কোথায় যেন একটা লেখা চোখে পড়ল, 'বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেটি বারবার স্বাধীন হয়, এটি ভবিষ্যতে আবারও স্বাধীন হবে'। কথাটিতে প্রথমে কৌতুক খুঁজে পেলাম। কিন্তু একটু পরেই কৌতুকের আড়ালে এক শিরশিরে ভয়াবহতা আঘাত করল মস্তিষ্কের গভীরে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে আবারও এমন কোনো স্বৈরাচারী শাসক বা রাজতন্ত্রীয় পরিবারতান্ত্রিক শাসক বা চামচা-দালালতান্ত্রিক শাসক বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে জেঁকে বসবে এবং এমন মরণকামড় দিয়ে ছাত্র-জনতার রক্ত খাবে, স্বাধীন দেশে ভিনদেশি শক্তির মতো নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালাবে। তখন আবার ছাত্র-জনতাকে তার কবল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য 'এক দফা' স্বাধীনতার ডাক দিতে হবে। রক্তগঙ্গায় ভেসে যাবে সহস্র লাশ। বাংলাদেশে ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। তারপর, কোনো একদিন একটি 'অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ' নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারপর, বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের মানুষ, আবেগী, হুজুগে, ধর্মপ্রবণ, ধর্মান্ধ, মূর্খ, বিশেষ করে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে হাসিনাবিরোধী গণভোটাররা হয়ত গণস্রোতে, গত ১৫ বছর ধরে অভুক্ত ইসলামিক ও পরিবারতান্ত্রিক 'চেতনা'কে নির্বাচিত করবে। তারপর? তারপর কী হবে? তারপর কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, রাষ্ট্রের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত! সমাজের স্তরে স্তরে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে! লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতির অবসান হবে। শিক্ষকদের চামচামির লাল-নীল-সাদা রাজনীতি বন্ধ হবে! শিক্ষা ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলোকে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের গুন্ডামি-সন্ত্রাস অস্ত্রের মহড়ায় দখলদারত্ব কায়েম করে, গরু-ছাগলের খোঁয়াড় বানিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জিম্মি করে রাখা বন্ধ হবে? সব শিক্ষার্থীর জন্য রক্তপাতহীন, অস্ত্রের ঝনঝনানিহীন সার্বিকভাবে চামচামি-দালালিহীন এবং সব দিক দিয়ে উপযুক্ত নিরাপদ শিক্ষাপরিবেশ বাস্তবায়িত হবে? সর্বগ্রাসী লুটপাট দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি বন্ধ হবে? রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক অন্যায় অবিচার সন্ত্রাস স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে? রাজনৈতিক বিবেচনায় টাকা পাচার, ব্যাংক সাবাড়, ব্যাংক দেউলিয়া, ঋণখেলাপি বন্ধ হবে? রাষ্ট্রের এবং জনপ্রশাসনের টপ-টু-বটম, সরকারদলীয় চামচা-দালালের বহুস্তরী অরাজকতা ও নৈরাজ্যের নেটওয়ার্ক, অবাধ অকুতোভয় সাম্রাজ্য (মগের-মুলস্নুক) প্রতিষ্ঠা বন্ধ হবে? দেশের জনতার সর্বস্তরে এবং সরকারি পেশাজীবীদের স্তরে স্তরে 'আদর্শের সৈনিক' তথা দালাল ও গুন্ডাবাহিনী পোষা বন্ধ হবে?! রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের পেশাজীবীদের মধ্যে চামচামি-দালালির দলবাজি সংগঠন কি বন্ধ হবে? দেশের সর্বস্তরে সর্বক্ষেত্রে চামচামি-দালালি, তেলবাজি ও 'ব্যক্তি-পূজা'র সংস্কৃতি কি বন্ধ হবে?! 