কোনো ধরনের সংকট তৈরি হলে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, নগদ টাকার সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তথ্য মতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর সারাদেশে নিরাপত্তার অভাবে বেশিরভাগ ব্যাংকের এটিএম বুথ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, কিছু ব্যাংকের বুথ খোলা থাকলেও তাতে টাকা নেই। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর সব শাখা খোলেনি। নগদ এক লাখ টাকার বেশি তোলার অনুমতিও ছিল না। এরপর শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে নগদ টাকার তীব্র সংকটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ- আর এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়েই এই সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সচল করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেশিরভাগ এটিএমে অর্থ সরবরাহের কাজটি করা হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের এ সেবা বন্ধ রয়েছে। আর এ কারণে বেশিরভাগ এটিএমে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি সাধারণ মানুষ। বুথে টাকা না থাকায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে বলে যখন জানা যাচ্ছে, তখন এটা এড়ানোর সুযোগ নেই।
লক্ষণীয় যে, ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যতটা না টাকার সংকট তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তার শঙ্কায় ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে টাকা পরিবহণের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না অনেক ব্যাংক ও এটিএমে অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, এমনটিও জানা যাচ্ছে, ব্যাংকের বুথ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে কয়েকদিন ধরে সংকটে পড়েছেন। আবার অনেক এটিএম বুথ সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মীরা বুথের শাটার নামিয়ে পাহারা দিচ্ছে। মূলত নিরাপত্তাহীনতার কারণে এসব বুথ বন্ধ বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ফলে, এই বিষয়গুলোকে আমলে নেওয়া এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার; এর পরিপ্রেক্ষিতে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।
উলেস্নখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত মে মাস শেষে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট এটিএমের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪২৮। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪০৯টি আর গ্রামাঞ্চলে ৪ হাজার ১৯টি। এটিএম ছাড়া সিআরএমের (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) মাধ্যমেও টাকা উত্তোলন করা যায়। এটাও জানা যাচ্ছে যে, দেশের বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক এখন এটিএমের বদলে সিআরএমের প্রতি ঝুঁকছে। সিআরএমে টাকার উত্তোলনের পাশাপাশি নগদ জমারও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে সিআরএমের সংখ্যা বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে সিআরএমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৫০। এসব সিআরএমের সিংহভাগই শহরাঞ্চলে- যা ৩ হাজার ৯৮৫টি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নগদ টাকার সংকট সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা এড়ানোর সুযোগ নেই। পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। যত দ্রম্নত সম্ভব সৃষ্ট অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে। নিরাপত্তা ঝুঁকি আমলে নিয়ে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। নগদ টাকার সংকটে সাধারণ মানুষ- এটি আমলে নিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব নগদ টাকার সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।