিহতদের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে থাকা শিশুরাও আছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া জরুরি যে, সংঘাতপূর্ণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। আমরা বলতে চাই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করা। এটাও এড়ানো যাবে না, তথ্য মতে, ড্রোন হামলার ঘটনার পর রোববার পর্যন্ত রাখাইন থেকে সহিংসতার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকাডুবির ঘটনায় নাফ নদ ও সমুদ্রসৈকতে শিশুসহ ৪৪ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভেসে এসেছে। স্থানীয় জেলেরা জীবিত উদ্ধার করেছেন এক নারীসহ দুজনকে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, রাখাইনের মংডুতে বাংলাদেশ সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর ড্রোন হামলায় অনেক মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনার পর আবারও দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ রুখতে টেকনাফ সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি। নাফ নদ-স্থলপথ অতিক্রম করে রোহিঙ্গারা যাতে টেকনাফ বা সেন্টমার্টিনে ঢুকতে না পারে, সেজন্য চলছে অতিরিক্ত নজরদারি ও টহল- এমনটিও জানা গেছে। উলেস্নখ্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু দালাল টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের নাফ নদ পাড়ি দিতে সহযোগিতা করেছেন। এটি আমলে নিতে হবে। এছাড়া বিজিবি ও কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা সামান্যই। রোহিঙ্গা বোঝাই অনেক নৌকাকে অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং অনেক রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পরপরই অস্থিরতা তৈরির সুযোগ নেন রোহিঙ্গারা এমনটিও জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কাকে এড়ানো যাবে না একইসঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, মিয়ানমারের রাখাইনে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন রোহিঙ্গারা। তবে তারা যাতে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক পাহারায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে এরপরও নাফ নদের ওপারে অর্ধশতাধিক নৌকায় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, টেকনাফ সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নাফ নদে কড়া নজরদারি ও পাহারা থাকলেও দেশের চলমান পরিস্থিতির সুযোগে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এর আগে বিভিন্ন সময়ে এই আলোচনায় এসেছে যে, মিয়ানমারই রোহিঙ্গা ক্রাইসিস তৈরি করেছে, আর তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি ছিল এর সমাধান করা। ফলে, মিয়ানমার রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে এমনটি কাম্য। মনে রাখা দরকার, প্রায় ১৭ কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চাপ আর কতদিন সইতে হবে- এই প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়, যা আন্তর্জাতিক মহলকেও ভাবতে হবে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের আজীবন রাখতে হবে। এটা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। ফলে, সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নিতে হবে। আবার যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে, তখন তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।