'মহান নেতা'র নামে 'আদর্শের সৈনিক'দের অসহ্য বিরক্তিকর ঘেউঘেউ বন্ধ হবে? দেশের সব নাগরিক দলমতনির্বিশেষে সব রকমের অবস্থায় নির্ভয়ে কি মুখ খুলতে পারবে, কথা বলতে পারবে? ন্যায্য দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে? আক্ষেপ, বিক্ষোভ প্রকাশ করতে পারবে? চামচামি-দালালিবিহীন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ জনমুখী সংবাদমাধ্যম গণমাধ্যম কি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে? সরকারি নিয়ন্ত্রণে ফ্যাসিবাদী চক্রান্তে পুলিশর্-যাব-ডিজিএফআই এবং বিভিন্ন স্পেশাল বাহিনী ব্যবহার করে 'আয়না ঘর' টাইপে ভিন্নমতের বা অপছন্দের লোককে ধরে নিয়ে গোপনে অজ্ঞাত স্থানে নৃশংসভাবে গুম-খুন-হত্যা কি বন্ধ হবে? রাজনৈতিক বিবেচনায়, ক্ষমতার মদতে ব্যবসায়িক-মজুতদারি সিন্ডিকেট-সিস্টেম, চুরি-ডাকাতির-অভয়ারণ্য বাতিল হয়ে ন্যায় ও আইনি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হবে? অর্থনীতিতে ও বাজার ব্যবস্থায় নৈরাজ্য অস্থিরতা, ভারসাম্যহীনতা বন্ধ হবে? সর্বোপরি, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যত অন্যায়, অনাচার অত্যাচার, অবিচার, নৈরাজ্য-অরাজকতার জগদ্দল চেপে বসে জনগণের উপর; রাষ্ট্র কাঠামো ও সরকার কাঠামোর ভেতরে এবং বাইরে, সারাদেশব্যাপী; সেসব কী বন্ধ হবে? এসব কী হবে? কেউ কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন দেশবাসীকে। তাই যদি না হয়- অজস্র (৫৪২+) ছাত্র-জনতার এই জীবনদান, অজস্র মানুষের রক্ত বিসর্জন ও পঙ্গুত্ববরণ সবই ব্যর্থ, সবই ভুয়া বলে প্রমাণিত হবে। সবই অশুভ শক্তির পাতানো খেলা বলে প্রত্যয়িত হবে। ১৫ বছর ধরে বঞ্চিত-অভুক্ত-উপোসী কাউকে দেশের ক্ষমতায় নির্বাচিত করে, রাজতন্ত্রের আদলে রাজনৈতিক-পরিবারতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদেশের মানুষের উপরের চাওয়াগুলো পূরণ হওয়া সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ নতুন করে কোনো 'পরিবারতন্ত্র' বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে বসতে দিতে পারি না। আমরা বাংলাদেশের সাধারণ জনতা- স্বৈরতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, ব্যক্তি-পূজাতন্ত্র, ইয়েস-স্যারতন্ত্র, চামচামি-দালালিতন্ত্র, 'তেলতন্ত্র', 'আদর্শতন্ত্র'- এসবের বিকল্প চাই। সে কারণেই, 'দ্রম্নত রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর' বাংলাদেশের সংকট ও সমস্যা সমাধান করবে না বরং আরও ঘনীভূত করবে। যারা দ্রম্নত নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার চাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য খুব সাধু নয়, তারা বাংলাদেশের ভালো চায় বলে মনে হয় না। তাছাড়া তথাকথিত 'গণতন্ত্র' কোনো মূর্খ জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য (বিশেষ করে বাংলাদেশ) কল্যাণ ও সুফল বয়ে আনে না বলেই বারবার প্রমাণিত। বাংলাদেশের মানুষ যেন এক শকুনের নখর থেকে আরেক শকুনের নখরে বিদ্ধ হতে না পারে; এক গর্ত থেকে উঠে আরেক গর্তে পড়ে না যায়; এক গণতন্ত্রবেশী-স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত হয়ে আরেক গণতন্ত্রবেশী-স্বৈরাচারের হাতে না পড়ে। বাংলাদেশের মানুষের হাড় জ্বলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবতই এখন সম্পূর্ণ নতুন নেতৃত্ব চায়, ভালো বিকল্প চায়, তারা কোনো সাবেককে ফেরত চায় না, পুরনোকে আঁকড়ে ধরতে চায় না। চোরকে খেদিয়ে নতুন কোনো ডাকাতকে আমন্ত্রণ জানানো ঠিক হবে না। তাছাড়া, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশ-বিরোধীরা কেউ বাংলাদেশের পরিচালনায় আসুক; ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীরা আমার দেশ কব্জায় নিয়ে সবকিছু জিম্মি করুক, সচেতন ছাত্রসমাজ তা কোনো দিন-ই চায় না। বাংলাদেশের সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চামচামি-দালালির লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক-রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে। শিক্ষকরা