পাটের দরপতনে কৃষক হতাশ
যথাযথ উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বে পাটের রমরমা বাণিজ্য চললেও- যদি দেশে এমন পরিস্থিতি হয় যে, পাট কৃষকের গলার ফাঁস হতে যাচ্ছে; তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, একদিকে বিশ্বে পাটের রমরমা বাণিজ্য চলছে; অন্যদিকে, বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে সরকারি পাটকলগুলো। প্রায় তিন বছর ধরে ২৬টি পাটকল বন্ধ রয়েছে।
তথ্য মতে, পাটকল বন্ধের আগে প্রতি মণ পাট বিক্রি হতো তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। সরকারের প্রায় ১৭০টি পাট ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটের দরপতন চলছে বলে জানা যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে ভালোমানের পাটের দাম নেমে এসেছে দুই হাজার ২শ' টাকায়। আর মাঝারি মানের পাট বিক্রি হচ্ছে ১৫শ' টাকা মণে। এতে পাট চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে পাটের চাহিদা বাড়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে রেকর্ড ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, দেশ-বিদেশে পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। সোনালি আঁশে আবার সোনালি স্বপ্ন দেখা দেয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে প্রায় ৫০ ধরনের পাটের কাপড় রপ্তানি হয়। পাটখড়ি থেকে তৈরি হচ্ছে কম্পিউটার ও ফটোকপির মূল্যবান কালি। গাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পাট। এছাড়াও যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষে বিধ্বস্ত দেশগুলোতে দাতা সংস্থার ত্রাণসামগ্রী ব্যবহারে পাটের দড়ি ও বস্তার চাহিদা বেড়েছে। পাটের সুতা দিয়ে শাড়ি, পাঞ্জাবির কাপড়, টুপি, জিন্স ও গরম কাপড় তৈরি হচ্ছে। বহুমুখী ব্যবহারে বেড়েছে পাটের চাহিদা। বিশ্বে পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক এই তন্তুর বহমুখী ব্যবহার বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাঁধ ও নদী ভাঙনরোধে পাটের বস্তা ব্যবহার হচ্ছে। ফলে পাটের এমন পরিস্থিতিতে পাটের সুদিন ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে এমনটি কাম্য।
এটাও জানা যাচ্ছে যে, পাটের ২২ জাতের সুতা রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৪ দেশে। পাটের আঁশ থেকে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, পর্দার কাপড়, গয়না, অলংকারসহ ২৮৫ ধরনের পণ্য- যা দেশে ও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। পাটভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কার্বন ফ্যাক্টরি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চারকোল রপ্তানি হয় চার হাজার ১৮২ দশমিক ২৭ টন। প্রতি টন চারকোলের মূল্য ছিল ৭শ' ডলার। এ হিসাবে চারকোল থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসে ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৮৯ ডলার বা প্রায় ২৫ কোটি টাকা। একজন পাটপণ্য বিক্রেতা জানিয়েছেন, ১৩৫ ধরনের বহুমুখী পাট পণ্য বিক্রি হচ্ছে দেশে-বিদেশে। পাট দিয়ে নন্দন ও রুচিশীল ফ্যাশনেবল বা সৌন্দর্যমন্ডিত পণ্য, দৈনন্দিন ব্যবহার উপযোগী সামগ্রী, নানা প্রকারের হ্যান্ডিক্রাফট, হোম টেক্সটাইল পার্টেক্স বোর্ড ইত্যাদি ছাড়াও বাংলাদেশের পাট এখন পশ্চিমা বিশ্বে গাড়ি নির্মাণ, পেপার অ্যান্ড পাম্প, ইনসু্যলেশন শিল্পে, জিওটেক্সটাইল হেলথ কেয়ার, ফুটওয়্যার, উড়োজাহাজ, কম্পিউটারের বডি তৈরি, ইলেকট্রনিক্স, মেরিন ও স্পোর্টস শিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বে বাংলার পাটের এখন রমরমা বাণিজ্য চলছে। অথচ দেশের পাটকলগুলো বন্ধ। ফলে পাটকল বন্ধ এটা যেমন আলোচনায় আসছে তেমনি প্রায় ১৭০টি পাট ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটের দরপতন চলছে- এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই আমরা মনে করি।
সর্বোপরি বলতে চাই, যখন এটা সামনে আসছে যে, কয়েক বছর রমরমা ব্যবসার পর এবার পাটের বাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। সারাদেশে পাটের ভরা মৌসুম চলছে। জুলাই থেকে আগস্ট মাসে সরকারি পাট ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ থাকায় পাটের দাম কমছে- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ঘাম ঝরিয়ে পাট উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পাট চাষিরা হতাশ- এটা এড়ানো যাবে না। বাজারে মিলছে না ন্যায্যমূল্য, আবার হাটে নেই পাটের ক্রেতা এটাও সামনে আসছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।