পাঠক মত
খোলা চিঠি প্রিয় মাননীয়
প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
মো. রজব আলী
আমরা আজ বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গর্বিত ও আনন্দিত। বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীর মানুষ যাকে সম্মান করে, তিনি আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান।
আমরা দেখেছি আপনি কীভাবে দরিদ্রকে পথ দেখাতে পারেন, বাস্তহীনকে নতুন বাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখাতে পারেন, কীভাবে গ্রাম্য রক্তচোষা মহাজনদের দৌরাত্ম্য থেকে গরিব কৃষকের ভিটেমাটি রক্ষা করতে পারেন।
আপনি দেখিয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে গ্রামের গৃহবধূদের শক্তিশালী করতে পারেন।
ব্যাংক যেখানে ঋণ দেওয়ার পূর্বে জামানত নেয়, সেখানে আপনি জামানত ছাড়া গরিবদের ঋণ দিয়ে সাবলম্বী করার পথ দেখান, ব্যাংক যেখানে ঋণ দেয় বিত্তবানদের সেখানে আপনি ঋণ দিয়েছেন বৃত্তহীনদের, ব্যাংক যেখানে ঋণ দেয় পুরুষদের সেখানে আপনি ঋণ দিয়েছেন নারীদের। আপনার যুগান্তকারী উদ্ভাবনী কর্মসূচি ক্ষুদ্র ঋণে আজ ঘরে ঘরে সাফল্য অর্জন করেছে। যারা ভাড়ায় রিকশা চালাতো এখন তাদের নিজের হয়েছে, যারা নিজের রিকশা ছিল, তাদের অটো হয়েছে, অনেক অটো চালকের সিএনজি হয়েছে, যাদের খড়ের ঘর ছিল, তাদের টিনের হয়েছে, যাদের টিনের ছিল তাদের ইটের হয়েছে, আজ ঘরে ঘরে ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে, এখন আর মেয়ের বিয়ের জন্য গরিব কৃষকের জমি বিক্রি করতে হয় না। সবাই ঘরে ঘরে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছে।
প্রিয় মহোদয়
দেশের এক ক্লান্তিকালে আপনি দেশের হাল ধরায় দেশের মানুষ আবার আশায় বুক বেঁধেছে, আপনি জানেন আপনাকেসহ সদ্য বিগত সরকার দেশের মানুষের ওপর কীভাবে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে, এই বয়সে যখন আপনি একটি একটি করে সিঁড়ি পেরিয়ে ৬তলা কোটে উঠতেন তখন দেশের মানুষ ঘরে বসে চোখের অশ্রম্ন মুছতো, সম্মানীদের এভাবে অপমান করা, নির্যাতন করা কেউ মেনে নিতে পারেনি, কিন্তু কি করবে যেখানে কথা বললে রাষ্ট্রের বাহিনী দ্বারা তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করত, গুম করত, ভাগ্য ভালো হলে জেলে গিয়ে জীবন রক্ষা হতো, একটি ভিতিকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল, যা উদ্ধার হলো আমাদের কচি বাচ্চাদের রক্তের বিনিময়ে।
প্রিয় মহোদয়
এমন যুদ্ধের ইতিহাস আমি এই ক্ষুদ্র পড়াশোনায় পড়িনি, যে যুদ্ধ হয়ে গেলে জুলাই মাসের ১৫ তারিখ থেকে ৫ আগস্ট প্রর্যন্ত। একদিকে বুলেট, অন্যদিকে শুধুই খালি বুক। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করছে, কিন্তু কোনো যুক্তিতে পারছি না, মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ছিল, কিন্তু এ যুদ্ধে আমাদের এই কচি ছেলেমেয়েদের হাতে তো কোনো অস্ত্র ছিল না, ছিল মাথায় একটি লাল সবুজের পতাকা, কণ্ঠে স্স্নোগান, খালি একটি বুক আর দু' হাত ফাকা, বুলেটের সামনে খালি বুক পেতে দেওয়া, এই অদম্য সাহসী যোদ্ধা সৈনিক, পৃথিবীর আর কোনো যুদ্ধে দেখা গেছে কি না, তা আমার জানা নাই।
প্রিয় মহোদয়
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছিল, তা ৫৩ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি, এর কারণে বারবার রাজপথে নামতে হয়েছে তার উদাহরণ ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপস্নব, '৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যতটুকু অর্জন ছিল, তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল সদ্য বিগত সরকার। এ কারণে আমাদের সন্তানদের এত ত্যাগ এত রক্ত দিতে হলো।
প্রিয় মহোদয়
এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ নতুন স্বাধীনতা, এ নতুন বাংলাদেশ আর যেন পথ না হারায়, আমাদের এ মাতৃভূমিটি যেন হয় বৈষম্যহীন অবাধ গণতন্ত্রের দেশ, যেখানে থাকবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেশ যেন পরিচালিত হয় মেধা, যোগ্যতা, সততা ও জবাবদিহিতার মধ্যে, সমাজ ও রাষ্ট্র যেন হয় নিরাপদ বসবাসের স্থান। নির্বিঘ্নে যে প্রতিটি নাগরিক তার মত প্রকাশ করতে পারে, লিখতে পারে, তার যে রাষ্ট্রীয় অধিকার তা পূরণ করতে পারে। আর যেন কোনো দানব এসে আমাদের সন্তানদের অর্জিত স্বাধীনতা ধ্বংস করতে না পারে।
গত কয়েকদিনের লুটতরাজ, ভাঙচুর প্রতিপক্ষের ওপর হামলা জাতিকে আবারো সংকিত করেছে, দেশকে মহাসংকটে ফেলেছে, আমাদের সন্তানেরা রক্ত দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তা অঙ্কুরে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না, নিশ্চয় তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
দেশবাসী বিশ্বাস করে, আপনার যোগ্য নেতৃত্বে পরিচালিত এ সরকার জাতির এ প্রত্যাশা পূরণ হবে। মহান আলস্নাহ রাব্বুল আল আমিন আপনাদের সহায় হোন ও সুস্থ্যতা দান করুক। আমিন
মো. রজব আলী
যায়যায়দিন প্রতিনিধি
ফুলবাড়ী, দিনাজপুর