লাল-নীল-সাদা রাজনীতি আর করতে যেন না পারে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো আর যেন কোনো ক্ষমতাসীন দলীয় ছাত্র সংগঠনের খোঁয়াড়ে পরিণত না হয়, নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত না হয়। তবে প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত ছাত্রসংসদ থাকতে পারবে। তবে, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে 'বৈষম্যবিরোধী-ছাত্র-আন্দোলন' যেন জেগে থাকে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে, জোরালোভাবে সক্রিয় থাকে। দেশের সর্বস্তরের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল চেয়ারে চেয়ারে রাজনৈতিক দলের দালাল ও তেলবাজ আর বসতে দেয়া যাবে না। রাষ্ট্রের সর্বস্তরের পেশাজীবীদের চামচামি-দালালির লেজুড়ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন বন্ধ করতে হবে। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আদালত যেন চামচামি-দালালি বাদ দিয়ে স্বাধীনভাবে জনগণের জন্য কাজ করতে পারে। আদালত বা কোর্ট যেন আর কারো পেটিকোটে পরিণত না হয়। পদ্মা সেতু-মেট্রোরেল-টানেল-স্যাটেলাইট টাইপের 'উন্নয়ন' হওয়া যেমন জরুরি তার চেয়েও অধিক জরুরি বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল হওয়া। যাতে সাধারণ মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। সীমাহীন দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ হলে সেটি অসম্ভব নয় বলে মনে করি। মনে রাখতে হবে, বাজারে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের স্বস্তি দিতে পারাটাই উন্নয়নের বড়ো নির্দেশক। সামর্থ ও সক্ষমতার চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলেই অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। ১০০ টাকা আয় করা ব্যক্তি ১০০০ টাকার ভাবভঙ্গি দেখাতে গেলে তার সংসারে ভারসাম্যহীনতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে এটাই বাস্তব- একটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে যেভাবে অপমান-অবমাননা করা হয়েছে বা হচ্ছে; ৩২ নম্বরে যেভাবে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ হয়েছে, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নে, বীরশ্রেষ্ঠদের স্থাপনায়, শহীদদের স্থাপনায় যেভাবে হামলা ভাঙচুর হয়েছে সেসব সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। বর্তমান জুলাই গণহত্যার শহীদেরা আমাদের বীরসন্তান, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা ফেলে দিতে পারব? ১৯৭১-এর বীর শহীদদের আমরা অবজ্ঞা করতে পারব? রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে যেভাবে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর লুটপাট করা হয়েছে এবং হচ্ছে তা দুঃখজনক। এগুলো তো আবার জনগণের টাকায় ঠিক করতে হবে। সংখ্যালঘু নাগরিকদের মন্দির বাসগৃহ সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে কমবেশি হামলা লুটপাট করা হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এরকম বাংলাদেশের দিকে আমরা যেতে চাই না প্রিয় দেশবাসী। বাংলাদেশ আর কারোর 'পূজা' করতে চায় না দেবতার আসনে বসিয়ে, তবে যার যেটুকু সম্মান সেটুকু দিতে আমরা যেন কার্পণ্য না করি, জাতি হিসেবে অকৃতজ্ঞ না হই। কোনো মহান নেতার 'আদর্শের সৈনিকে' দেশ যেন পুনরায় ভরে না যায়। আমরা যেমন রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা বিতর্ক থেকে বের হতে চাই, তেমনি স্বাধীনতার স্থপতি-ঘোষক বিতর্ক থেকে বের হতে চাই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, কথিত বিভিন্ন 'ইসলামি' দলের বা দীর্ঘ মেয়াদে 'অভুক্ত' বিশেষ চেতনাসমৃদ্ধ দলের লোকদের ভাবভঙ্গি ও গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে, তারা যেন অলরেডি ক্ষমতায় এসে গেছে। অচিন দেশের রাজকুমারকে নিয়ে যেভাবে স্স্নোগান শুরু হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে রাজকুমার 'রাজতান্ত্রিক পরিবারতন্ত্রের' প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই গেছেন। আর, বসে গেলে কী হতে পারে তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। 'ইসলামি' দলের লোকজনের উত্তেজনা-উচ্ছ্বাসে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে রাতারাতি 'ইসলাম কায়েম' হয়ে গেছে। এটা সত্য যে, নতুন কোনো গণতন্ত্রবেশী স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী- লাখ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত এই বাংলার মসনদে জেঁকে বসুক..... তা বাংলার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ আর চায় না। তাই বাংলাদেশে কোনো রাজতান্ত্রিক 'পরিবারতন্ত্র' পুনরায় কায়েম হতে দেয়া যাবে না। তাছাড়া, ধর্মীয় মৌলবাদী ধর্মবাদী সাম্প্রদায়িক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে হবে এ দেশের ছাত্রসমাজ ও সর্বস্তরের জনগণকে। দীর্ঘমেয়াদে উপোস থাকা কোনো খাদককে যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসানো বন্ধ করতে হবে। তা না পারলে সেটা হবে গোটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু, জাগরিত ছাত্রসমাজ তা চাইবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং জুলাই ২৪-এর নতুন স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ একটি স্বৈরাচারবিরোধী, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। বাংলাদেশটা- বাঙালি-অবাঙালি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী-বৃহৎ নৃ-গোষ্ঠী, ধনী-দরিদ্র, শ্রমিক-চাকরিজীবী, গৃহী-সন্ন্যাসী, ছোট-বড়, খাটো-লম্বা, সুন্দর-কুৎসিত, কালো-সাদা; হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি, নাসারা, জৈন, শিখ, মুচি, মেথর, চামার, চন্ডাল; পৌত্তলিক-নিরাকারবাদী, ধার্মিক-অধার্মিক, নিরীশ্বরবাদী-বহুঈশ্বরবাদী, আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে.... যেন সবার হয়। তাই যদি করা সম্ভব না হয়, তাহলে বাংলাদেশের জুলাই-গণহত্যার অজস্র লাশ ও অজস্র আহত-পঙ্গু মানুষের প্রতি চরম অবমাননা করা হবে। হতাশায় নিমজ্জিত হবে স্বৈরাচারবিরোধী, ফ্যাসিবাদবিরোধী, বৈষম্যবিরোধী, নিপীড়নবিরোধী, দাসত্ববিরোধী, মুক্তিকামী এই অসহায় জাতি। শিক্ষার্থী ও খেটে খাওয়া সাধারণ জনতার এত লাশ, এত রক্তপাত, এত ত্যাগ সব অর্থহীন হয়ে যাবে, বিফলে যাবে। বাংলাদেশের গতি আর যাতে বিপথে না যায়, সে ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব সমন্বয়ক ও সব ছাত্রছাত্রী এবং সর্বোপরি সাধারণ জনতাকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং দেশ সংস্কারের আন্দোলন ও অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের প্রতি দাবি থাকবে- রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগসহ সার্বিক রাজনীতি এবং সার্বিকভাবে গোটা দেশটার আমূল সংস্কার করা হয়, শাসন ব্যবস্থার গোটা সিস্টেমের পরিবর্তন করা হয়, সব জঞ্জাল যাতে সাফ করা হয়; তাতে যতদিন সময় লাগুক বাংলার ছাত্র-জনতা আপনার সঙ্গে আছে। আপনাদের জন্য শুভকামনা। (স্বাধীন দেশে নিজের টাকায় কেনা গুলি বুকে নিয়ে আবু সাঈদেরা মরল ন্যায্য অধিকার চেয়ে, সব হত্যার যেন বিচার হয়, খুনিরা যেন শাস্তি পায়।) মোস্তফা আবু রায়হান : কবি ও সংস্কৃতিকর্মী